গানের মালা: লালনের কয়েকটি গান
  2020-08-21 17:02:48  cri

প্রিয় শ্রোতা, আশা করি ভাল আছেন। বেইজিং থেকে প্রচারিত চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান 'গানের মালায়' আপনাদের সবাইকে আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি আমি ইয়াং ওয়েই মিং স্বর্ণা।

সংগীত কোনো দেশের সীমানা মানে না। সংগীতের জগতে ডুব দেওয়ার আনন্দই আলাদা। যে যেখানে যেভাবেই থাকুন-না-কেন, আসুন সংগীত উপভোগ করি।

লালন ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন বাঙালি; যিনি ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ, মহাত্মা লালন ইত্যাদি নামেও পরিচিত। তিনি একাধারে একজন আধ্যাত্মিক বাউল সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক। তিনি অসংখ্য গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। লালনকে বাউল গানের অগ্রদূতদের অন্যতম একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং 'বাউল-সম্রাট' হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তার গানের মাধ্যমেই উনিশ শতকে বাউল গান বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

লালন ছিলেন একজন মানবতাবাদী সাধক। যিনি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রসহ সকল প্রকার জাতিগত বিভেদ থেকে সরে এসে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন। অসাম্প্রদায়িক এই মনোভাব থেকেই তিনি তার গান রচনা করেছেন। তার গান ও দর্শন যুগে যুগে প্রভাবিত করেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও অ্যালেন গিন্সবার্গের মতো বহু খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবীসহ অসংখ্য মানুষকে। তার গানগুলো মূলত বাউল গান হলেও বাউল সম্প্রদায় ছাড়াও যুগে যুগে বহু সঙ্গীতশিল্পীর কণ্ঠে লালনের এই গানসমূহ উচ্চারিত হয়েছে। গান্ধীরও ২৫ বছর আগে, ভারত উপমহাদেশে সর্বপ্রথম, তাকে 'মহাত্মা' উপাধি দেয়া হয়েছিল।

আয় কে যাবি ওপারে

来吧,谁想去对岸?

আয় কে যাবি ওপারে ।

来吧,谁想去对岸?

দয়ালচাঁদ মোর দিচ্ছে খেওয়া অপার সাগরে ।।

我仁慈的月亮给了去对岸的渡船。

যে দিবে ঐ নামের দোহাই

因那名字的原因给予的

তারে পার করবেন গো সাঁই

就将他渡到对岸吧,主啊

এমন দয়াল আর কেহ নাই

没有比你更仁慈的人了

ভব সংসারে ।।

在这个世界上。

পার করে সে জগৎ বেড়ি

把他从世界的锁链中解救出来

নেয় না কারো পারের কড়ি

也不拿任何救赎的费用

সেরে সরে মনের দেড়ি

将心中多余的移走

ভার দে না তারে ।।

不要再给它负担了。

ঐ শ্রীচরণে দিয়ে ভার

将负担放在那圣洁的脚下

কত পাপী হইল পার

多少有罪的人都被渡过去了

সিরাজ সাঁই কয় লালন তোমার

希拉兹师傅说,拉龙呀

বিগার যায় না রে ।।

你总是无法不胡思乱想。

লালনের জীবন সম্পর্কে বিশদ কোনো বিবরণ পাওয়া যায় না। তার সবচেয়ে অবিকৃত তথ্যসূত্র তার নিজের রচিত ২৮৮টি গান। কিন্তু লালনের কোনো গানে তার জীবন সম্পর্কে কোনো তথ্য তিনি রেখে যাননি, তবে কয়েকটি গানে তিনি নিজেকে 'লালন ফকির' হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। তার মৃত্যুর পনেরো দিন পর কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত হিতকরী পত্রিকার সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়, 'ইহার জীবনী লিখিবার কোন উপকরণ পাওয়া কঠিন। নিজে কিছু বলিতেন না। শিষ্যরা তাঁহার নিষেধক্রমে বা অজ্ঞতাবশত কিছুই বলিতে পারে না।'

সহজ মানুষ ভজে দেখ না রে মন দিব্যজ্ঞানে

简单的人啊,让你的心去膜拜真理吧

সহজ মানুষ ভজে দেখ না রে মন দিব্যজ্ঞানে।

简单的人啊,让你的心去膜拜真理吧

পাবি রে অমূল্যনিধি বর্তমানে।।

你会得到现世的无价珍宝。

ভজ মানুষের চরণ দুটি

虔诚的人的双脚

নিত্য বস্তু পাবে খাঁটি

从日常物品中得到真实

মরিলে সব হবে মাটি

死去都会化为尘土

ত্বরায় এ ভেদ লও জেনে।।

快点了解到这个不同吧。

মলে পাব বেহেস্তখানা

死去就能到天堂

তা শুনে তো মন মানে না

听到这样的话我的心不能认同

বাঁকির লোভে নগদ পাওনা

对来世的渴望下现世的欢愉

কে ছাড়ে এই ভুবনে।।

这个世上谁会舍弃?

আসসালাতুল মেরাজুল মোমেনিনা

信仰的人通过祷告能获得来世的回报

জান গে সেই নামাজের বেনা (এক ধরনের গাছ)

去了解一下祷告的内容吧

বিশ্বাসীদের দেখাশুনা

信仰人的所见所闻

লালন কয় এই জীবনে।।

拉龙说,就在这生活里

লালনের জন্ম কোথায় তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। লালন নিজে কখনো তা প্রকাশ করেননি। কিছু সূত্রে পাওয়া যায় লালন ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশের) ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার হারিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কোনো কোনো লালন গবেষক মনে করেন, লালন কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার চাপড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত ভাড়ারা গ্রামে জন্মেছিলেন। এই মতের সাথেও অনেকে দ্বিমত পোষণ করেন। বাংলা ১৩৪৮ সালের আষাঢ় মাসে প্রকাশিত মাসিক মোহম্মদী পত্রিকায় এক প্রবন্ধে লালনের জন্ম যশোর জেলার ফুলবাড়ি গ্রামে বলে উল্লেখ করা হয়।

জাত গেল জাত গেল বলে একি আজব কারখানা

没了种姓,没了种姓,这是什么奇怪的工厂

জাত গেল জাত গেল বলে একি আজব কারখানা

没了种姓,没了种姓,这是什么奇怪的工厂

সত্য কাজে কেউ নয় রাজি সব দেখি তা না না না।।

真实的工作谁也不同意,所有的都不是这样

যখন তুমি ভবে এলে

你来这个世界的时候

তখন তুমি কী জাত ছিলে

那时你是什么种姓

যাবার বেলায় কী জাত নিলে

你走的时候又是什么种姓

এ-কথা আমায় বল না।।

别再跟我说这样的话

ব্রাম্মণ-চণ্ডাল চামার-মুচি

从婆罗门到烧尸人、鞋匠、制革工

একই জলে সব হয় গো শুচি

都从同一片水中清洁自己

দেখে শুনে হয় না রুচি

看到听到却不让人喜欢

যমে তো কাউকে ছাড়বে না।।

但阎王可是谁都不会放过。

গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায়

偷偷的吃妓女的饭

তাতে ধর্মের কী ক্ষতি হয়

这对宗教有什么损害呢

লালন বলে জাত কারে কয়

拉龙说种姓是对谁说的呢

এই ভ্রম তো গেল না।।

这个错误可是没有纠正

হিতকরী পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ নিবন্ধে বলা হয়েছে, লালন তরুণ বয়সে একবার তীর্থভ্রমণে বের হয়ে পথিমধ্যে গুটিবসন্ত রোগে আক্রান্ত হন। তখন তার সাথীরা তাকে মৃত ভেবে পরিত্যাগ করে যার যার গন্তব্যে চলে যায়। কালিগঙ্গা নদীতে ভেসে আসা মুমূর্ষু লালনকে উদ্ধার করেন মলম শাহ। মলম শাহ ও তার স্ত্রী মতিজান তাকে বাড়িতে নিয়ে সেবা-শুশ্রূষা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। এরপর লালন তার কাছে দীক্ষিত হন এবং কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়াতে স্ত্রী ও শিষ্যসহ বসবাস শুরু করেন। গুটিবসন্ত রোগে একটি চোখ হারান লালন। ছেউড়িয়াতে তিনি দার্শনিক গায়ক সিরাজ সাঁইয়ের সাক্ষাতে আসেন এবং তার দ্বারা প্রভাবিত হন।

এ ছাড়া লালন সংসারী ছিলেন বলে জানা যায়। তার সামান্য কিছু জমি ও ঘরবাড়ি ছিল। লালন অশ্বারোহণে দক্ষ ছিলেন এবং বৃদ্ধ বয়সে অশ্বারোহণের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে যেতেন।

সুপ্রিয় শ্রোতা, কেমন লাগছে আমাদের অনুষ্ঠান? আপনার পছন্দের গান বা কবিতাগুলো আমাকে পাঠিয়ে দিতে পারেন। এই গান ও কবিতার পেছনে আপনার গল্প বা অনুভূতিগুলোও আমাকে পাঠাতে পারেন। আমি বাছাই করে চীনা ভাষায় অনুবাদ করে অনুষ্ঠানে প্রচার করবো। কেমন?

আমার ইমেল ঠিকানা হচ্ছে: 1478605810@qq.com আশা করি আপনাদের সঙ্গে আরো অনেক সুন্দর সুন্দর গান বা কবিতার কথা শেয়ার করতে পারি। সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন, আবার কথা হবে।

(স্বর্ণা/তৌহিদ/সুবর্ণা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040