কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে তৈরি টানেলের কর্ণফুলী টানেলের বাম সারির কাজ সম্পন্ন করেছে চীনা কোম্পানি
  2020-08-04 16:03:34  cri

৮ অগাস্ট ভোরবেলা বাংলাদেশের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে তৈরি টানেল প্রকল্পের কর্ণফুলী টানেলের বাম সারির কাজ সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে বিদেশে চীনের উদ্যোগে তৈরি প্রথম বৃহদাকারের টানেল প্রকল্পের লক্ষ্য বাস্তবায়িত হয়েছে। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় এ বিষয়ে শুনবেন একটি প্রতিবেদন।

চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানির (সিসিসিসি) উদ্যোগে বাংলাদেশে এই প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। সিসিসিসি কোম্পানি সিআরবিসি বা চায়না রোড এন্ড ব্রিজ কর্পোরেশনের মাধ্যমে এ নির্মাণকাজের সম্পন্ন করছে। চীনের আমদানি-রফতানি ব্যাংক শতভাগ অর্থায়ন করেছে। শিল্ড সেকশনের দুই-টিউব এবং চার-লেন বিশিষ্ট নকশার এ কর্ণফুলী টানেল চট্টগ্রাম শহরকে কর্ণফুলী নদীর অপর পাড়ের সঙ্গে যুক্ত করে। এ বহুমুখী রোড টানেল প্রকল্পটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নদীর তলদেশে স্থাপিত টানেল এবং চীনা কোম্পানির তৈরি প্রথম বড়-ব্যাস বিশিষ্ট নদীগর্ভস্থ টিবিএম টানেল।

বাংলাদেশের প্রথম টানেল প্রকল্প এবং বিদেশে চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বড় আকারের টানেল প্রকল্প হিসেবে বাংলাদেশ সরকার কর্ণফুলী নদীর তলদেশের টানেল প্রকল্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল' নামকরণ করেছে। বাংলাদেশে এ প্রকল্প নির্মাণের ফলে চট্টগ্রামের পরিবহন উন্নয়ন এবং বাংলাদেশের আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাপক বেগবান হবে। চীনের জন্য এ প্রকল্প হলো বিদেশে চীনের টানেল নির্মাণের নতুন মাইলফলক। বাংলাদেশে নিযুক্ত সিআরবিসি'র কার্যালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা পাং মিং বলেন,

'বাংলাদেশ এই টানেলের নির্মাণের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীর পূর্ব তীরের উন্নয়ন বাস্তবায়নের আশা পোষণ করে। টানেলের নির্মাণকাজের মাধ্যমে একটি শহর ও দুটি জেলার উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণ হবে।'

'শিল্ড মেশিন' হলো এ টানেলের মূল যন্ত্র। বড় ব্যাসের 'শিল্ড মেশিন' সিআরবিসি'র স্বতন্ত্র গবেষণায় তৈরি করা হয়েছে। ভূগর্ভস্থ টানেল নির্মাণের সময় বিভিন্ন বাধা আসতে পারে। সুষ্ঠুভাবে ও নিরাপদে নির্মাণকাজ নিশ্চিত করতে চীনের কর্মীরা অনেক পরিশ্রম করছেন। প্রকল্পের মহা পরিচালক লি চেং বলেন,

'নানা প্রযুক্তিগত প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে সিআরবিসি বিশেষজ্ঞরা একটি দল গঠন করে। প্রকল্পের বিশেষজ্ঞদল প্রযুক্তিগত সমর্থন দেয়। আমরা সুনির্দিষ্ট নির্মাণ পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি এবং টানেলের প্রতিটি পদক্ষেপ বিশ্লেষণ করেছি। আমরা প্রকল্পের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী স্বতন্ত্রভাবে যে 'শিল্ড মেশিন' তৈরি করেছি তা হলো প্রযুক্তিগত সমস্যা সমাধানের অন্যতম যন্ত্র।'

টানেল প্রকল্প নির্মাণ প্রক্রিয়ায় প্রথম লাইনের নির্মাণ শ্রমিকরা বিরাট ত্যাগ স্বীকার করেন। শুধু তাই নয়, চীনের অভ্যন্তরীণ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও শক্তিশালী আস্থা যুগিয়েছে। এই মেশিন টানেলে অব্যাহতভাবে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে রিং সেগমেন্ট সুশৃঙ্খলভাবে স্থাপন করতে পারে। গোটা প্রকল্পে ২০ হাজারেরও বেশি রিং সেগমেন্ট লাগবে এবং একেকটি রিং সেগমেন্টের ওজন প্রায় ১৩ টন। এসব রিং সেগমেন্ট আগে চীনে তৈরি করে ভালোভাবে প্যাকিং করে জাহাজ দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। বাংলাদেশে সিআরবিসি'র মহাপরিচালকের সহকারী পোং তেং চি বলেন,

'আমাদের এ প্রকল্পের জন্য ব্যবহৃত রিং সেগমেন্ট চীনের চেন চিয়াং শহরে উত্পাদন করা হয়। পরিবহন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য প্যাকেজের ক্ষেত্রে আমরা অনেক কাজ করি।'

নদীর তলদেশে টানেল প্রকল্পের বাম লাইন দিয়ে চলাচলের আগের রাতে চীনের প্রকৌশলীরা সারা রাত জেগে কাজ করেন। তারা রিয়েল-টাইম মনিটরিং ডেটার ওপর নজর রাখেন। বাম লাইনের চলাচল সুষ্ঠু হওয়ার পর বিশ্রাম বা উদযাপন না করে তারা নতুন যাত্রা শুরু করেন। চ্যানেলের ডান লাইনের প্রকল্পের দিকে মনোযোগ দেন তারা। বাংলাদেশে সিআরবিসি'র দায়িত্বশীল কর্মকর্তা পাং মিং বলেন,

'বাম সারি দিয়ে চলাচল চালু হওয়ার অর্থ প্রকল্পের অর্ধেক কাজ শেষ হওয়া। আগের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে স্থানীয় ভূগর্ভস্থ পরিবেশ নিয়ে আমাদের জানাশোনা আরও গভীর হয়েছে, যা ডান লাইনের নির্মাণ কাজে সহায়ক হবে।'

যারা বাংলাদেশের কর্ণফুলী নদীর তলদেশের টানেল প্রকল্পে অংশ নিচ্ছেন তাদের গড় বয়স ৩৫ বছর। বয়সে তরুণ হলেও বিদেশে গিয়ে বৈচিত্র্যময় কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করছে তারা। বাংলাদেশের সেতু কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন স্থানীয় গণমাধ্যমে এক সাক্ষাত্কারে বলেন, কর্ণফুলী নদীর টানেল প্রকল্পের মাধ্যমে চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা নিয়ে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন তিনি। ভবিষ্যতে সেতু কর্তৃপক্ষ চীনের সঙ্গে আরও বেশি প্রকল্পে সহযোগিতা চালাবে বলে তিনি জানান।

(লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040