গত কয়েক বছরে চীনের ১৪টি চরম দরিদ্র এলাকার ২০টিরও বেশি চরম দরিদ্র গ্রাম পরিদর্শন করেন প্রেসিডেন্ট সি। বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় গ্রামবাসীদের বার্ষিক আয় কতো, তাদের টয়লেট পরিষ্কার কি না, চিকিত্সার খরচ সরকারের কাছ থেকে কতোটা ফেরত পেয়েছেন—এসব বিষয় বিস্তারিতভাবে তাদের কাছ থেকেই জানার চেষ্টা করেছেন প্রেসিডেন্ট সি।
চলতি বছরের মে মাসে তিনি শানসি প্রদেশের তাথুং শহর পরিদর্শনে যান। গাড়ি থেকে নেমে তিনি সোজা চলে যান কৃষিক্ষেতে। সেখানে কর্মরত কৃষকদের সাথে কথাবার্তা বলেন সি। তিনি তাদের বার্ষিক আয় নিয়ে প্রশ্ন করেন। সবাই সি-কে এই বলে উত্তর দেন যে, সিট্রন ডে লিলির উত্পাদন বাড়ায়, প্রতিটি দরিদ্র পরিবারের বার্ষিক আয় ১০ হাজার ইউয়ানেরও বেশি। তাদের কথা শুনে সি হাসিমুখে বলেন, সিট্রন ডে লিলি শিল্প উন্নয়নের সম্ভাবনা সুউজ্জ্বল। এ কৃষিক্ষেত ও শিল্পের উন্নয়নে আরো বেশি চেষ্টা করতে হবে, যাতে সিট্রন ডে লিলি চাষ করে স্থানীয় গ্রামবাসীদের দারিদ্র্যবিমোচন বাস্তবায়িত হতে পারে।
বিভিন্ন দরিদ্র অঞ্চল পরিদর্শনের পর দারিদ্র্যবিমোচন লক্ষ্যমাত্রার বাস্তবায়নে আশাবাদী প্রেসিডেন্ট সি। পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, স্থানীয় গ্রামবাসীদের দারিদ্র্যমুক্তির পর তা ধরে রাখা এবং তারা যাতে আবার দরিদ্র না-হয়, তা নিশ্চিত করা আরও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দারিদ্র্যবিমোচন চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা নয়, গ্রামবাসীদের সুন্দর জীবন বাস্তবায়ন অতি গুরুত্বপূর্ণ।
এমন গল্প আরও অনেক রয়েছে। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ছোংছিং শহরের তুচিয়া জাতির অধ্যুষিত এলাকার হুয়াসি গ্রাম পরিদর্শন করেন প্রেসিডেন্ট সি। পিচ্ছিল পাথুরে রাস্তা বেয়ে তিনি দরিদ্র থান তেং চৌ'র বাড়িতে যান। বাড়িতে পৌঁছে তিনি লেপ মোটা কি না এবং খাদ্যশস্যের মজুত যথেষ্ঠ কি না, জানতে চান। পরে দরিদ্র গ্রামবাসীদের সাথে বসে কথাবার্তা বলেন। আসলে, ২০১৮ সালে জনাব থান তেং চৌ শরীরের অসুস্থতার কারণে দরিদ্র সীমার নিচে চলে যায় পরিবারটি। পরে স্থানীয় সরকারের সহায়তায় পরিবারটির স্বাভাবিক জীবন মোটামুটি নিশ্চিত হয়। তাদের জীবনমান নিশ্চিত করতে চিকিত্সা-খরচ ও পরিবারের আয়ের হিসাব করেন প্রেসিডেন্ট সি। তিনি জানতে চান: পরিবারের জন্য নির্ধারিত ভর্তুকি কতো? কৃষিক্ষেত ভাড়া থেকে আয় কতো? চিকিত্সার ব্যয় কতো? কন্যা ও ছেলের খোরপোষ কতো? ইত্যাদি।
জনাব থানের পরিবারের আর্থিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে জানতে পেরে আনন্দের সাথে সি বলেন, এমন নীতিমালা জনগণের জন্য কল্যাণকর; আমরা তা অব্যাহত রাখবো।
গ্রামাঞ্চলের টয়লেট ইস্যুও সি'র মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে যখন ইনার মঙ্গোলিয়ান প্রতিনিধিদের সাথে সেমিনারে বসেন, তখন সি টয়লেট সংস্কার নিয়ে অনেক প্রশ্ন করেন।
গত কয়েক বছরে দরিদ্র গ্রামাঞ্চল পরিদর্শনের সময় টয়লেট সংস্কারসম্পর্কিত তথ্য জেনে নিতে ভোলেননি সি। যেমন, চীনের চিয়াংসু প্রদেশের ইয়োমাংওস্যু গ্রাম, শেনশান গ্রাম, ইনারমঙ্গোলিয়ার মাআনশান গ্রাম, ইত্যাদি পরিদর্শনের সময় তিনি সেসব গ্রামের টয়লেট পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। আসলে চীনের গ্রামাঞ্চলের ৮০ শতাংশ সংক্রামক রোগ টয়লেট থেকে ছড়ায়। তাই টয়লেট সংস্কারের প্রতি মনোযোগ দেন সি।
তা ছাড়া, দরিদ্র গ্রামের কৃষকদের জীবনমান সম্পর্কে জানতেও তিনি আগ্রহী। যেমন, ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে চীনের হুনান প্রদেশের সিয়াংসি জেলার শিবাতুং গ্রাম পরিদর্শন করেন সি। এ গ্রাম চরম দরিদ্র এলাকাগুলোর অন্যতম। পরিদর্শনকালে সি বহু চরম দরিদ্র পরিবারের খোঁজ-খবর নেন। তখন গ্রামের কর্মকর্তারা সিকে বলেন, দরিদ্র হওয়ার কারণে গ্রামের অনেক পুরুষ বিবাহ করতে পারছেন না। তখন সি সবাইকে উত্সাহ দিয়ে বলেন, দারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্য বাস্তবায়নের নিরলস প্রচেষ্টা চালাতে হবে। যখন জীবনমান উন্নত হবে তখন অবশ্যই বিয়ে করা যাবে। সবাই তাঁর কথা শুনে খুশি হয়। ৩ বছর পরও এ গ্রামের পুরুষদের সমস্যার কথা মনে রাখেন সি। ২০১৯ সালে তিনি আরেকবার এ গ্রাম পরিদর্শন করেন। ৬ বছরের মধ্যে গ্রামের মাথাপিছু আয় ২০১৩ সালের ১৬৬৮ ইউয়ান থেকে ২০১৯ সালের ১৪ হাজার ৬৬৮ ইউয়ানে উন্নীত হয়; গ্রামের ৩০ জন পুরুষ ততোদিনে বিয়ে করেছেন।
চীনাদের কাছে ছুটিতে গ্রামে গিয়ে আরামদায়ক সময় কাটানো অনেক জনপ্রিয় ব্যাপার। তাই গ্রামের হোস্টেল ও রেস্তোরাঁ উন্নয়ন করা স্থানীয় গ্রামবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। ২০১৫ সালের জুন মাসে চীনের কুইচৌ প্রদেশের জুনই জেলার হুয়ামাও গ্রাম পরিদর্শন করেন প্রেসিডেন্ট সি। এ গ্রাম অতীতকাল থেকে চরম দরিদ্র গ্রাম। তবে পরে হোস্টেল চালু করার মাধ্যমে অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে। গ্রামবাসী ওয়াং জি ছিয়াংয়ের হোস্টেলে গিয়ে সি বিস্তারিতভাবে তাদের অবস্থার খোঁজখবর নেন। তিনি জানতে চান: শহর থেকে গ্রামে আসা পর্যটকদের সংখ্যা বেশি কি না, হোস্টেলের ব্যবসা কেমন হচ্ছে, ইত্যাদি।
স্থানীয় গ্রামবাসীরা সরকারের বিভিন্ন সুবিধাজনক নীতিমালার ব্যাপক প্রশংসা করেন। এ সম্পর্কে সি সবাইকে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিমালা ভালো কি না, গ্রামবাসীদের প্রতিক্রিয়া থেকে তা বোঝা যায়। অনেককে খুশি করতে পারলে তা অবশ্যই ভালো নীতি। এই নীতি চালু রাখতে হবে। যদি কোনো নীতির কারণে কষ্ট পায়, তা বাদ দিতে হবে ও নতুন নীতি গ্রহণ করতে হবে। তিনি সবাইকে উত্সাহ দিয়ে বলেন, সুখী জীবন পরিশ্রমের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। দরিদ্রতা ভয়ঙ্কর ব্যাপার নয়। আশা নিয়ে কাজ করে গেলে যে-কোনো সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব।
৫ বছর পর হুয়ামাও গ্রামের অবস্থা এখন অতুলনীয়। ২০১৯ সালে এ গ্রামের পর্যটন-আয় ছিল মোট ৬০ কোটি ইউয়ান; মাথাপিছু আয় ২০১৫ সালের ৭০০০ ইউয়ান থেকে ১৭ হাজারেরও বেশি ইউয়ানে উন্নীত হয়েছে। অনেক গ্রামবাসী হোস্টেল ব্যবসা চালু করার মাধ্যমে সুখী জীবনযাপন করতে পারছেন।
সুপ্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা অনুষ্ঠানের সময় শেষ হয়ে এলো। সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারেন বা মিস করেন, আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn,আমাদের যোগাযোগ ইমেল ঠিকানাben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn
তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)