বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের আনহুই সফর
  2020-08-24 17:09:22  cri

 


গত সপ্তাহে চীনের আনহুই প্রদেশ সফর করেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। আনহুই প্রদেশ মধ্যচীনে অবস্থিত। প্রদেশটির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ইয়াংসি নদী, হুয়াই হ্য নদী ও সিনআনচিয়াং নদী। চীনের পাঁচটি বড় হ্রদের অন্যতম ছাওহুও এখানে অবস্থিত। চলতি বছরের গ্রীষ্মকালে চীনের বিভিন্ন প্রদেশে ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি হয়। ফলে অনেক এলাকায় বন্যার দুর্যোগ দেখা দেয়। আনহুই প্রদেশের অবস্থাও গুরুতর আকার ধারণ করে। সফরকালে প্রেসিডেন্ট সি ছোংছিং, ইছাং, চিংচৌ ও উহান শহরও পরিদর্শন করেন।

সফরকালে আনহুই প্রদেশের মাআনশান শহরে আসেন সি। ইয়াংসি নদীর ৪১৬ কিলোমিটার আনহুই প্রদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। প্রদেশের ৫টি শহর অতিক্রম করেছে নদীটি এবং মাআনশান শহরে স্যুয়েচিয়াওয়া নামের একটি বিশেষ প্রাকৃতিক বাগান আছে। অতীতে স্যুয়েচিয়াওয়া'র বন্দর চালু হয়। তখন স্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে নির্গত দূষিত পানি সংশ্লিষ্ট নদীর পানি মারাত্মকভাবে দূষিত করেছে। নদীর কাছে তখন বিপজ্জনকভাবে নির্মিত পুরাতন বাড়িঘরও দেখা যেতো। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে ইয়াংসি নদীর অর্থনৈতিক করিডর উন্নয়নবিষয়ক সেমিনারে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, দীর্ঘকাল ধরে ইয়াংসি নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ পুনরুদ্ধার করতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পরিবেশের বিনিময়ে উন্নয়ন প্রয়োজন নেই।

২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে, প্রায় ২ বছর পর, যখন প্রেসিডেন্ট সি হুনান প্রদেশ পরিদর্শন করেন, তখন তিনি আরেকবার ইয়াংসি নদীর পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ইয়াংসি নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ আমাদের এ প্রজন্মে অবনতি হবে না, আমাদের বংশধরদের জন্য পরিচ্ছন্ন নদী রাখতে হবে।

এবার স্যুচিয়াওয়া'র পরিদর্শনে ইয়াংসি নদীর পানির মান, বন্যার অবস্থা, সৈকত এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ পুনরুদ্ধার কার্যক্রমসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে খোঁজখবর নেন প্রেসিডেন্ট সি। আসলে গত শতাব্দীর ৫০-এর দশকে আনহুই প্রদেশের মাআনশান শহর একটি শিল্পভিত্তিক শহর ছিল। এখানে চীনের বড় একটি ইস্পাত কারখানা রয়েছে। চীনের প্রথম হুইল হাব কারখানা ও 'এইচ' আকারের স্টিল উত্পাদন লাইন এখানে স্থাপিত। তবে গত শতাব্দীর ৮০-র দশকের পর অতিরিক্ত উত্পাদন ও পরিবেশ সংরক্ষণের চেতনার অভাবের কারণে স্থানীয় প্রাকৃতিক পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। প্রেসিডেন্ট সি'র নির্দেশনায় মাআনশান স্টিল কারখানার সংস্কার হয় এবং পরিবেশ সংরক্ষণের পদক্ষেপও নেওয়া হয়। চলতি বছরের প্রথমার্ধে স্টিল উত্পাদনের পরিমাণ ১০২০০ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭.৬ শতাংশেরও বেশি।

মাআনশান থেকে আনহুই প্রদেশের রাজধানী হ্যফেই শহর পরিদর্শন করতে যান সি। সেখানকার নব্যতাপ্রবর্তন জাদুঘর ও ইয়াংসি নদীর যুদ্ধের স্মরণীয় জাদুঘরও পরিদর্শন করেন সি। ইয়াংসি নদীর যুদ্ধ সম্পর্কে কিছু তথ্য এখানে আমরা তুলে ধরতে চাই।

১৯৪৯ সালের এপ্রিল মাসে এ যুদ্ধ হয়। তখন নয়াচীন প্রতিষ্ঠিত হয়নি, কুওমিনতাং পার্টির নেতৃত্বে চিয়াং কাই শেক সরকার চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন গণমুক্তি ফৌজের সাথে যুদ্ধ করছে। এর আগে উত্তর চীনের বিভিন্ন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার কারণে গণমুক্তি ফৌজ উত্তর চীনকে মুক্ত করে। তবে ইয়াংসি নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ অতত্য জটিল, সহজে বন্যা দেখা দেয়, তাই কুওমিনতাং পার্টির সেনাবাহিনী ইয়াংসি নদীর দক্ষিণ পার দখল করে। তাদের ১৫ লাখ সৈন্য নানচিং শহরকে কেন্দ্র করে কমিউনিস্ট পার্টির ৪০ লাখ সৈন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকে। ১৯৪৯ সালের এপ্রিল মাসে কুওমিনতাং পার্টির সেনাবাহিনী ইয়াংসি নদীর তীরে ইছাং শহর থেকে শাংহাই শহর পর্যন্ত ১৮০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মোট ৭ লাখ সৈন্য মোতায়ন করে। প্রতিবছরের মে মাস থেকে ইয়াংসি নদীর পানি বাড়তে থাকে। তখন সহজে বন্যা দেখা দেয়। বন্যা শুরুর আগে চেয়ারম্যান মাও সে তুং ইয়াংসি নদী অতিক্রম করার সিদ্ধান্ত নেন। তখন চীনা গণমুক্তি ফৌজের ১০ লাখ সৈন্য আনছিং, উহু ও নানচিং অংশে নদী অতিক্রম করতে শুরু করে। অবশেষে তারা সফলভাবে ইয়াংসি নদীর জটিল প্রাকৃতিক পরিবেশকে পরাজিত করে দক্ষিণ চীনকে মুক্ত করে। ২০১২ সালে এ জাদুঘর নির্মিত হয়। প্রদর্শনীর মাধ্যমে ৪০ লাখ চীনা জনগণ ও সৈন্যের সংগ্রামী ইতিহাস প্রতিফলিত হয়।

পয়লা জুলাই আমরা সিয়াংশান পাহাড়ের পার্কে গিয়েছিলাম। সেখানকার শুয়াংছিং ভিলাও বিপ্লবী জাদুঘর। সি চিন পিংও সিয়াংশান জাদুঘর পরিদর্শন করেন। তখন তিনি বলেন, ইতিহাস সৃষ্টি হয় সাহসী ব্যক্তিদের দ্বারা। ইতিহাস ও প্রবীণ বীরদের অবদান স্মরণ করে দেশের উন্নয়নে নতুন অবদান রাখতে হবে।

আনহুই প্রদেশের পরিবেশ সংরক্ষণ কার্যক্রমের ফলাফল দেখার সাথে সাথে স্থানীয় বন্যাপ্রতিরোধক কার্যক্রমের প্রতিও মনোযোগ দেন সি। কারণ, চলতি বছরের বর্ষাকালে টানা ৮ দফা ঝড়বৃষ্টি হয়েছে হ্যফেইতে। গড়ে বৃষ্টির পরিমাণ নিয়মিত পরিমাণের ৩ গুণেরও বেশি। ১৯ জুলাই গত ১৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পানি হয় ছাওহু হ্রদে। তাই শহরবাসীদের জীবন ও শহরের দ্রুতগতির ট্রেনের জন্য বড় হুমকি সৃষ্টি হয়। তখন প্রেসিডেন্ট সি'র নির্দেশনায় বন্যা প্রতিরোধক জরুরি মোকাবিলা ব্যবস্থা চালু হয় এবং স্থানীয় সৈন্যদের যৌথ উদ্যোগে হ্রদের পানি ১৭ সেন্টিমিটার কমানো হয়। এ পর্যন্ত মোট ৬ লাখেরও বেশি সৈন্য হ্যফেই'র বন্যা প্রতিরোধক কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। ইয়াংসি নদীর পারে দাঁড়িয়ে সি সবাইকে কাজ করতে দেখেন ও তাদের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, 'বন্যা প্রতিরোধের কাজে অংশগ্রহণকারী সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। আপনাদের সংগ্রাম ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের বন্যা প্রতিরোধক কাজে সাফল্য অর্জিত হয়েছে।'

বন্যা মোকাবিলা করতে গিয়ে ৩ জন সৈন্য প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে সি বলেন, 'আপনাদের ক্ষতি দেশের ক্ষতি। ৩ জন বীর চিরদিনের মতো আমাদের মনে থাকবে। বিভিন্ন বিপজ্জনক মুহূর্তে অনেক বীর অন্যদের উদ্ধারে নিজের প্রাণ উত্সর্গ করেন, তা চীনা জাতির মহান চেতনার প্রতিফলন। জলসেচ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, আনহুই প্রদেশের বন্যা প্রতিরোধক সতর্কতার মাত্রা ৩ থেকে ২-এ নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে বন্যা মোকাবিলার সার্বিক পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয়। আরও কার্যকর পদ্ধতিতে এ প্রতিরোধক কাজ করতে হবে।'

সুপ্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা অনুষ্ঠানের সময় শেষ হয়ে এলো। সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারেন বা মিস করেন, আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn,আমাদের যোগাযোগ ইমেল ঠিকানাben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040