শেনচেনের ইতিহাস হলো চীনের এক যুগের ইতিহাস।
শেনচেন হলো চীনা তরুণ-তরুণীদের স্বপ্ন। ৪০ বছরে অসংখ্য তরুণ-তরুণী শহরটিতে কাজ করে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন।
শেনচেন হলো একটি কিংবদন্তি। প্রথমে এটি ছিল ছোট এক জেলেপল্লী। তারপর এটি আধুনিক শহরে পরিণত হয়েছে। শহরটি বিশ্বের শিল্পায়ন, নগরায়ন ও আধুনিকায়নের কিংবদন্তি।
শেনচেন হলো অসংখ্য মানুষের বাড়ি। ৪০ বছরে শহরটি অসংখ্য পরিশ্রমী লোকদের বাসস্থানে পরিণত হয়েছে।
এর মধ্যে অনেক বিদেশি মানুষও এখানে নিজের স্বপ্ন গড়ে তুলেছেন।
১৩ বছর আগে একজন মার্কিন তরুণ গ্যারি কাজের জন্য শেনচেনে আসেন। তখন তিনি ভাবেন-নি যে, এত বছর শেনচেনে থাকবেন। তিনি ভাবেন-নি যে, শেনচেন তাঁর নিজের বাড়ি হবে।
শেনচেনে আসার পর বুঝতে পারেন- শহরের মানুষ কঠোর পরিশ্রমী। এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন,
'সবাই পরিশ্রম করে। লেখাপড়া ও কাজের জন্য পরিশ্রম করে। আমি অন্য শহরে এত পরিশ্রমী মানুষ দেখি নি। এ বিশেষ চেতনা আমি কখনও দেখি নি।'
আমার মনে হয়, প্রতিদিন আমার উচিত লেখাপড়া করা, নাহলে অন্য মানুষের চেয়ে পিছিয়ে পড়তে হবে।
গ্যারি বলেন, হয়ত এ ধরনের পরিশ্রম চেতনার কারণে আমি শেনচেনকে ভালবাসি। আমি এখানকার জীবন ও পরিবেশ পছন্দ করি।
২০০৮ সালে তাঁর জীবনে প্রেম আসে। তিনি হুনান প্রদেশের মেয়ে সং নিকে বিয়ে করেন। বর্তমানে তাদের দু'টি সন্তান আছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,
'শেনচেনে আমি আমার জীবনসঙ্গীকে খুঁজে পাই। সে সাধারণ শেনচেনের মানুষের মতো পরিশ্রম করতে পারে। তাই আমি তাকে অনেক ভালবাসি।'
গ্যারি বলেন, স্ত্রী সং নি তাঁকে শেনচেন ও চীনের নানা তথ্য জানিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি শহরটিকে আরও ভালবেসেছেন। তিনি বলেন,
'আমি কখনো শহরটি ত্যাগ করতে চাই না।'
গ্যারি সাংবাদিককে বলেন, প্রথমদিকে শেনচেনে বিদেশি মানুষ বেশি ছিল না। সড়কে বিদেশি রেস্তোরাঁ কম ছিল। তখন বেশি উচ্চ ভবন ছিল না। তিনি বলেন, বর্তমান শেনচেনে বিদেশি রেস্তোরাঁ, বিদেশি মানুষ ও উচ্চ ভবন অনেক বেশি।
শেনচেন সবসময় পরিবর্তন হচ্ছে, আরো ভালভাবে পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু শেনচেনে তিনি সবসময় নতুন অনুভব করতে পারেন। কারণ শহরটি অব্যাহতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতি বার যুক্তরাষ্ট্র থেকে শেনচেনে ফিরে আসেন, তিনি শহরের নতুন পরিবর্তন দেখতে পান। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,
আমি শুধু এক সপ্তাহ বাইরে গেছি। ফিরে আসার পর শেনচেনের পরিবর্তন দেখতে পাই।
যখন আমি প্রথমে শেনচেনে আসি, তখন শহরে মাত্র তিনটি সাবওয়ে ছিল। কিন্তু বর্তমান আছে আটটি লাইন।
গ্যারি বলেন, আমার বয়স হয়েছে। কিন্তু শেনচেন আরো সুন্দর হয়েছে। তবে একটি জিনিস পরিবর্তন হয় নি। সেটি হলো আমার পরিবার। আমার পরিবারের ভালবাসা কখনো পরিবর্তন হয় না।
তিনি আরো বলেন, শেনচেন এই অভিবাসী শহরটি ধীরে ধীরে আরও বেশি সংখ্যক লোকের বাড়িতে পরিণত হয়েছে।
আগে বসন্ত উত্সবে শেনচেন শান্ত ছিল। বাসে হয়ত আমি একমাত্র যাত্রী ছিলাম। কারণ, সবাই নিজের জন্মস্থানে ফিরে গেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অধিক থেকে অধিকতর মানুষ শেনচেনে পরিবার গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে শেনচেনে বসন্ত উত্সবের সময়ও অনেক প্রাণবন্ত থাকে।
শেনচেন হলো একটি বাড়ি, আমার বাড়ি, সবার বাড়ি। গ্যারি এভাবেই বলেছিলেন।
(ছাই/তৌহিদ)