বাংলাদেশে ৮ মার্চ করোনা সংক্রমণের পর থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যুতে শীর্ষে রাজধানী ঢাকা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে এ পর্যন্ত ঢাকায় ৭০ হাজারের মতো মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবি ও আইইডিসিআরের জরিপে দেখা গেছে রাজধানীত কেরোনা আক্রান্ত হয়েছে কমপক্ষে ১৬ লাখ মানুষ। এপ্রিল-জুলাইতে ঢাকার দুই সিটিতে জরিপ চালিয়ে এ দুটি প্রতিষ্ঠান এমন তথ্য তুলে ধরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং দুটি স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের তথ্যের এমন গরমিলকেই সঠিক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য সাগরে ভাসমান বরফখণ্ডের মতো যার বেশিরভাগই দৃশ্যমান নয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যে করোনার বাস্তব পরিস্থিতি প্রতিফলিত হচ্ছে না এটা সবাই মানছেন। আর আইসিডিডিআরবি ও সরকারি প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের জরিপকে প্রকৃত পরিস্থিতির অনেকটা কাছাকাছি মনে করছেন তারা। তাই এ জরিপকে গুরুত্ব দিয়ে করোনা মোকাবেলায় ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
তবে, আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপমহাপরিচালক ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য আর জরিপের ফলাফলে গরমিল অসঙ্গত নয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তথ্য দিয়েছে একটা পরিস্থিতির ওপর। আর জরিপ করা হয়েছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে। তাই ভিন্ন ফলাফল আসা সঙ্গত।
এমনই একটা পরিস্থিতিতে ১২ আগস্ট থেকে নিয়মিত সংবাদ বুলেটিনই বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর কারণ হিসেবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দিয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন যুক্তি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কমে আসায় সংবাদ বুলেটিন না করে প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো হবে। আর স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বললেন, স্বাস্থ্যের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানার পক্ষে একটানা বুলেটিন পাঠ করা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রথমত স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয়ে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু হার কমার তথ্যটি নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। অনেক দিন ধরেই মন্ত্রী এ কথা বলে আসছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন, করোনায় শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও মৃত্যুহার ও শনাক্ত হার কমেনি। মৃত্যুহার গত বেশ কিছু দিন যাবত ১.৩২ শতাংশে রয়েছ। আর পরীক্ষা কমায় শনাক্তে সংখ্যা কমেছে কিন্তু শনাক্ত হার এখনো ২০ শতাংশের ওপরে রয়েছে। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা ছাড়া একটা তৈরি বুলেটিন পড়ার মতো কেউ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নেই এমন বক্তব্য ধোপে টেকে না।
মহামারি পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে স্বাস্থ্য বুলেটিন বন্ধ করে দেয়াকে ভুল পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বরাবর বলে আসছেন, করোনা মহামারি প্রতিরোধে তথ্যের ভূমিকা খুবই গুরত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য বুলেটিন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরাসরি তথ্যপ্রাপ্তিতে বিঘ্ন ঘটবে। এ ছাড়া এর ফলে নানারকম বিভ্রান্তিও ছড়াতে পারে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বিশেজ্ঞদরে সঙ্গে একমত পোষণ করেন। বুলেটিন বন্ধ ঘোষণার পরপরই তিনি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন এতে করে করোনা সতর্কতা নিয়ে মানুষের মাঝে শৈথিল্য দেখা দেবে এবং নানা গুজবের ডালপালা ছড়াবে। তিনি সপ্তাহে অন্তত দুদিন বুলেটিন চালু রাখারও পরামর্শ দেন।
স্বাস্থ্যের নয়া ডিজি অবশ্য বলেছেন, নতুন পরিচালক নিযুক্ত হলে পুনরায় তারা বুলেটিন চালু করবেন। দেশের মানুষের এখন সে অপেক্ষা করা ছাড়া আর গত্যন্তর নেই।
ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।