প্রেসিডেন্ট সি সবসময় বলেন, জনগণ সংস্কারকাজে মূল ভুমিকা পালন করে থাকে। তাই সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যও জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনা এবং সংস্কারের সাফল্য জনগণকে উপভোগ করতে দেওয়া। আসলে প্রেসিডেন্ট সি'র চিন্তাভাবনা বরাবরই জনগণকেন্দ্রিক।
চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি, চীনে কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধক কার্যক্রমের জটিল সময়ে, কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কার কমিটির দ্বাদশ অধিবেশন আয়োজন করেন সি। তখন তিনি বারবার উল্লেখ করেন যে, জনগণের স্বাস্থ্য ও জীবনের নিরাপত্তা সুরক্ষা করা হবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। মহামারী পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট সব দুর্বলতা মোকাবিলায় তিনি বিভিন্ন খাতের সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার দিক্-নির্দেশনা দিয়েছেন। গুরুতর মহামারী প্রতিরোধক ব্যবস্থা, জনস্বাস্থ্য জরুরি মোকাবিলা ব্যবস্থাসহ অনেক সংস্কার কার্যক্রম চালু করা হয় এসময়। জনগণের জীবনের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এসব ব্যবস্থা ও সংস্কার কার্যক্রমের।
জনগণ ও জীবনকে গুরুত্ব দেওয়া সি'র চিন্তাভাবনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটা শুধু মহামারী প্রতিরোধক কার্যক্রমের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়, বরং বিভিন্ন খাতের কার্যক্রমের লক্ষ্য।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের ৪০টি সংস্কারসংশ্লিষ্ট অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন প্রেসিডেন্ট সি। বিভিন্ন অধিবেশনের মাধ্যমে সার্বিক ও গভীর সংস্কারের হাজারো নতুন ব্যবস্থা ও বিধি চালু করা হয়।
প্রতিবছরের নববর্ষ উপলক্ষ্যে দেওয়া শুভেচ্ছাবাণীতে চীনের সমাজের বিভিন্ন খাতে অর্জিত সাফল্য, জনগণের সুখী ও নিরাপদ জীবনের অনভূতি বৃদ্ধি নিয়ে মন্তব্য করেন সি। কারণ, তিনি এ সাফল্যে নিজে আনন্দ পান।
২০২০ সালের শুভেচ্ছাবাণীতে সি উল্লেখ করেন যে, বিভিন্ন কর হ্রাসের পরিমাণ ২ ট্রিলিয়ন ইউয়ানেরও বেশি; ব্যক্তিগত আয়কর ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে; জনসাধারণের ওষুধের দাম হ্রাস পেয়েছে; ইন্টারনেটের গতি বেড়েছে ও খরচ কমেছে; আবর্জনার শ্রেণীবিন্যাসের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে সাফল্য এসেছে।
চীনা জনগণের সুখী জীবন এবং চীনা জাতির মহান পুনরুত্থান বাস্তবায়ন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির দায়িত্ব ও মৌলিক লক্ষ্য। সেই জন্য প্রেসিডেন্ট সি বার বার জোর দিয়ে বলেন যে, চীনারা কোন ব্যাপারে আগ্রহী, কী ধরনের জীবন আশা করে, তা হবে সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য।
প্রেসিডেন্ট সি মনে করেন, চীনের উন্নয়ন সাধিত হয়েছে জনগণের ওপর নির্ভর করে। যদি চীনাদের স্বার্থ সংরক্ষিত না হয়, সুষম সামাজিক পরিবেশ গড়ে তোলা না-হয়, তবে সংস্কারের কোনো তাত্পর্য থাকবে না।
প্রতিবারের অধিবেশনে তিনি বার বার জোর দিয়ে বলেন, সার্বিক ও গভীর সংস্কারের প্রক্রিয়ায় জটিল স্বার্থ ও ভারসাম্যহীনতার সমস্যার সম্মুখীন হলে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উচিত ভালভাবে চিন্তা করা। তাদের মনে যেসব প্রশ্ন তখন ওঠা উচিত, সেগুলো হচ্ছে: আসল অবস্থা কী? জনগণ কী চায়? কিভাবে তাদের স্বার্থ রক্ষা করা যাবে? আমাদের সংস্কার কার্যক্রমে জনগণ সন্তুষ্ট কি না?
গত ৭ বছরে সংস্কার কার্যক্রমে স্পষ্টতই কিছু সাফল্য অর্জিত হয়েছে। চীনের বৈদেশিক সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ কার্যক্রম চালুর ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত সভায় সি বলেন, চীনা জনগণের চাহিদা পূরণে চেষ্টা করতে হবে। জনগণকে অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণসহ বিভিন্ন খাতে অর্জিত সাফল্য উপভোগ করতে দিতে হবে। কেবল এভাবে সুখী জীবনের অনুভূতি বৃদ্ধি পাবে এবং জনগণের অভিন্ন সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা স্থানে সংস্কারের সাফল্যের জন্য জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান সি। তিনি বলেন, পাখির আকাশে ওড়া শুধু একটি পালকের ভূমিকায় সম্ভব নয়, ঘোড়াও শুধু এক পায়ে দৌড়াতে পারে না। ১৪০ কোটি চীনা জনগণের ওপর নির্ভর করে সংস্কার সফল হতে পারে।
গত কয়েক বছরে তিনি যুবক, পণ্ডিত, তৃণমূলের প্রতিনিধি, শিল্পপতিসহ বিভিন্ন মহলের ব্যক্তিদের সাথে সেমিনারে বসেছেন; দেশের উন্নয়নে সবার পরামর্শ ও প্রস্তাব শুনেছেন। শহর, গ্রাম, বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা, প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন সি, যাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের চাহিদা ও চাহিদা সম্পর্কে সরাসরি নিজে জানতে পারেন।
সি'র দৃষ্টিতে সংস্কারের কার্যকরিতা উন্নত করতে চাইলে অবশ্যই ব্যাপকভাবে জনগণের মতামত ও পরামর্শ শুনতে হবে। কারণ, জনগণের বুদ্ধি ও শক্তি সংগ্রহ করে সংস্কারকাজ দ্রুত সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
প্রেসিডেন্ট সি'র নেতৃত্বে গত কয়েক বছরে চীনের আর্থিক ও কর ব্যবস্থা, গ্রামাঞ্চলের কৃষিক্ষেত, সরকারি হাসপাতাল এবং শহর ও গ্রামের গৃহস্থালি নিবন্ধকরণ ব্যবস্থা—সবই সংস্কার করা হয়েছে।
২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে অগাস্ট পর্যন্ত চীনের বিভিন্ন এলাকা ১০ বার পরিদর্শন করেন সি। তাঁর নেতৃত্বে চীনের সংস্কার কার্যক্রমে আরও বেশি সাফল্য অর্জিত হতে পারে।
তিনি একবার বলেছিলেন, একজন ক্রীড়াবিদ শুরুতে মাত্র ৫০ কেজি ভার উত্তোলন করতে পারে। তবে নিয়মিত চর্চার পর ২৫০ কেজি পর্যন্ত উত্তোলন করতে পারে। আমাদের যৌথ প্রয়াসে ১৪০ কোটি চীনা মানুষের জন্য সুন্দর চীন দেশ গড়ে তোলা সম্ভব।
সুপ্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা অনুষ্ঠানের সময় শেষ হয়ে এলো। সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারেন বা মিস করেন, আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn,আমাদের যোগাযোগ ইমেল ঠিকানাben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn
তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)