'Long Time No See, Wuhan'
  2020-08-20 16:09:23  cri

'Long Time No See, Wuhan' নামে এ তথ্যচিত্রটি মূলত অনলাইনে দেখানো হয়। এর ৪৮ ঘণ্টার কম সময়ে এ প্রামাণ্যচিত্রটি ২ কোটি ৫০ লাখেরও বেশি বার দেখা হয়। আসলে এ প্রামাণ্যচিত্রটি সরকারি বা শহর কর্তৃপক্ষের তৈরি কোনও প্রযোজনা নয়। এটি চীনের নানচিং শহরে বাস করা জনৈক জাপানি প্রযোজক তাকেউচি রিও ও তার দলের তৈরি প্রামাণ্যচিত্র।

তাকেউচি রিও, জাপানের এনএইচকে'র সাবেক পরিচালক। তিনি তথ্যচিত্র তৈরি করতে পছন্দ করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি 'আমার এখানে বাস করার কারণ' নামে ধারাবাহিক তথ্যচিত্র নির্মাণ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি চীন ও জাপানের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন। বিদেশের চোখে চীন এবং বিশ্বের কাছে চীনকে তুলে ধরাই হলো তার স্বপ্ন।

শ্রোতাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, গত মার্চ মাসে 'নানচিং শহর মহামারী প্রতিরোধের ঘটনাস্থল' শীর্ষক তথ্যচিত্রে নানচিং শহরের মহামারী প্রতিরোধের অবস্থা তুলে ধরা হয়। তার এই ভিডিওতে নেট ব্যবহারকারীরা দেখেছেন যে, নানচিং শহরে সুপারমার্কেটে যাওয়া বা বাসে ওঠা, যাই হোক-না-কেন, সবার আগে শারীরিক তাপমাত্রা চেক করতে হয়। লিফটের বোতাম পুশ করার জন্য বিশেষভাবে রাখা টিস্যুও ব্যবহার করতে হয়। হাতের সঙ্গে বোতামের স্পর্শ এড়াতে টিস্যু দিয়ে বোতাম পুশ করা যায়। মানুষের সেলফোনে মহামারী সংক্রান্ত ম্যাপ আছে। ম্যাপে মহামারীর চিহ্নিত স্থানগুলো এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে। রেস্টুরেন্টে খাওয়ার জন্য প্রথমে রেজিস্টার করতে হয়। নিজের নাম, আইডি নম্বর এবং ফোন নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য সেখানে লিখতে হয়। খাবারের জন্য পে করতে চাইলে নগদ নয়, নিজের সেলফোন দিয়ে পে করা যায়। রেস্টুরেন্টে কর্মরত লোকেরা প্রতি ঘণ্টায় নিজেদের শারীরিক তাপমাত্রা মাপেন এবং তারা প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরে কাজ করেন। তাঁর এ প্রামাণ্যচিত্রে বিদেশি জনগণের দৃষ্টিকোণ থেকে চীনের নানচিং শহরে মহামারী প্রতিরোধের বাস্তব অবস্থা ফুটিয়ে তুলেছে। তাই তার এ প্রামাণ্যচিত্র ইন্টারনেটে তুমুল সাড়া ফেলে।

'Long Time No See, Wuhan' নামের এ প্রামাণ্যচিত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, 'উহান খুব বিপজ্জনক, আপনি ওখানে যাবেন না।' কয়েক মাস আগে কোনো এক দিন কেউ আমার মাইক্রোব্লগে এমন একটা ম্যাসেজ লিখেছিলেন।

তিনি বলেন, উহান শহর নিয়ে অনেক জাপানি বন্ধুদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের চিন্তাভাবনা আছে। এক কোটিরও বেশি উহানবাসীর নিউক্লিক অ্যাসিড পরীক্ষা চালানো হলেও উহান শহর নিয়ে অনেক বিদেশির মনোভাব পরিবর্তন হয়নি। সে সময় থেকেই মূলত তাকেউচি রিওয়ের মনে উহানের সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণের ইচ্ছা সৃষ্টি হয়। তিনি বিশ্বের কাছে সত্য উহান শহর তুলে ধরতে চান।

তাই মে মাস থেকে তিনি মাইক্রোব্লগে 'উহান শহরে বাস করা লোকদের খুঁজে বের করার' এই টপিক সৃষ্টি করেন। তারপর তিনি তাদের মধ্যে মোট ১০ জনকে শুটিংয়ের প্রধান চরিত্র হিসেবে বেছে নেন। পহেলা জুন থেকে ১০ জুন পর্যন্ত তিনি ও তার দল ১০ দিনব্যাপী শুটিং করেন। এ তথ্যচিত্রে মহামারীর সময় উহান শহরে বাস করা দশ জনকে বেছে নেওয়া হয়। এতে বিভিন্ন পেশার লোকদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মহামারীর সময় এবং মহামারী পরবর্তী তাদের চাকরি ও জীবনের বিভিন্ন পরিবর্তন তুলে ধরা হয়।

পরিচালক তাকেউচি রিও আগে কল্পনা করতেন যে, নিজের খরচে নির্মিত এ তথ্যচিত্রটি কোনো প্রচার না করে দেশে বিদেশের ওয়েবসাইটে পোস্ট করে খুব ভালো সাড়া পাওয়া গেছে।

৩ জুলাই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র চাও লি চিয়েন 'Long Time No See, Wuhan' নামে এ তথ্যচিত্রের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এ তথ্যচিত্রের অনেক বিষয় মনোমুগ্ধকর। যা চীন ও জাপানসহ বিভিন্ন দেশের ব্যাপক দর্শকদের মন জয় করেছে। এর প্রধান কারণ হলো এটি সহজ ও সরল এবং জনগণের জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।

'Long Time No See, Wuhan' নামে এ প্রামাণ্যচিত্রের একটি স্পষ্ট বৈশিষ্ট্য হলো, ক্যামেরার সামনে পরিচালকের উপস্থিতি। তিনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থাপকের ভূমিকা পালন করেছেন। শুরুতে তিনি সরাসরি এবারের উহান যাত্রার উদ্দেশ্য জানান। তিনি শুটিংয়ের প্রক্রিয়ায় সাক্ষাত্কারদাতাদের সঙ্গে আড্ডা দেন এবং ব্যাখ্যার পদ্ধতিতে ক্যামেরার সামনে যে ঘটনা ঘটে সেসব ঘটনা ব্যাখ্যা করেন।

তার এ ধারাবাহিক অসাধারণ শুটিংয়ের ফলে তার এ তথ্যচিত্র দেখতে অনেকটা সংবাদ রিপোর্টিংয়ের মতো মনে হয়। তথ্যচিত্রের পরিচালক যেন একজন সাংবাদিকের মতো ঘটনাস্থল থেকে সাক্ষাত্কার নেন।

পরিচালক তাকেউচি রিও বলেন, তাঁর এ তথ্যচিত্রের বৃহত্তম অর্থ হলো বর্তমানের উহান রেকর্ড করা। তিনি মনে করেন, যথার্থতা ও ইতিহাস রেকর্ড করা হলো একটি তথ্যচিত্রের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান।

শুটিংয়ের বিষয় বেছে নেওয়ার প্রসঙ্গে তাকেউচি রিও বলেন, আমার মানদণ্ড হলো, যে দৃশ্য বিদেশি দেখতে চান তা ক্যামেরায় ধারণ করা যায়। তার বরাবরের চিন্তাধারার মতো তাকেউচি রিওয়ের তথ্যচিত্র নির্মাণের উদ্দেশ্য হলো, বিশ্বের কাছে চীনকে তুলে ধরা। তিনিই প্রামাণ্যচিত্র সরাসরি ও প্রাণবন্ত উপায়ে যারা চীনের ভূমির বাইরে বসবাস করেন, তাদের কাছে চীনকে তুলে ধরেছেন এবং প্রকৃত দৃশ্যের মাধ্যমে বৈষম্য দূর করার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন।

তথ্যচিত্রে তিনি প্রথমে উহানের হুয়ানান সিফুড বাজারে গিয়েছেন। মহামারীর প্রাদুর্ভাবের আগে ব্যবসায়ীরা যারা এখানে কাজ করেন,তাদের সাক্ষাত্কার নেন তিনি। তিনি বিভিন্ন দৃশ্য এবং ব্যবসায়ীদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে দর্শকদের হুয়ানান সিফুড বাজারের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন। আসলে এ বিষয়টি বিদেশি জনগণের নয়, অনেক চীনাদের কাছেও খুব আকর্ষণীয়। তিনি হুয়ানান সিফুড বাজার তুলে ধরার ক্ষেত্রে খুব আন্তরিক ও মজার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেন। ফলে এ তথ্যচিত্রের দৃশ্য-বিন্যাস জাতিগত পরিমণ্ডল ছাড়িয়ে যায়। জীবনের খুঁটিনাটি বিষয় ক্যামেরার মাধ্যমে চিত্রায়িত করায় অধিকাংশ লোক এতে মুগ্ধ হন।

অনেক কষ্টে ভোগা উহানের কাছে আমরা প্রত্যেকেই পরিচালকের মতো এক একজন মানুষ। তবে যে ঘটনা উহানে ঘটেছে, তা আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত্ নয়। তথ্যচিত্রে চুয়াং উয়েন নামে একটি মেয়ে হচ্ছে একটি হাসপাতালের অভ্যর্থনা কর্মী। এ মহামারীতে তিনি নিজের দাদাকে হারিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি এই ঘটনা রেকর্ড করতে চাই। কারণ আমি তা ভুলে যেতে চাই না।

'Long Time No See, Wuhan' শীর্ষক তথ্যচিত্রে আমরা বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণীর উহানবাসীকে দেখেছি। তাদের মধ্যে রয়েছেন: ডেলিভারি, রেস্তোরাঁর মালিক, প্রতিষেধক দ্রব্য উত্পাদন করা ব্যবসায়ী, মহামারী প্রতিরোধে প্রথম ফ্রন্টে কর্মরত নার্স এবং লেইশেনশান হাসপাতালের নির্মাণকাজে অংশগ্রহণ করা শ্রমিক। তাদের ভিন্ন অভিজ্ঞতা ও দুঃখ, বেদনা ও সুখ আছে। দর্শকেরা এক ঘণ্টার মধ্যে একটি প্রকৃত উহান দেখতে পান।

তথ্যচিত্র আমরা দেখি যে, যারা সাক্ষাত্কার দিয়েছেন তাদের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক স্থাপন করেছেন পরিচালক। জনগণকেন্দ্রিক তথ্যচিত্রের সবচেয়ে সুবিধা হলো সাক্ষাত্কারদাতাদের মন খুলে কথা বলতে দেওয়া। কেবল সাক্ষাত্কারদাতা খোলা মন দিয়ে পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই প্রামাণ্যচিত্র প্রাণবন্ত হয়। ক্যামেরার পিছনে থাকা পরিচালকের চেয়ে এ বিষয়টি একটু ভিন্ন। তাকেউচি রিও মাঝেমাঝে ক্যামেরার সামনে উপস্থিত হন। তিনি স্বল্প সময়ের মধ্যে সাক্ষাত্কারদাতাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেন।

যেমন লি চিয়ে নামে লেইশেনশান হাসপাতালের নির্মাণ কাজে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকের বাসায় শুটিং করার সময় তাকেউচি রিও নিজেকে পরিচালক নন,বরং লি চিয়ের বন্ধু হিসেবে পরিচয় দেন। লি চিয়ের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর তার সঙ্গে দেয়ালে ঝুলন্ত বিয়ের ছবি নিয়ে গল্প করেন তাকেউচি রিও।

মহামারী প্রতিরোধের প্রথম ফ্রন্টে কর্মরত নার্সের বাসায় অতিথি হিসেবে যাওয়ার সময় পরিচালক আপেল খেতে খেতে নার্সের সঙ্গে গল্প করেন। তিনি আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সাক্ষাত্কারদাতাদের সঙ্গে সমান সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেন। আড্ডার সাথে সাথে তথ্যচিত্রের লক্ষ্য অর্জন হয়ে যায়।

তথ্যচিত্রে পরিচালক তাকেউচি রিও খুঁটিনাটি তথ্যের মাধ্যমে বিভিন্ন চরিত্রের ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন। সাধারণভাবে বলা যায়,চলচ্চিত্র বা টিভি নাটকের তুলনায় তথ্যচিত্রের নাটকীয় দ্বন্দ্বের ভাবটা একটু দুর্বল। তাই তথ্যচিত্রে একঘেয়েমি এড়াতে খুঁটিনাটি বিস্তারিত তথ্য প্রদর্শন করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

'Long Time No See, Wuhan' তথ্যচিত্রে আমরা প্রধান চরিত্রে অংশ নেওয়া ১০জনের গল্প শুনি। তা ছাড়া, উহান শহরের ট্যাক্সি চালককে দেখি,পার্কে শরীরচর্চা করা বৃদ্ধদের গান শুনি। এসব বিস্তারিত তথ্যে উহানবাসীদের আশাবাদী চরিত্র প্রকাশিত হয়। তাদের মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই যে, উহান শহরে আগের স্বাভাবিক শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে এবং উহাবাসীদের জীবনও স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।

'Long Time No See, Wuhan' শীর্ষক এ তথ্যচিত্রে মহামারীর সময় উহান শহরের একদল সাধারণ লোকের গল্প বর্ণনা করা হয়। এতে সাধারণ লোকের কষ্ট ও ভালোবাসা,দুর্বলতা ও সাহস প্রকাশিত হয়। সাধারণ মানুষের গল্প দেখে আমরা সহজেই মুগ্ধ হতে পারি।

(লিলি/তৌহিদ/শুয়ে)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040