কাপড় বাছাই করা, কাপড়ের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা, ক্রেতার সঙ্গে স্ক্রিনে আলোচনা করা তার নিয়মিত কাজ। তার লাইভ কাপড় বিক্রি কক্ষের আয়তন মাত্র ১০ বর্গমিটার। ছেন মান ক্যামেরার সামনে লাইভের সময় অনেক ব্যস্ত থাকেন। তাঁর উচ্চতা ১৬০ সেন্টিমিটার, ওজন ৬০ কেজি। তিনি তিন ঘণ্টা লাইভে তাকে ৩০টিরও বেশি পোশাক ক্রেতাদের কাছে তুলে ধরতে হয়। মানে মাত্র ৫/ ৬ মিনিটের মধ্যে ছেন একটি কাপড়ের ডিজাইন ও দামসহ বিভিন্ন বিস্তারিত তথ্য দর্শকদের জানাতে পারেন। কাপড় বাছাইয়ের কাজ ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে শেষ করতে হয়।
গত জুন মাসে ছেন মান কুয়াংতোং পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ছেন মান তার সহপাঠীর মতো শিক্ষকতার ঐতিহ্যবাহী চাকরি বেছে নেন নি, বরং একটি লাইভ সংস্থায় যোগ দিয়ে বড় সাইজের নারীদের পোশাক বিক্রির একজন অনলাইন লাইভ বিক্রেতা হিসেবে নাম লেখান।
ছেন মান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে আমি আমার আত্মীয়ের মত্স্য-সংক্রান্ত জিনিসপত্র অনলাইন লাইভে বিক্রি করেছি। তখন আমার মনে হয়েছিল, এ পেশার ভবিষ্যত্ খুব উজ্জ্বল। আর আমি আসলে নারীদের পোশাক-আশাক সম্পর্কে গভীর অনুরাগী। তাই বলা যায়, আমি অনেক আগে থেকেই লাইভে পণ্য বিক্রির উপস্থাপিকা হতে চেয়েছিলাম।
ছেন মানের বাছাই একদম সঠিক। গত দুই বছরে চীনে অনলাইন লাইভ কেনাকাটা দ্রুত উন্নত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯ সালে চীনে অনলাইন লাইভ ব্যবসা শিল্পের মোট পরিমাণ ৪৩৩.৮ বিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছে। চলতি বছর এই শিল্প আরও সম্প্রসারিত হয়েছে। ভাইরাসের মহামারির কারণে অনলাইন লাইভের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে।
শুরুর দিকে, ছেন মান মনে করতেন তার ফিগার একটু মোটা, সাধারণত লাইভ উপস্থাপিকার ফিগার অনেক স্লিম হয়। ছেন মান বলেন, তখন কোম্পানিতে সাক্ষাত্কার দেওয়ার সময় আমি আসলে অনেক উদ্বিগ্ন ছিলাম। তবে আমি সরাসরি এবং আন্তরিকভাবে নিজের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো জানিয়েছিলাম। কোম্পানির প্রধান আমার কথা শুনে অনেক খুশি হয়েছিলেন। যে কোম্পানিতে ছেন মান চাকরির জন্য সাক্ষাত্কার দিন, তা ছিল একটি লাইভ স্ট্রিমিং সংস্থা। ওই কোম্পানির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা ছেন জুয়ান জুয়ান সাংবাদিকদের বলেন, চীনের কুয়াংতুং প্রদেশে নারীদের বড় সাইজের পোশাক তৈরির কারখানা আছে। সেখানে তার মতো উপস্থাপিকার খুব প্রয়োজন। ছেন মানের মতো মেয়েরা আমাদের জনপ্রিয় উপস্থাপিকা।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করে তৃতীয় দিনে, ছেন মান কোম্পানিতে যান এবং আনুষ্ঠানিকভাবে লাইভ উপস্থাপনা শুরু করেন। প্রতিদিন ছয় ঘণ্টা লাইভে পোশাক বিক্রি করেন। বিকালে নারী পোশাকের লাইভ করেন, রাতে স্ন্যাক্স প্ল্যাটফর্মে লাইভ করেন। এক মাস ধরে এমন কাজ করে ছেন মান লাইভ বেচাকেনায় অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।
ছেন মান বলেন, আমি নিজের ফিগারের অসুবিধা নিয়ে একটি কাপড়ের সুবিধা তুলে ধরি। যেন, এই পোশাক পরলে আপনার মোটা পেট লুকিয়ে রাখা যায়- অনেকটা এ রকম। এভাবে সহজেই অনলাইন ক্রেতাদের সহানুভূতি পাওয়া যায়।
ছেন মান আরও বলেন, লাইভ শেষ করে তিনি অন্য উপস্থাপক-উপস্থাপিকার লাইভ দেখেন। তাদের কথা বলার পদ্ধতি শিখতে আগ্রহী তিনি। তিনি বলেন, এই পেশার জন্য আপনার ভালো পর্যবেক্ষণের সামর্থ্য দরকার। আপনার এই পণ্য কি রকমের মানুষের জন্য উপযোগী, তা বিশ্লেষণ করতে হয়।
কাজের শুরুতে, ছেন মান মনে করেছিলেন যে, স্লিম ফিগার সব তরুণী মেয়ের অভিন্ন স্বপ্ন। নিজের কাজ হলো হল্কা মোটা মেয়েদের জন্য দেখতে স্লিম- এমন সুন্দর কাপড় বাছাই করতে সাহায্য করা। একদিন তিনি লাইভের সময় মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখেন যে, একজন ক্রেতা কমেন্টে লিখেছেন, 'আমাকে একটু সাহায্য করুন, স্তন্যপান করানো মাদের জন্য কি সুন্দর পোশাক আছে? ছেন মান তখন হঠাত্ উপলব্ধি করতে পারেন যে, হ্যাঁ, আমি অনেক বেশি মানুষকে সাহায্য করতে পারি।
ধীরে ধীরে কমেন্টস বক্সে আরও বেশি চাহিদা দেখা যায়। কেউ কেউ লিখেছেন: আমি দেখতে স্লিম এমন কাপড় চাই না, পরতে আরাম ও সুবিধাজনক- এমন কাপড় দেখাতে পারেন? কেউ কেউ লিখেছেন, কোন কোন পোশাকের গুণগতমান ভালো? আস্তে আস্তে ছেন মান আবিষ্কার করেন যে, যদিও স্ক্রিনে ক্রেতাদের মুখ দেখা যাচ্ছে না, তবে তাদের চাহিদা আসলে বিভিন্ন রকমের।
লাইভ ব্যবসার সমৃদ্ধ উন্নয়নের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতাও তুমুল বাড়ছে। উপস্থাপিকাদের জন্য শুধু পণ্য তুলে ধরাই যথেষ্ট নয়, বরং পণ্য বিক্রি করা, বাছাই করা, লাইভ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং দর-কষাকষিও করতে হয়। ছেন মান প্রতিদিনের কাজের মাধ্যমে শিখছেন এবং নিজের যোগ্যতা আরও বাড়াচ্ছেন।
লাইভ ব্যবসার উপস্থাপিকা হওয়ার মাধ্যমে দ্রুত ই-কমার্স পরিচালনার কাঠামো শেখা যায়, ভোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের পদ্ধতিও শেখা যায়। ছেন মান বলেন, লাইভ উপস্থাপিকার পেশা যেন একটি জানালা, আমি এর মাধ্যমে আরও বড় বিশ্ব এবং আরও বেশি সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছি।
ছেন মানের মাও তাকে অনেক সমর্থন দেন। ছেন মান বলেন, মায়ের সমর্থন পেলে আমি ক্যামেরার সামনে আরও আত্মবিশ্বাসী হতে পারি; লাইভে আমার ফলোয়ারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
(শুয়েই/তৌহিদ/সুবর্ণা)