অর্ধবর্ষ পর খুলেছে চীনের সিনেমা হল
  2020-08-06 15:04:04  cri

চলতি বছর নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে রেস্তোরাঁ, পরিবহন ও পর্যটনসহ অনেক শিল্প গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পের মধ্যে অন্যতম হলো চলচ্চিত্র শিল্প।

গত ২৩ জানুয়ারি চীনের ৭টি চলচ্চিত্র মুক্তি না দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। ২৭ মার্চ চীনের জাতীয় চলচ্চিত্র ব্যুরো জরুরি ভিত্তিতে সব সিনেমা হল অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। তারপর আরেকটি মাস পার হয়ে যায়। রেস্তোরাঁ, ভ্রমণ ও পরিবহন ধীরে ধীরে চালু হতে থাকে। চীনের ২০টিরও বেশি প্রদেশের স্কুলগুলো ধাপে ধাপে খুলে দেওয়া হয়। তবে সিনেমা হলের দরজা তখনও বন্ধ থাকে।

১৬ এপ্রিল থিয়েনচিন শহরে ওএসজিএইচ সিনেমাসের অধীনস্থ একটি সিনেমা হল আনুষ্ঠানিকভাবে চিরতরে বন্ধ করার ঘোষণা আসে। সিনেমা হলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা অসহায় কণ্ঠে বলেন, পরিচালনার খরচ ও মহামারী এই দুটি চাপে তারা সিনেমা হল বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

এ খবর বের হওয়ার পর অনেকেই বেশ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। ২০১৯ সালে এই সিনেমা হল চীনের বক্সঅফিসে ১ কোটি ৭১ লাখ ৮০ হাজার ইউয়ান রেনমিনপি আয় করে। সারা দেশের দশ হাজারেরও বেশি সিনেমা হলের মধ্যে এই সিনেমা হলটি ছিল ৫৬৬তম স্থানে। কিন্তু এত শক্তিশালী একটি সিনেমা হল মাত্র তিন মাস কোনও আয় করতে না পারায় শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেল! এতে চীনের চলচ্চিত্রে অচলাবস্থা তৈরি হয়।

এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, ২০১৯ সালে সারা দেশের সিনেমা হলে নতুন ৮৮৪৩টি স্ক্রিন বাড়ানো হয়েছিল। সে সময় মানুষ কল্পনাও করতে পারে নি যে, ২০১৯ সালের প্রবৃদ্ধি ২০২০ সালে বিশাল ঝামেলার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চীনের ২০৩৮টি সিনেমা হল নিবন্ধের তালিকা থেকে তাদের নাম সরিয়ে নিয়েছে।

২৭ মার্চ পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিলো ২২৬৩টি। অন্যভাবে বললে, মাত্র ৬ মাসের মধ্যে মোট সাতশ'টি সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে।

সম্প্রতি দারুণ একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। অর্ধবর্ষ পর দর্শকেরা ফের সিনেমা হলে প্রবেশ করেছেন।

২০ জুলাই রাত ১২টায় চীনের বেশ কয়েকটি জায়গার সিনেমা হলগুলো আবারও খুলে দেওয়া হয়।

জাতীয় চলচ্চিত্র ব্যুরোর ১৬ জুলাইয়ের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, মহামারীর নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের সিনেমা হলগুলোর বিভিন্ন প্রতিরোধক ব্যবস্থা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের শর্তে ২০ জুলাই থেকে তা আবারও খুলে দিতে পারে।

এরপর কয়েক দিনের মধ্যে শাংহাই, চ্যচিয়াং, হুনান, সিছুয়ান ও কুয়াংতোংসহ বিভিন্ন জায়গার কিছু আংশিক সিনেমা হলের প্রস্তুতি কাজ শেষ হয় এবং দর্শকদের উপস্থিতি দেখা যায়।

সিনেমা হল আবার খোলার সেই দিনে দুটি নতুন চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। সেগুলো হলো 'a first farewell' এবং 'ছুই ছান শিং হুও'। দুটি নতুন চলচ্চিত্র ছাড়া, সিনেমা হল খোলার দিনে বেশ কিছু পুরানো চলচ্চিত্রও প্রদর্শিত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের পাশাপাশি, বেশ কয়েকটি ক্ল্যাসিকাল চলচ্চিত্র পুনঃপ্রদর্শিত হয়।

ছয় মাস পর খুলে দেওয়া সিনেমা হলের টিকিটের দাম কেমন ছিল?

জানা গেছে, টিকিট বিক্রয়ের প্লাটফর্ম ও সিনেমা হলগুলো ডিসকাউন্ট সুবিধা দিয়েছে। ১৮ জুলাই রাতে চীনের বিখ্যাত উপস্থাপক ওয়াং হান লাইভ অনুষ্ঠানে হাজার হাজার কুপন বিতরণ করেন। দর্শকদের কেউ কেউ মাত্র এক চিও রেনমিপি দিয়েও একটি টিকিট কিনেছেন।

তা ছাড়া, অনেক সিনেমা হলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, এবারে সিনেমা হল আবার খোলা দেশের চলচ্চিত্র ও টিভি নাটক শিল্পের জন্য তাত্পর্যপূর্ণ। এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তারা টিকিটের দাম কমিয়েছে; যাতে সিনেমা হলে আসার ক্ষেত্রে আরো বেশি দর্শকের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করা যায়।

১৬ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত সিনেমা হলগুলো খুলতে মাত্র কয়েক দিন সময় লেগেছে। বস্তুত, সিনেমা হলের কর্মকর্তারা এজন্য কয়েক মাস ধরে প্রস্তুতি নিয়েছেন।

ওএসজিএইচ সিনেমা হলের হাংচৌ লাইফু শাখার পরিচালক জনাব খ্য বলেন, দেশে মহামারী পরিস্থিতি ভালো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা প্রতিরোধক দ্রব্য কেনা এবং পরিষ্কার করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেন। সিনেমা হলে তারা বিশেষ করে টিকিটের গেট স্থাপন করেন। দর্শকেরা চলচ্চিত্র উপভোগের আগে প্রথমে রেজিস্টার করেন, শারীরিক তাপমাত্রা পরীক্ষা করেন এবং সেলফোনে স্বাস্থ্যকোড দেখান। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, প্রত্যেককে আসল নাম দিয়ে টিকিট কিনতে হবে। কর্মকর্তারা জানান, আরো কঠোর প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বর্তমানে সারা দিনে প্রদর্শনের সংখ্যা আগের তুলনায় মাত্র অর্ধেকে নেমে আসে। কারণ একটি চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পর কমপক্ষে ৩০ বা ৪০ মিনিট সময় দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হয়।

সিনেমা হল আবার খোলার প্রথম দিনে দর্শকদের টিকিট কেনার আগ্রহ দেখে চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত লোকেরা বিস্মিত হয়েছেন। ওএসজিএইচ সিনেমা হলের হাংচৌ লাইফু শাখার পরিচালক জনাব খ্য বলেন, পুরানো চলচ্চিত্র প্রদর্শনের কারণে দর্শকদের আগ্রহ নিয়ে আমাদের বেশি প্রত্যাশা ছিল না। তবে আশেপাশের বন্ধুরা আমাকে বলেন, দর্শকদের কি চলচ্চিত্র দেখানো হচ্ছে, তা আসলে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তারা অর্ধেক বছর পর আবারও সিনেমা হলে চলচ্চিত্র দেখতে পারছেন।

সত্যিই, অর্ধেক বছর পর সিনেমা হল খোলা এবং দর্শকদের প্রত্যাশা চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্তদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেউ কেউ এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলেন যে, গোটা সিনেমা হলের ৩০ শতাংশ উপস্থিতির হার এবং কম নতুন চলচ্চিত্র প্রদর্শন করে কি সিনেমা হলগুলো টিকে থাকতে পারবে?

ওএসজিএইচ সিনেমা হলের হাংচৌ লাইফু শাখার পরিচালক জনাব খ্য বলেন, ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টির পর সবসময় সূর্যের আলো দেখা যায়। মহামারীর কারণে সিনেমা হল বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে আবারও খুলে দেওয়া পর্যন্ত তাদের কোনও কর্মী পদত্যাগ করেন নি। বিশেষ করে হাংচৌ'র সামগ্রিক ভোগের মান তুলনামূলকভাবে উচ্চ পর্যায়ের। আমরা সবাই নিজের পদে বহাল থাকতে চাই। তাই আমি আরো ভালোভাবে কাজ চালিয়ে যেতে চাই এবং তাদের চাহিদা পূরণ করতে চাই। (লিলি/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040