পালাওয়ানের দর্শনীয় স্থান
মূলত অসংখ্য দ্বীপের দেখা মিলে এই আইল্যান্ডে। আর পুয়ের্তো প্রিন্সেসা ও এল লিডোতেই মূলত অধিকাংশ দেখার জায়গা। এছাড়াও দ্বীপের আসে পাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেশ কয়েকটি টুরিস্ট স্পট। পর্যটকদের সুবিধার্থে বিশেষ বিশেষ কিছু জায়গার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা সহ এখানে তুলে ধরা হল-
পুয়ের্তো প্রিন্সেস সাবটেরানিয়ান ন্যাশনাল পার্ক
পুয়ের্তো প্রিন্সেস সাবটেরানিয়ান ন্যাশনাল পার্ক ফিলিপাইনের একটি সংরক্ষিত এলাকা। প্রিন্সেসার শহর থেকে প্রায় ৮০ কিলো উত্তরে পালাওয়ান দ্বীপের পশ্চিম উপকূলে সেন্ট পল পর্বত মালার রেঞ্জে অবস্থিত এই পার্ক। এখানের আছে বিশ্বের দীর্ঘতম চলাচল যোগ্য ভূগর্ভস্থ নদী। আন্ডার গ্রাউন্ড নদীতে ঘুরে বেড়াতে পারবেন আর গুহার মাঝে হারিয়ে যেতে পারবেন আদিম প্রকৃতির মাঝে। এই পার্কে ট্যুর শুরু হবার আগে পর্যটকদের এখানের ইতিহাস ও টেকনিক্যাল কিছু তথ্য সম্বেলিত একটি অডিও রেকর্ডিং শুনতে দেওয়া হয়। নাকপান বীচ
এল লিডোতে অবস্থিত নাকপান বীচ
ফিলিপাইনের দীর্ঘতম সাদা বালির বীচ। পাহাড়ের উপর থেকে এই বীচের ভিউ মুগ্ধ করার মতো। যদিও এই বীচে যাওয়া একটু কষ্টকর তারপরও এখানে পৌঁছালে সেই কষ্ট নিমিষেই দূর হয়ে যায়। এখানের স্বচ্ছ শান্ত পানিতে সাঁতার কাটলে এক শীতল প্রশান্তিতে মন জুড়িয়ে যাবে।
উগং রক
পাহাড়ি এই পর্যটন এরিয়াতে ৭৫ মিটার উঁচু পাহারে উঠার সাথে সাথে স্কাই ডাইভিংয়ের সুযোগ আছে। এখানে জীপ লাইনের মতো নতুন এক অভিজ্ঞতার সুযোগ হবে। আর এডভেঞ্চারের জন্য এই জায়গা পর্যটকদের কাছে বেশী পছন্দের।
পালাওয়ান বাটারফ্লাই ইকোলোজিকাল গার্ডেন
পুয়ের্তো প্রিন্সেসাতে অবস্থিত পালাওয়ান বাটারফ্লাই ইকোলোজিকাল গার্ডেন এন্ড ট্রাইবাল ভিলেজবাগানে অসংখ্য রঙ্গিন প্রজাপতি নজরে পড়বে। আর স্থানীয় আদিবাসীরা মূলত বাগানের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত। দোতালা ভবনের উপরে পালাওয়ান কলনিয়াল সময়ের আদিবাসীদের দেখা মিলবে। আর এখানে একটি বিশেষ শো হয় যার মাধ্যমে আদিবাসিদের সংস্কৃতি, তাদের ভাষা ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানা যাবে। আর শো শেষে ছবি তোলার ও সুযোগ হবে। ইকোলোজিকাল গার্ডেনের প্রবেশ মূল্য ৫০ পেসো।
পাপাওয়ান ফলস
পোর্ট বার্টন থেকে হাঁটা দূরত্বে পাপাওয়ান ফলস যাওয়া যায়। জঙ্গলের মাঝে ২০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত প্রাকৃতিক এই ঝর্ণা দেখতে অনেকেই এখানে চলে আসে। ঝর্ণার হিম শীতল বাদামি পানিতে সাঁতার কাটা নিঃসন্দেহে পর্যটকদের জন্য আনন্দকর। আবার বার বি কিউ করার জন্য আলাদা দুটি জায়গা আছে যেখানে ছুটির দিনে পরিবার ও বন্ধু বান্ধব নিয়ে অনেকেই বেড়াতে চলে আসে। আর এখানে যাওয়ার পথে মাউন্ট পিও এর চূড়ায় উঠার সুযোগ হবে। এখানের প্রবেশ মূল্য মূলত একটি ডোনেশন হিসেবে দান করা হয় আর তাই নিজের ইচ্ছে মতো ডোনেশন দিয়ে এখানে প্রবেশ করতে হবে।
পালাওয়ান মিউজিয়াম
পালাওয়ানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে পালাওয়ান মিউজিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় ২০,০০০ বছর আগের প্রাচীন নিদর্শনগুলো ছোট্ট এই জাদুঘরে যত্নের সাথে সংরক্ষন করা হয়েছে। আর ২০-২৫ মিনিটের মধ্যেই এই পুরো জাদুঘর ঘুরে দেখতে পারবেন।
পালাওয়ান হেরিটেজ সেন্টার
পালাওয়ানের কোথাও যাওয়ার আগে পালাওয়ান হেরিটেজ সেন্টারে আগে যাওয়া ভালো তাহলে পালাওয়ানের দ্বীপগুলোর সাথে সাথে সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ব্যাপারেও একটি সংক্ষিপ্ত ধারনা পাবেন। এখানে বিভিন্ন পেইন্টিং, ঐতিহাসিক চিত্র শিল্প ও আদিবাসিদের ছোট ছোট কিছু মূর্তি দেখতে পারবেন। তবে একজন ট্যুর গাইডের মাধ্যমে ঘুরলে এখানের নানা ইতিহাস ভালো ভাবে জানা যাবে। এখানে ১ ঘণ্টার জন্য গাইড নিয়ে ঘুরতে জন প্রতি প্রবেশ মূল্য ৫০ পেসো।
কায়াঙ্গান লেক
পালাওয়ানের করনে অবস্থিত এই কায়াঙ্গান লেক পর্যটকদের জন্য এক বিশেষ আকর্ষণ। দ্বীপ পার হয়ে প্রায় ১৫ মিনিটের ট্র্যাকিং করে তারপর এই লেকে পৌঁছাতে হয়। এখানে সাঁতার কাটা ও হাইকিং করার সাথে সাথে স্নোরকেলিংয়ের সুযোগ আছে। লেকের পানি এত স্বচ্ছ ও পরিষ্কার যে পাহাড়ের চূড়ার প্রতিচ্ছবিও পানিতে পরিপূর্ণ ভাবে ফুটে উঠে। লেকের মাঝের গুহাতে এক ভিন্ন ধরনের আমেজ পাওয়া যায়। তবে ভিড় এড়ানোর জন্য এখানে সকাল সকাল যাওয়া ভালো।
ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ এন্ড ক্রকোডাইল কনজারভেশন ফার্ম
পুয়ের্তো প্রিন্সেসাতে অবস্থিত পালাওয়ান ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ এন্ড ক্রকোডাইল কনজারভেশন ফার্ম বন্য প্রাণী উদ্ধার ও সংরক্ষণ কেন্দ্র ফিলিপাইনের পালাওয়ানের একটি বিশেষ আকর্ষণ। শহর থেকে দূরে হলেও এখানে সবসময়ই পর্যটকদের ভিড় থাকে। মূলত এই রেসকিউ সেন্টার স্থানীয়দের কাছে কুমিরের খামার হিসেবেই বেশী পরিচিত। এখানে দীর্ঘতম কুমিরের চামড়া ও কঙ্কাল সংরক্ষিত আছে। এমনকি ছোট ছোট কুমির ও দেখতে পারবেন। কুমির ছাড়াও এখানে পাখি, সাপ, শূকর ছানা ও অন্যান্য অনেক প্রাণী দেখতে পারবেন। এখানে জন প্রতি এন্ট্রি ফি ফিলিপাইনের হিসেবে ৪০ পেসো।
স্পেসাল ব্যাটেলিয়ান ওয়ার্ল্ড ওয়ার-২ মেমোরিয়াল মিউজিয়াম
পালাওয়ানের পুয়ের্তো প্রিন্সেসাতে অবস্থিত ব্যাক্তিগত মালিকানাধীন স্পেসাল ব্যাটেলিয়ান ওয়ার্ল্ড ওয়ার-২ মেমোরিয়াল জাদুঘরেদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিগুলো প্রদর্শিত করা আছে। এখানে পালাওয়ানের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস জানার সাথে সাথে শহীদ হওয়া সৈনিকদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসও দেখার সুযোগ হবে। সকাল ৮ টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই জাদুঘর। আর প্রবেশ মূল্য মূলত ডোনেশন হিসেবে গননা করা হয়।
মাউন্ট মান্তালিঙ্গাজান
পালাওয়ান দ্বীপের দক্ষিন দিকে অবস্থিত মাউন্ট মান্তালিঙ্গাজান (Mount Mantalingajan) পাহাড় পালাওয়ান প্রদেশের মধ্যে সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। এখানে মূলত হাইকিং এর জন্য পর্যটকরা বেড়াতে আসে।
কিভাবে যাবেন পালাওয়ান আইল্যান্ড
ম্যানিলা (Manila) থেকে ডোমেস্টিক এয়ারলাইন্স যেমন- এয়ার ফিলিপাইনস, সেবু প্যাসিফিক ও ফিলিপিন্স এয়ারলাইন্সে পালাওয়ানের বুসুয়াঙ্গা এয়ারপোর্টে পৌছাতে হবে। আর এই ফ্লাইট গুলো ম্যানিলা থেকে প্রতিদিন পুয়ের্তো প্রিন্সেসা সিটিতে যাতায়াত করে। ম্যানিলা থেকে ৮৭৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পালাওয়ান দ্বীপে বিমানে যেতে সময় লাগে প্রায় ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট।
কিছু টিপস
• পালাওয়ান দ্বীপে স্কুবা ডাইভিং ও এল নিডো আইল্যান্ডে হুপিং এর মজা নিতে ভুলবেন না।
• পালাওয়ান আইল্যান্ড ঘুরার জন্য সাথে একজন গাইড নিয়ে ঘুরা ভালো।
• পালাওয়ান আইল্যান্ড থেকে সূর্যাস্ত দেখার চমৎকার দৃশ্য মিস করবেন না।
• সময় বেশী থাকলে পালাওয়ানের পুয়ের্তো আইল্যান্ড থেকে এল নিডোতে গিয়ে কিছুদিন কাটালে ভ্রমণের আনন্দ পরিপূর্ণ হবে।
• এখানে দ্বীপের কড়া রোদ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য অবশ্যই সাথে সান প্রোটেকশন নিবেন আর বীচে সাঁতার কাটার জন্য সুইমিং কস্টিউম সাথে নিতে ভুলবেন না।
• পালাওয়ানের স্থানীয়রা কাঁচা মাছ ও সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রাণী খায়, তাই খাওয়ার আগে উপাদান ভালো ভাবে জেনে তারপর মেন্যু নির্বাচন করবেন।