শুক্রবার। জুম্মার নামাজ পড়তে যাচ্ছি। মসজিদ কোনদিকে সেটা জানার চেষ্টা করছি। শুনেছি এদিকে একটি মসজিদ আছে। একটু এগোতেই দেখলাম মাথায় টুপি পরে বেশ কয়েকজন চায়নিজ বয়স্ক পুরুষ হেঁটে যাচ্ছেন। বুঝলাম এদের অনুসরণ করলেই মসজিদের খোঁজ পাওয়া যাবে।
ঘটনাটি কুনমিং শহরের উপকণ্ঠ ছেংকংয়ে। এখানে রয়েছে একটি মুসলিম অধ্যূষিত এলাকা। নাম হুইহুই ইন। ইন মানে গ্রাম। এলাকাটির নামের অনুবাদ করলে বোঝায় হুইদের গ্রাম। তবে নামে গ্রাম হলেও এখন এটি শহরের পৌরসভার এরাকার মধ্যেই। সকল নাগরিক সুযোগ সুবিধাই এখানে রয়েছে।
বিশাল দেশ চীন। এখানে রয়েছে ৫৬টি জাতিগোষ্ঠি। এদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলো হান জাতি। অন্যান্য জাতির মধ্যে ১২টি জাতির মানুষ ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করে। তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিও রয়েছে। উইঘুর, তাজিক, আফগান, হুই এমন অনেক জাতিগোষ্ঠি রয়েছে যারা তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করে এবং ধর্ম হিসেবে ইসলামকে মেনে চলে।
সারা চীনে দুই কোটির মতো বিভিন্ন জাতির মুসলিম রয়েছে। শিনচিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে উইঘুরসহ অন্যান্য কয়েক জাতির মুসলিম আছে। ইউননান প্রদেশেও হুইসহ অনেক জাতির মুসলিম রয়েছে।
বেইজিং, কুনমিং, গুয়াংজো(চীনা উচ্চারণে কুয়াংচোও, আগে এই শহরের নাম ছিল ক্যান্টন), সাংহাই, উরুমছি ইত্যাদি সব বড় শহরেই একাধিক মসজিদ রয়েছে। আছে মুসলিম অধ্যূষিত পাড়া বা মহল্লা। বিভিন্ন শহরে রয়েছে বড় মসজিদ, যেখানে ঈদের জামাত হয়। আরও পাড়া মহল্লায় আছে ছোট ছোট মসজিদ। যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং জুম্মা পড়া হয়।
আমি এই লেখায় আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরবো। প্রথমেই বলি বেইজিংয়ের সবচেয়ে বড় মসজিদটির কথা।
বেইজিংয়ে যে এলাকায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মুসলমানের বাস সে এলাকার নাম নিউচিয়ে। নিউ মানে গরু আর চিয়ে মানে রাস্তা। 'গরুর রাস্তা' নামকরণের উদ্দেশ্য হলো এখানে গরু জবাই হয় এবং গরুর মাংসের এবং বিভিন্ন হালাল মাংসের রেস্টুরেন্ট রয়েছে এ কথাটি বুঝানো।
এখানে রয়েছে একটি বড় সুপার মার্কেট। এই সুপার মার্কেটটি মুসলিমদের মালিকানায়, তাদের দ্বারা পরিচালিত। এখানে বিক্রি হয় বিভিন্ন রকম হালাল মাংস এবং অন্যান্য সামগ্রী। যখন আমি বেইজিংয়ে ছিলাম(২০১১-১২) তখন প্রায়ই এখান থেকে জবাই করা মুরগি, গরু বা খাসির মাংস কিনতাম। মাংসের তৈরি ফ্রোজেন কাবাব, চপ ইত্যাদিও কিনতাম। এই এলাকার একটি রেস্টুরেন্টেও প্রায়ই খেতাম।
নিউচিয়েতে রয়েছে বেইজিংয়ের সবচেয়ে বড় মসজিদ। এর নাম নিউচিয়ে মসজিদ। এটি বেইজিংয়ের সবচেয়ে পুরনো মসজিদও বটে।
নিউচিয়ে মসজিদ উত্তর চীনের সবচেয়ে বড় মসজিদ। ৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে লিয়াও রাজবংশের সময় এটি প্রথম নির্মিত হয়। সে সময় এই এলাকায় যে স্থানীয় মুসলমানরা ছিল তারা নিজেদের উদ্যোগে এটি তৈরি করে। ঐতিহ্যবাহী চীনা স্থাপত্যরীতিতে এর বাইরের অংশ নির্মিত হয় আর ভিতরে আরবি রীতিতে ক্যালিওগ্রাফির ব্যবহার করা হয়। এর নকশা করেছিলেন নাজারুদ্দিন নামে এক মুসলমান স্থপতি। তিনি ছিলেন মসজিদের ইমামের ছেলে। চেঙ্গিস খানের সেনাবাহিনী ১২১৫ সালে চীন আক্রমণের সময় এই মসজিদ ধ্বংস করে ফেলে। পরে অবশ্য এখানে আবার মসজিদ নির্মাণ হয়। পরবর্তীতে মিং রাজবংশের সময় ১৪৪৩ সালে মসজিদটি পুনর্নিমিত হয়।
ছিং রাজবংশের সম্রাট খাংশির সময়(১৬৬১-১৭২২) এর অনেক অংশ পুনর্নিমিত হয় এবং অনেক অংশ বাড়ানো হয়। চীনের কমিউনিস্ট সরকারের আমলেও মসজিদের অনেক অংশ নির্মাণ হয়েছে। বর্তমান সরকারও মসজিদটি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। একহাজার বছরের বেশি সময় ধরে এলাকাটি মুসলমানদের আবাসস্থল। বর্তমানে এই এলাকার আশপাশে প্রায় দশহাজার মুসলিম বসবাস করে।
ইউয়ান রাজবংশের আমলেও এখানে নামাজ পড়া হতো। ইউয়ান রাজবংশ হলো মঙ্গোল রাজবংশ। যারা চেঙ্গিস খানের বংশধর। মঙ্গোলিয়ার স্তেপভূমি থেকে আগত খান-ই-খানান(খানদের প্রধান) চেঙ্গিস খানের সময় মঙ্গোলরা নিজেদের গোত্রধর্মের অনুসারী থাকলেও খরেজমের মুসলমানদের সংস্পর্শে এসে তাদের কিছু অংশ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। আবার চেঙ্গিসের বংশধর ইউয়ানরা চৈনিকদের সংস্পর্শে এসে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে। ফলে মঙ্গোল, তৈমুর বংশীয়, তুর্কি, জাগতাই, কিরঘিজ, সমরখন্দীয়, পারসীয় ও ইরানীয় মিলে মধ্যযুগে মধ্যএশিয়া, ভারতবর্ষ, ইরান ও চীন সর্বত্রই মুসলমান ধর্মের অনুসারী অনেক মানুষ ছিল।
এখানে ঈদের জামাত অনেক বড় হয়। আমি এই মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়েছি, ঈদের নামাজও পড়েছি।
নারীপুরুষ সকলে এক মসজিদেই নামাজ পড়ে। তবে নারী-পুরুষের কাতারের মাঝখানে একটু জায়গা রয়েছে। অনেক সময় পাশ্চাত্য ধরনের পোশাকের সঙ্গে মাথায় একটি টুপি পরে বা ওড়নায় মাথা জড়িয়ে নামাজ পড়ে নারীরা। অনেকে আবার শার্টপ্যান্টের সঙ্গে হিজাব পরে নেয়। বাংলাদেশী, ভারতীয় ও পাকিস্তানি মহিলারা সালোয়ার কামিজ পরে আসে। শীতের দিনে আমিও প্যান্ট শার্ট সোয়েটারের সঙ্গে মাথায় টুপি দিয়ে চলে আসতাম নামাজ পড়তে।
ঈদের সময় অবশ্য সাবওয়ে থেকেই বিশেষ উৎসবের আমেজ টের পাওয়া যায়। দলে দলে মুসলিম নারী পুরুষ শিশু বৃদ্ধ সবাই হেঁটে যেতে থাকে মসজিদের দিকে। ঈদের দিন এই রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার পথে রীতিমতো ভিড়। ঈদের সময় নারীরা মসজিদের ভিতরের অংশে নামাজ পড়েন আর পুরুষরা বাইরের প্রাঙ্গনে। মসজিদটি বিশাল। এর অনেকগুলো অংশ। প্রায় দশ হাজার বর্গ মিটার এলাকা নিয়ে মসজিদ। মধ্যএশীয় এবং হান চৈনিক স্থাপত্যরীতির মিশ্রণ ঘটেছে এখানে। মূল প্রার্থনা ঘরটি ৬০০ বর্গমিটার আকৃতির। এখানে একহাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারে। এখানে একটি পাথরের কোরান শরীফ রয়েছে। আরও অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। ফলে নিউচিয়ে মসজিদ বেইজিংয়ের একটি পর্যটন স্থান। তবে নামাজের সময় এখানে অমুসলিমরা প্রবেশ করতে পারে না।
ঈদের সময় মসজিদের চারপাশের রাস্তায় ঈদের মেলা বসে। বেশ বড় মেলা। এখানে মূলত খাদ্য সামগ্রী বিক্রি হয়।
মেলায় গিয়ে দেখলাম মুসলমানদের বিভিন্ন জাতির ঐতিহ্যবাহী খাবার বিক্রি হচ্ছে দেদার। সেইসঙ্গে নানা রকম হালাল খাদ্য বিক্রি হচ্ছে। শুধু মুসলমানরা নয়, অমুসলিমরাও কিনছে। শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ পর্যটক এসেছে অনেকে।মেলায় জামা কাপড় থেকে শুরু করে অন্যান্য সামগ্রীও রয়েছে। বেইজিংয়ের বিভিন্ন এলাকায় আরও অনেক মসজিদ রয়েছে।
তখন আমি কাজ করতাম চীন আন্তর্জাতিক বেতারে। সেটি বেইজিংয়ের শিজিংশান এলাকায়। এই এলাকায় কাছাকাছি একটি মুসলিম কমিউনিটি রয়েছে। সেখানে মসজিদ আছে। সেই মসজিদেও অনেকবার জুম্মার নামাজ পড়েছি। বেইজিংয়ের সব এলাকাতেই হালাল রেস্টুরেন্ট রয়েছে। মোটামুটিভাবে বলা যায় যেখানে দশটি রেস্টুরেন্ট আছে সেখানে একটি মুসলিম রেস্টুরেন্ট থাকবেই।
এবার বলি চীনের সবচেয়ে পুরনো মসজিদের কথা।
কুয়াংচোওতে আমি গিয়েছিলাম ব্যবসায়িক কাজে।তবে, ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকলেও এমন একটি প্রাচীন শহরের কোনো স্থাপনা না দেখে ফিরে আসা অপরাধ। তাই এক বিকেলে গেলাম হুইশাং মসজিদ দেখতে।এটি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন একটি মসজিদ। ৬২৭ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত এ মসজিদটি মহানবী হযরত মুহম্মদ(সা.) এর এক আত্মীয়( চাচা অথবা মামা) গড়ে তোলেন। ইসলাম পূর্ব সময় থেকেই এই বন্দর নগরীতে আরব বণিকদের এক সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল। তাদের মধ্যে ইসলাম প্রচারের জন্যই এই মসজিদ গড়ে তোলা হয়েছিল। মসজিদটির মূল ভবন ও মিনার এখনও ব্যবহার করা হয়। প্রাচীন মাটির দেয়ালের নমুনাও সংরক্ষিত আছে। এখানে সেই সময়কার একটি কুয়া থেকে এখনও ওযুর পানি সরবরাহ করা হয়। শরতের বিকেলে সেই প্রাচীন মসজিদে নামাজ পড়তে দারুণ এক অনুভুতি হয়েছিল। এই মসজিদকে ঘিরে এই এলাকায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিমের বসবাস রয়েছে। চীন সরকারের পক্ষ থেকে মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণ এবং এর বর্ধিতকরণের খরচ দেওয়া হয়। আমি এইসব এলাকায় যে ঘুরে বেড়িয়েছি সেটা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে। তাই প্রকৃত চিত্রটা দেখেছি এতে কোন সন্দেহ নেই। আমি সেখানে মুসলিমদের খুব ভালোভাবে, স্বাধীনভাবে ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করতে দেখেছি। নামাজ পড়তে দেখেছি। কেউ তাদের ধর্ম পালনে বাধা দিচ্ছে না। সেখানে মহল্লার ভিতরে শিশু ও বৃদ্ধদের নিশ্চিন্তমনে ঘুরে বেড়াতে দেখেছি। কোন রকম পুলিশ বা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দেখিনি।
এবার বলি উরুমছির অভিজ্ঞতা।
২০১৭ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ১১ দিনের একটি কর্মসূচিতে চতুর্থবারের মতো চীনে যাওয়ার সুযোগ হয়। চীন সরকার তাদের মিডিয়া ট্যুর কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশের ১২জন সাংবাদিককে চীন সফরে নিয়ে যান। সেই সফরে আমরা চারটি প্রদেশের পাঁচটি শহরে ভ্রমণ করি। এই শহরগুলোর মধ্যে উরুমছিতে তিনদিন থাকা হয়।
শিনচিয়াং হলো চীনের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত উইঘুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল। বিশাল একটি অঞ্চল। ১.৬ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার এলাকা।এই অঞ্চলের রাজধানী উরুমছি।
চীনে যে ২.৩ কোটি মুসলিম রয়েছেন তাদের প্রায় অর্ধেকই বাস করেন এই প্রদেশে।এই অঞ্চলের দশটি জাতির মানুষ মুসলিম। আর চীনের সংখ্যাগরিষ্ঠ হান জাতির মানুষ তো আছেই। এখানকার মুসলিমদের উন্নয়নের জন্য চীনের বর্তমান সরকার প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছেন। মসজিদের ইমামের সঙ্গে এবং মুসলিম কমিউনিটির অন্যদের সঙ্গেও কথা বললাম। তারা খুব সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন বর্তমান চীন সরকারের প্রতি।এখানে গ্র্যান্ড বাজার বা মসজিদ বাজার নামে একটি বড় জায়গা রয়েছে। সেখানে মসজিদের বিশাল মিনারের স্থাপত্য শৈলী অনবদ্য। এখানে শপিং করারও সুযোগ পেলাম। বিরাট শপিং কমপ্লেক্স। মধ্যএশিয়ার ঐতিহ্যবাহী পোশাক থেকে শুরু করে স্যুভেনির আর খাবার দাবারের ছড়াছড়ি। এখানে আশপাশে সকলেই মুসলিম। মসজিদে আজানও পড়লো। দেখলাম দলে দলে মুসলিম যাচ্ছেন মসজিদে নামাজ পড়তে।
উরুমছি শহরে বিভিন্ন জাতির মুসলিম নারী ও পুরুষরা স্বাধীনভাবে বেছে নিচ্ছেন বিভিন্ন পেশা। ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন অনেকেই। রেস্টুরেন্ট, পোশাকের দোকানসহ বিভিন্ন রকম ব্যবসা পরিচালনা করছেন তারা। চীনের অন্যান্য শহরের মতো এখানেও পুরুষের পাশাপাশি নারীদের ব্যস্ত পদচারণা চোখে পড়ে। রাস্তাঘাটে বড় বড় গাড়ি সাবলীলভাবে চালাচ্ছেন নারীরা। যে প্রতিষ্ঠানেই যাই না কেন, চোখে পড়ছে নারীর স্বতস্ফূর্ত ও সম অংশগ্রহণ। শুধু সম অংশগ্রহণ নয় বরং বলা যায় নারীরা যেন পুরুষের চেয়েও বেশি কর্মদক্ষ। এই প্রদেশের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান শিনচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে প্রশাসনিক প্রধান থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিভাগেও প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন নারী। এখানে মুসলিম জনগোষ্ঠি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছেন। মুসলিম ছেলেমেয়েরা এখানে লেখাপড়া করছে।
উরুমছি শহরে ছোটবড় অনেক মসজিদ রয়েছে। রয়েছে হুইজাতির ঐতিহ্যবাহী খাবারের জন্য একটি বিশেষ এলাকা। সেখানে মুসলিম ধর্মাবলম্বী হুইজাতির মানুষরা সুভ্যেনির শপ এবং অনেকগুলো বিশাল রেস্টুরেন্ট দিয়েছেন। সেখানে তাদের বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়ে থাকে।
বর্তমানে আমি কুনমিং শহরে রয়েছি। কুনমিং শহরে রয়েছে ছোট বড় বেশ কয়েকটি মসজিদ। শহরের প্রাণকেন্দ্র নানপিং চিয়েতে রয়েছে বহুতল একটি মসজিদ। এটি কেন্দ্রীয় মসজিদ। বিশাল বড়। এখানে ঈদের জামাত হয়। এর কাছেই মুসলিম কমিউনিটি রয়েছে। সেখানে রয়েছে বড় একটি বাজার। সকালে খোলা বাজারও বসে। হালাল মাংসসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী বিক্রি হয়।
শহরের অন্যান্য এলাকাতেও রয়েছে হালাল খাবারের রেস্টুরেন্ট। হালাল মাংসের দোকান। বাজারেও রয়েছে হালাল মাংসের আলাদা দোকান। কুনমিং শহরে পথচলতি প্রচুর মুসলিম চোখে পড়ে। মেয়েরা অনেকেই মাথায় হিজাব পরেন, ছেলেরা টুপি। আবার হিজাব ছাড়াও অনেক মুসলিম নারী চলাফেরা করেন।
চীনের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম ক্যান্টিন আছে। সেখানে হালাল খাবার পরিবেশিত হয়। প্রতিটি বড় শহরে মসজিদ আছে। মুসলামানদের ধর্ম পালনে কেউ বাধা দেয় না। আমি চীনের অনেক মুসলিম গ্রামে গিয়েছি। কাউকে দেখেই মনে হয়নি তারা অসুখী বা খুব দুঃখে আছে বা নির্যাতনের ভিতর আছে। তাদের বাড়িঘরও যথেষ্ট উন্নত।
আমার ছাত্রছাত্রী ও সহকর্মীদের মধ্যেও অনেকে মুসলিম আছেন। তারাও স্বাধীনভাবে নিজেদের ধর্ম পালন করছেন।
হাজার বছর ধরেই চীনে মুসলিম জনগোষ্ঠি বাস করছে। তারা চীনের ঐতিহ্য, নিজেদের জাতিগত সংস্কৃতি এবং ইসলাম ধর্ম পালন করে সুখে আছেন, শান্তিতে আছেন।