নভেল করোনাভাইরাস মহামারী দেখা দেওয়ার পর থেকেই ভাইরাসকে 'রাজনীতিকরণ' করার অপচেষ্টা করে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজনীতিবিদ। হু ভাইরাসের নাম দিয়েছে এবং স্পষ্টভাবেই বলেছে যে, 'উহান এই মহামারীর উত্স নয়'। কিন্তু মার্কিন নেতৃবৃন্দ এই ভাইরাসকে 'চীনা ভাইরাস' বা 'চায়নিজ কুংফু ভাইরাস' নামে ডেকেছেন ও এখনও ডাকছেন। এটা আসলে 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' সৃষ্টির মার্কিন প্রচেষ্টা। এই প্রক্রিয়ায় রাজনীতি, আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা, বৈজ্ঞানিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও মানবিক বিনিময়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু'দেশের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক সৃষ্টি হচ্ছে। এটা আসলে ভাইরাসের মোকাবিলায় নিজের ব্যর্থতা চীনের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার মার্কিনি অপচেষ্টা মাত্র।
মার্কিন বিশ্লেষকের মতে, বর্তমানে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে আগামী ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখেই মার্কিন সরকার-প্রধান চীন-বিরোধী অবস্থান দৃঢ়তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সবকিছুর দায় চীনের ওপর চাপিয়ে তিনি নির্বাচনে জিততে চান। এ জন্য বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নষ্ট করতেও দ্বিধা করছেন না।
মহামারী ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করা। কিন্তু বাস্তবে সেটা দেখা যাচ্ছে না। উল্টো দেশটির একতরফাবাদ ও ভাইরাসকে 'রাজনীতিকরণ' করার প্রয়াস মহামারী মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র নিজেও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে এই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার, প্রতিদিন প্রায় ৮৩০ জন করে মারা গেছেন এ মাসে। এই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ওয়াইটহাউসের ভাইরাস মোকাবিলা গ্রুপের সমন্বয়কারী ডক্টর ডেবোরাহ বার্ক্স বলেন, 'আমি খুব স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, বর্তমানে আমাদের অবস্থা গত মার্চ ও এপ্রিল মাসের চেয়ে অভিন্ন নয়। গ্রাম ও শহরাঞ্চলে ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।" মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর সাবেক মহাপরিচালক বলেন, চলতি বছরের শেষ দিকে গোটা যুক্তরাষ্ট্রে এই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৩ লাখেরও বেশি হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু'র মহাপরিচালক তেদ্রোস আদ্হানম বলেছেন, 'চলতি সপ্তাহে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিশ্বব্যাপী ২ কোটি হবে এবং এতে মৃতের সংখ্যা ৭ লাখ ৫০ হাজারে পৌঁছাবে। এ সংখ্যার পেছনে বিশাল দুঃখ ও যন্ত্রণা থাকবে।'
যুক্তরাষ্ট্রের এক সর্বশেষ তদন্ত জরিপে বলা হয়, ৪৬ শতাংশ মানুষ মনে করেন, এই ভাইরাসের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষতা অন্যান্য দেশের চেয়ে দুর্বল।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনৈতিক সত্ত্বা। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এর কম-বেশি সম্পর্ক রয়েছে। মার্কিন অর্থনীতির গভীর নিম্নমুখী প্রবণতা নিঃসন্দেহে বৈশ্বিক বাণিজ্য ও বৈশ্বিক শিল্প চেইনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এটি বিশ্বের অর্থনীতি এবং অর্থ বাজারের জন্য একটি ধারণাতীত ক্ষতির কারণ। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)