ডিফেন্ডার
  2020-09-02 09:59:12  cri

তেসরা সেপ্টেম্বর এই দিনটি চীনা জাতির জাপানি আগ্রাসনবিরোধী প্রতিরোধযুদ্ধ জয়ের দিবস এবং বিশ্বের ফ্যাসিবাদ-বিরোধী যুদ্ধের বিজয় দিবস। বিশেষ এই দিনে আমরা অবশ্যই বিশেষ একটি চলচ্চিত্রের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো; আর এ চলচ্চিত্রের নাম হলো ' ডিফেন্ডার'।

চলচ্চিত্রটি ইতিহাসের সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি হয়েছে।

১৯৩৭ সালের অগাস্ট মাসে সোংহু যুদ্ধের ঘটনা ঘটে। তখন মাত্র ২৮ বছর বয়সী ইয়াও চি ছিংয়ের নেতৃত্বে ৬শ' জন সেনা শাংহাই শহরের পাওশান জেলা প্রতিহত করে। মাত্র ৬শ সেনা জাপানি বাহিনীর আড়াই হাজার সেনা, ট্যাঙ্ক, বিমান ও নৌযানের সমন্বয়ে চালানো আক্রমণ প্রতিহত করেন। ইয়াও চি ছিংয়ের নেতৃত্বে প্রথম যুদ্ধে জাপানি বাহিনীর প্রায় দুই শতাধিক সেনা নিহত হয়। পাওশান জেলা রক্ষার ৭ম দিনে ইয়াও চি ছিং তার দুর্দান্ত সামরিক কমান্ডের ক্ষমতা এবং কৌশলগত বুদ্ধি দিয়ে পরিস্থিতি যাচাই করে নানা কৌশল ব্যবহার করে জাপানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেন। ৭ সেপ্টেম্বর ভোরে শক্তিবৃদ্ধির সাহায্যে জাপানি বাহিনী শহরে প্রবেশ করে। ইয়াও চি ছিংয়ের নেতৃত্বে মাত্র ২০ জনেরও বেশি সৈন্য খাদ্য গোলাবারুদ প্রায় শেষ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে 'পাওশান জেলার সঙ্গে বেঁচে থাকা এবং মারা যাওয়ার' চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে জাপানি বাহিনীর বিরুদ্ধে কয়েক ঘন্টাব্যাপী লড়াই চালিয়ে যান। অবশেষে গোটা বাহিনীর সেনারা দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেন।

চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্র ইয়াও চি ছিং ছাড়া, আরো অনেকে আছেন, তাদের বাবা মা আছে, স্ত্রী আছে, সন্তানও আছে। তাদের ভয় আছে, বেঁচে থাকার ইচ্ছা আছে। তারা এত তরুণ এবং তাদের বেঁচে থাকার ইচ্ছা ও আকুতি আছে। তবে তারা জাপানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে মৃত্যুবরণের সিদ্ধান্ত বেছে নেন। 'শত্রুর ভয়ে পশ্চাদপসরণ না-করা এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরে না-যাওয়া'--- এটাই হলো সেনাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

৭ দিন ও রাত, আমাদের কাছে খুব সাধারণ এক সপ্তাহ। তবে চলচ্চিত্রে প্রতিটি দিন হলো জীবন ও মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধের দিন। চলচ্চিত্রে মোট ৭ দিনের গল্প তুলে ধরা হয়। এক দিন শেষ হলে মৃত্যু তাদের আরও কাছে চলে আসে। বেদনা, ক্ষোভ ও ঘৃণা- এ ৭ দিন ধরে শুধু বাড়তে থাকে। প্রতিদিন বাহিনীর কোনো-না-কোনো সেনা মারা যায়। চলচ্চিত্রে যুদ্ধের নিষ্ঠুরতা এবং সন্ত্রাস পুরোপুরিভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

সোংহু যুদ্ধে, জাপানি বাহিনীর সরঞ্জাম অনেক উন্নত ছিল এবং তাদের সংখ্যাও ইয়াং চি ছিংয়ের বাহিনীর তুলনায় কয়েক গুণ বেশি ছিল। শক্তির ক্ষেত্রে বিশাল বৈষম্য থাকার পরিস্থিতিতে ইয়াও চি ছিং কীভাবে ৬শ সেনার নেতৃত্ব দিয়ে জাপানি বাহিনীর বিরুদ্ধে ৭ দিন ধরে লড়াই করেছে?

প্রথমে যুদ্ধক্ষেত্রে ইয়াও চি ছিংয়ের কৌশলের কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। চলচ্চিত্রে ইয়াও চি ছিং যুদ্ধে লিপ্ত দু'পক্ষের শক্তির বৈষম্যের ভিত্তিতে ভৌগোলিক বিশ্লেষণ করেন। তিনি শহরের বাইরে মোতায়েন সেনা দিয়ে গেরিলা আক্রমণের মাধ্যমে জাপানি বাহিনীর বেশ কয়েকটি হামলা প্রতিরোধ করেন।

' Defenders' নামক চলচ্চিত্রে বিখ্যাত কোনও পরিচালক নেই, নামকরা সব অভিনেতা-অভিনেত্রীও নেই; এই চলচ্চিত্রে বিশাল পুঁজি বিনিয়োগও করা হয় নি। তবে এ চলচ্চিত্রটি ফরাসি 'Dunkirk' চলচ্চিত্রের চীনা সংস্করণ হিসেবে নেটিজেনদের কাছে মর্যাদা পেয়েছে।

যুদ্ধসংক্রান্ত এই থিমকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্র তৈরি করা আসলে সহজ ব্যাপার নয়। একদিকে সঠিক ইতিহাস, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ বজায় রাখতে হয়, অন্যদিকে বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতার দিকেও খেয়াল রাখতে হয়। আরো বেশি তরুণ দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং প্রশংসনীয় একটি যুদ্ধের থিম কেন্দ্রিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করা বড় একটা চ্যালেঞ্জ।

সত্যিকার ঐতিহাসিক ঘটনার ভিত্তিতে প্রধান চরিত্রের গল্প রিমেক করার মধ্যে নিখুঁত ভারসাম্য বজায় রেখেছে ' Defenders' চলচ্চিত্রটি।

যুদ্ধসংক্রান্ত ভালো একটি চলচ্চিত্র হিসেবে এর সত্যিকার এবং কঠিন দৃশ্য-বিন্যাসের পাশাপাশি এতে থাকে যুদ্ধের পর্যালোচনা এবং ইতিহাসকে সম্মান দেখানোর বাধ্যবাধকতা। চলচ্চিত্রে ইয়াও চি ছিং এবং তার সেনারা সবাই রণাঙ্গনে প্রাণ হারান এবং পাওশান জাপানি বাহিনীর দখল করে নেয়। এই যুদ্ধে ইয়াও চি ছিংয়ের দল ব্যর্থ হলেও এর বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য আছে। ঠিক যেমন 'Dunkirk' চলচ্চিত্রে বলা কথার মতো, 'এক ধরনের বিজয় হলো পশ্চাদপসরণ।' এ ধরনের ব্যর্থতা বা পশ্চাদপসরণ জনগণের কাছে সম্মানযোগ্য।

ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, ১৮ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর চীনা জনগণের জাপানি আগ্রাসন-বিরোধী দীর্ঘ প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়। ইয়াও চি ছিং-এর সেনাদের আপাত পরাজয় যেন বুঝিয়ে দেয় শত্রুদের মোকাবিলায় আরও দীর্ঘমেয়াদী ও কঠোর প্রতিরোধ যুদ্ধ করতে হবে। ল্যান্ডমাইন যুদ্ধ, টানেল যুদ্ধ ছাড়াও, মুখোমুখি যুদ্ধ ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসবের মধ্যে 'সোংহু যুদ্ধ' উল্লেখযোগ্য।

' Defenders' নামে চলচ্চিত্রে তুলে ধরা 'পাওশানকে রক্ষার যুদ্ধ' হলো 'সোংহু যুদ্ধের' সবচে করুণ একটি অংশ।

জাপানি বাহিনী তিন মাসের মধ্যে চীনকে দখল করার লক্ষ্য বাস্তবায়নে শাংহাইয়ের কৌশলগত জায়গা পাওশানের ওপর পাশবিক আগ্রাসন চালায়। ইয়াও চি ছিং-র নেতৃত্বে ৬শ সেনা দৃড়ভাবে পাওশানকে রক্ষা করে এবং অবশেষে তাদের প্রাণ উৎসর্গ করেন। (লিলি/তৌহিদ/শুয়ে)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040