দশম বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব
  2020-08-27 10:32:12  cri

২২ অগাস্ট দশম বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব উদ্বোধন করা হয়। এই দিন ছিলো চীনের সিনেমা হল খুলে দেওয়ার ৩৪তম দিন। এবারের বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের থিম হলো 'স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও পরিশ্রম'।

বলা যায়, ২০১১ সাল থেকে শুরু হওয়া বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব এখনও বেশ নতুন। এর ভবিষ্যত উজ্জ্বল এবং সম্ভাবনা অসীম। চলচ্চিত্র উত্সবে প্রদর্শিত চলচ্চিত্রের টিকিটের জনপ্রিয়তা, চলচ্চিত্রাঙ্গনে নতুন শক্তি, চুক্তি স্বাক্ষরের পরিমাণ এবং শীর্ষ-ফোরামের উন্নত চিন্তাধারা দশ বছরের মধ্যে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

১০ বছর ধরে বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব নিয়ে আলোচনা চলছে এবং এর 'বন্ধু বলয়' দিন দিন বাড়ছে।

বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব চলচ্চিত্র অনুরাগীদের কার্নিভাল নয়, বরং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের সঙ্গে চীনা চলচ্চিত্রের সংলাপ ও বিনিময়ের প্লাটফর্ম হয়ে উঠেছে। এটি রাজধানী তথা গোটা চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যবসায়িক কার্ডও বটে।

এবারের বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কঠিন সময় শেষ হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং মহামারীর কারণে অনলাইন ও অফলাইনের সমন্বয় বাস্তবায়িত হয়েছে।

চলতি বছর মহামারীর কারণে বিরাট সব চলচ্চিত্র তারকা ও লাল গালিচা সংবর্ধনা না থাকলেও দশম বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান একটু বিশেষ ছিল।

২২ অগাস্ট বেইজিং পৌর সরকার এবং চায়না মিডিয়া গ্রুপের উদ্যোগে বেইজিং পৌর চলচ্চিত্র ব্যুরো, বেইজিং পৌর বেতার ও টিভি ব্যুরো, বেইজিং মিডিয়া নেটওয়ার্ক এবং বেইজিং পৌর হুয়ারৌ জেলার সরকারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে দশম বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব বেইজিং ইয়ানছি হৃদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অ্যান্ড এক্সিবিশন সেন্টারে উদ্বোধন করা হয়।

চায়না মিডিয়া গ্রুপের উপপ্রধান ইয়েন সিও মিং এ চলচ্চিত্র উত্সবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

২০২০ সালে সারা বিশ্বে নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। বৈশ্বিক চলচ্চিত্র শিল্প অভূতপূর্ব পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। চীনে মহামারী প্রতিরোধের ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে সাফল্য অর্জন করে এবং ধীরে ধীরে সারা দেশের সিনেমা হল আবারও খুলে দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব শুরু হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেইজিং পৌর কমিটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও প্রচার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তু ফেই চিন বলেন, চলতি বছর বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, 'এমন একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে চলচ্চিত্র উত্সবের আয়োজন করা ছয় মাসেরও বেশি সময়ের মহামারী প্রতিরোধ কার্যক্রমের বিশাল সাফল্য তুলে ধরে। তা ছাড়া আলোছায়া শিল্পের প্রতি আমাদের অবিরাম সাধনার সফলতা।'

চীনের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক চাং ই মৌ এবং এবারের চলচ্চিত্র উত্সবের দূত উচিংসহ বেশ কয়েকজন এতে ভাষণ দেন।

পরিচালক চাং ই মৌ বলেন, 'মহামারী শেষ হয়নি। এখন চলচ্চিত্র তৈরি করাও সহজ নয়। চলচ্চিত্র জীবনের সব কিছু নয়। তবে চলচ্চিত্র জীবনকে প্রতিফলনের একটি আয়না। আরো বেশি চীনা গল্প আমাদের অব্যাহত বলা প্রয়োজন। আমাদের অব্যাহতভাবে পরিশ্রম করা প্রয়োজন। আমাদের কাজের মাধ্যমে প্রত্যেককে নতুন গল্প বলা উচিত্ এবং কিছু মুগ্ধতা ও শক্তি দেওয়া উচিত্।'

এবারের চলচ্চিত্র উত্সবের দূত উ চিং মনে করেন, চলচ্চিত্রের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার কিছুক্ষণ পর দর্শকদের চিন্তা বিকশিত হয়। কখনও কখনও চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের মনে চাপ বাড়িয়ে তোলেন। তবে চলচ্চিত্র ব্যক্তিরা চাপ পছন্দ করেন।

বোনা ফিল্ম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ইউ তোং বলেন যে, চলচ্চিত্র সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো চীনের চলচ্চিত্র উন্নয়নের দায়িত্ব গ্রহণ করবে।

তিনি বলেন, 'বর্তমানে সিনেমা হলগুলো আবারও আমাদের কাছে আসছে। চীনসহ বিশ্বের চলচ্চিত্র শিল্প পুনরুদ্ধার করা দরকার। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্যাটার্ন, উত্পাদনের পদ্ধতি, পরিচালনার চিন্তাধারাও গভীরভাবে বিন্যাস্ত হয়েছে। এ সময় চীনা চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের চিন্তা-চেতনা জোরদার করা উচিত্।'

চায়না ফিল্ম কর্পোরেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফু রুও ছিং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, বর্তমান ও ভবিষ্যতের কিছু সময়ের মধ্যে চীনের চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের কর্তব্য ও চ্যালেঞ্জ বিশাল। তাই তিনি তিনটি উদ্দেশ্য উত্থাপন করেন। বিষয়ের সৃজনশীলতার ওপর ফোকাস করা, উদ্ভাবন জোরদার করা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যাওয়া।

চলচ্চিত্র বাজারের প্রতি আস্থা পোষণ করে তিনি বলেন, আপাতত সারা চীনে ৮৫০০টিরও বেশি সিনেমা হল খুলেছে। বেশ কয়েকটি নতুন চলচ্চিত্র সম্প্রতি প্রদর্শিত হয়েছে। চলচ্চিত্র বাজার ধাপে ধাপে উষ্ণ হয়ে উঠছে। চীনা চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের যৌথ প্রচেষ্টায় চলচ্চিত্র শিল্পের স্থিতিশীলতা বজায় রেখে ভালো দিকে যাওয়ার অবস্থা পরিবর্তিত হবে না।

চায়না ফিল্ম অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এবং বিখ্যাত অভিনেতা ছেন তাও মিংয়ের চোখে সব চীনা চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের উচ্চাশা একই রকম। যেহেতু তারা চলচ্চিত্র নিয়ে স্বপ্ন ও আশা পোষণ করেন, তাই তারা এই পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, প্রত্যেক চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের এক্ষেত্রে নিজস্ব অবদান রাখা উচিত্। চলচ্চিত্র সম্পর্কে আমাদের আসল উদ্দেশ্য মনে রাখতে হবে। আসল উদ্দেশ্য শুধুমাত্র চলচ্চিত্র ব্যক্তিদেরকে নিয়ে নয়, বরং চীনের মানুষ হিসেবে আমাদের আসল উদ্দেশ্য।

চলচ্চিত্র অঙ্গনের ব্যক্তিরা বলেন, ২০২০ সাল চীনের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য একটি পরীক্ষা। তবে যারা চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত হন, তারা নিঃসন্দেহে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে পারেন বলে তারা বিশ্বাস করেন।

চীনা চলচ্চিত্র ব্যক্তিরা অভূতপূর্ব উন্নয়নের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছেন। তারা আরো সক্রিয়ভাবে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের সঙ্গে বিনিময় ও সহযোগিতা চালাবেন, চীনের চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেবেন এবং নতুন যুগের নেতৃত্ব দেবেন।

বেইজিং শহরের সুবিধা কাজে লাগিয়ে দশম বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব চীনের চলচ্চিত্র এগিয়ে নেওয়ায় সহায়ক হবে। উত্সবের মাধ্যমে বৈশ্বিক চলচ্চিত্রের সঙ্গে চীনের চলচ্চিত্রের যোগাযোগ বাড়বে এবং চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে চীনের গল্প ও বুদ্ধি তুলে ধরা যাবে। চীনের বাজারের পরিবেশ অব্যাহতভাবে সুবিন্যস্ত করার পাশাপাশি আরো সমৃদ্ধ একটি চলচ্চিত্র বাজার সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দশম বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের উদ্বোধনের পাশাপাশি ধারাবাহিক কার্যক্রমও অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এর মধ্যে 'বেইজিং প্রদর্শনী' হলো সবচে জনপ্রিয় একটি অংশ। চলচ্চিত্র অনুরাগীদের কাছে বেইজিংয়ে এসে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র উপভোগ করা হলো প্রতি বছরের প্রত্যাশা।

চলতি বছরের বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের প্রদর্শনীতে অংশ নেবে তিন শতাধিক দেশি বিদেশি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র। নতুন চলচ্চিত্র এবং ক্ল্যাসিকাল চলচ্চিত্র বিভিন্ন ইউনিটে দর্শকদের সামনে হাজির হবে।

বেইজিং আন্তর্জাতিক উত্সবের চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর টিকিট কেনা আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। চলতি বছরে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর টিকিট বিক্রি শুরুর মাত্র ১০ মিনিটে ৭২ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। তবে আরেকটি সুখবর হলো, চলতি বছরের 'বেইজিং প্রদর্শনী' ইউনিটে প্রথমবারের মতো অনলাইন প্রদর্শনী অংশ স্থাপন করা হয়।

বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব শুধু চলচ্চিত্র অনুরাগীদের উত্সবই নয়, বরং চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত দেশি-বিদেশি জনগণের পারস্পরিক বিনিময়ের সুযোগও বটে। এখানে চলচ্চিত্র অঙ্গনের ব্যক্তিরা যার যার সাফল্য বিনিময় করেন এবং চলচ্চিত্রের আরো বেশি সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করন। চলিত বছরের উত্সবের মাস্টারক্লাসে বিভিন্ন চলচ্চিত্র পরিচালক তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন।

ভেনিস ও কান চলচ্চিত্র উত্সবের প্রায় এক শতাব্দীর ইতিহাস আছে। সে তুলনায় বেইজিং চলচ্চিত্র উত্সব শিশু-মাত্র। প্রাণবন্ত এই চলচ্চিত্র উত্সব সারা বিশ্বে সবচে দ্রুত উন্নয়ন এবং সবচে আকর্ষণীয় চলচ্চিত্র উত্সবের মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছে।

১০ বছরের মধ্যে বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব বরাবর 'সম্পদ ভাগাভাগি করা এবং সম্মিলিতভাবে ভবিষ্যত অর্জন করার' লক্ষ্যে অবিচল রয়েছে। 'আন্তর্জাতিক মান, চীনের বৈশিষ্ট্য ও বেইজিং স্টাইল' এ ঐতিহ্য লালন করে ধাপে ধাপে চলচ্চিত্র খাতে বড় রাষ্ট্র থেকে শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার পথে এগিয়েছে।

এখন আমরা একটি পরিসংখ্যানের দিকে নজর দেবো।

বর্তমান বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের প্রায় ৫ হাজার চলচ্চিত্র 'থিয়েন থান পুরস্কার' অর্জনের জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে। প্রায় ৫০জন দেশি-বিদেশি বিখ্যাত চলচ্চিত্র ব্যক্তি 'থিয়েন থান পুরস্কার' পর্যালোচকের দায়িত্ব পালন করছে।

বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের মাধ্যমে স্বাক্ষরিত চুক্তির মূল্য বাড়ছে। দ্বিতীয় উত্সবে ৫২০ কোটি ইউয়ান থেকে বেড়ে ২০১৯ সালের ৩০৯০ কোটি ইউয়ানে পরিণত হয়। দশ বছরের মধ্যে মোট পরিমাণ ১৩০ বিলিয়ন ইউয়ান রেনমিনপি ছাড়িয়ে যায়।

বলা যায়, বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের উন্নয়ন চীনের চলচ্চিত্রের দ্রুত গতিতে উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে বাস্তবায়িত হয়। চীনের চলচ্চিত্র বক্স অফিসে ২০১১ সালের ১৩০০ কোটি ইউয়ান থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে ৬৪২৬.৬ কোটি ইউয়ান হয়েছে। বড় স্ক্রিনের সংখ্যা ২০১১ সালের ৯২৮৬টি থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে হয়েছে ৬৯৭৮৭টি।

মাত্র দশ বছরের মধ্যে চীনের চলচ্চিত্রে এ উন্নতি হয়েছে। যেমন, ডোমেস্টিক চলচ্চিত্রের বিকাশ, নতুন চলচ্চিত্র পরিচালকের আবির্ভাব, চলচ্চিত্র থিমের সমৃদ্ধি এবং দর্শক নান্দনিকতার উন্নয়ন প্রভৃতি। চীনের চলচ্চিত্র শক্তিশালী হওয়ার ফলে বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব বৈশ্বিক চলচ্চিত্রের নতুন শক্তিতে পরিণত হয়েছে।

বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের দশম বার্ষিকীতে সাংগঠনিক কমিটি বিশেষ করে, বেশ কয়েকটি থিম ফোরামের আয়োজন করে। নামকরা চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব, বিশেষজ্ঞ ও পণ্ডিতসহ ৯০জন নামকরা লোক বক্তৃতা দেওয়ার মাধ্যমে চলচ্চিত্র শিল্প উন্নয়নের নতুন প্রবণতা, দিক ও পদ্ধতি অন্বেষণ করবেন।

(লিলি/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040