'Purple Sunset' চলচ্চিত্রতে ১৯৫৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তিনটি ভিন্ন তরুণ-তরুণীর ধারাবাহিক জীবন-মৃত্যু পরীক্ষা ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অবশেষে মৈত্রী প্রতিষ্ঠার গল্প তুলে ধরা হয়।
ইয়াং ইউ ফু, চলচ্চিত্রের তিনটি প্রধান চরিত্রের মধ্যে একজন। তিনিই উত্তর পূর্ব চীনে জাপানি বাহিনীর বন্দী শিবির থেকে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া একজন। চলচ্চিত্রটি মূলত তার স্মৃতি থেকেই শুরু হয়।
তার স্মৃতিতে যুদ্ধ সংক্রান্ত অতিরিক্ত কোনও দৃশ্য-বিন্যাস নেই, বন্দী শিবিরের বেদনাদায়ক দৃশ্যও নেই। প্রথমে তিনি অন্য কয়েকজনের সঙ্গে দেয়ালের কোণে দাঁড়িয়ে জাপানি বাহিনীর গুলিতে মারা যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কয়েক সেকেন্ড পর আশেপাশের লোকজন সব মারা যায়। একমাত্র তিনিই সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। যখন তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে জাপানি বাহিনীর দিকে তাকিয়েছিলেন তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের ট্যাঙ্ক কাছাকাছি চলে আসে। সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনারা তাকে উদ্ধার করে। তারপর পথ না জানার কারণে সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনারা গাড়ি চালিয়ে জাপানি শিবিরে প্রবেশ করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং জাপানি বাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। ইয়াং ইউ ফু এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের দু'জন সেনা একসাথে শিবির থেকে পালিয়ে বনে প্রবেশ করেন।
পালিয়ে যাওয়ার পথে তারা ছিউ ইয়ে চি নামে একজন জাপানি ছাত্রীর সঙ্গে পরিচিত হন। তারা ছুই ইয়ে চি'কে পথ দেখানোর নির্দেশ দেন। তবে ছিউ ইয়ে চি তাদেরকে স্থলমাইন লুকানো বনে নিয়ে যান। সোভিয়েত ইউনিয়নের একজন পুরুষ সেনা এতে নিহত হয়। তারপর চলচ্চিত্রের তিনটি প্রধান চরিত্র, ইয়াং ইউ ফু, সোভিয়েত ইউনিয়নের একজন নারী সেনা এবং জাপানি ছাত্রী ছিউ ইয়ে চি'র বিশাল বনভূমিতে পালিয়ে যাওয়ার যাত্রা শুরু হয়।
গোটা চলচ্চিত্রের অধিকাংশ গল্প যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে, অর্থাত্ বিশাল বনভূমিতে ঘটেছে।
চলচ্চিত্রে এ তিনজনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যুদ্ধ পর্যালোচনা করা হয়েছে।
সাধারণ একজন কৃষক হিসেবে ইয়াং ইউ ফু'র মা জাপানি সেনাদের গুলিতে নিহত হন। তার নিজেরও জাপানি সেনাদের হাতে মারা যাওয়ার কথা ছিলো!
না চিয়া, সোভিয়েত ইউনিয়নের একজন সামরিক চিকিত্সক। বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগে তিনি ছিলেন খুবই সাধারণ একজন নারী। তার একটি মেয়ে ছিল। তবে যুদ্ধে তার মেয়ে মারা যায়।
ছিউ ইয়ে চি, উডল্যান্ডের মালিকের মেয়ে। সাধারণ জাপানি মেয়ে হিসেবে সেও জাপানি বাহিনীতে যোগ দেয়। বাহিনীর অফিসার তাকে জানান, মার্কিন জনগণ, ব্রিটিশ জনগণ, চীনা জনগণ, রুশ জনগণ, যাই হোক-না-কেন, তারা জাপানে আক্রমণ করবে। জাপানকে রক্ষা করতে গিয়ে তোমাদের বাবা ও বড় ভাই যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ হারিয়েছেন। তাই তোমাকে মাঞ্চুরিয়া ও জাপান রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে।
ছিউ ইয়ে চি'র মতো আরো অনেক জাপানিই বুঝতে পারেন না যে, জাপানি বাহিনীর অফিসারের কথা কতটা হাস্যকর। তারা উত্তর পূর্ব চীনের ভূমিতে দাঁড়িয়ে অন্য দেশের প্রতি আক্রমণ চালানো বা অন্য দেশের নিরীহ লোককে হত্যা করে যাচ্ছে। তবে তারা বলছে, জাপান আগ্রাসনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে!
ছিউ ইয়ে চি এবং তার মতো অন্যরা কখনওই অফিসারের কথাগুলো বিবেচনা করে নি, তারা শুধু শুনেছে ও মেনে নিয়েছে।
বনে যাওয়ার সময় ইয়াং ইউ ফু একাধিকবার ছিউ ইয়ে চিকে হত্যা করার চেষ্টা করেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি তাকে হত্যার ইচ্ছা বাদ দেন।
ধীরে ধীরে ছিউ ইয়ে চি'র চিন্তা পরিবর্তন হয়। আগে যা তিনি গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন, সে বিষয়ে তিনি সন্দেহ করতে শুরু করেন। সে মনে করে, ছিউ ইয়ে চি তারই মতো মাত্র এক নিরীহ মানুষ। বন থেকে পালিয়ে যেতে যেতে তারা তিন জন বন্ধু হয়ে যায়। চলচ্চিত্রের শেষে দেখা যায় তারা সফলভাবে বন থেকে বের হয়েছে। সেদিন জাপান আত্মসমর্পণের কথা ঘোষণা করে। তবে চিউ ইয়ে চি জাপানি সেনাদের গুলিতে মারা যায়।
এবার আমরা 'Purple Sunset' চলচ্চিত্রের নামকরণ নিয়ে একটু আলোচনা করবো। চলচ্চিত্রে ইয়াং ইয়াং ইউ ফু এমন একটি কথা বলেছেন, তা হলো সূর্যের রং বেগুনি হয়ে উঠলে সূর্যাস্ত হবে। দ্বিতীয় দিন নতুন উজ্জ্বল সূর্য আবার পূর্ব দিক থেকে উদয় হবে। অবশেষে যুদ্ধ শেষ হবে এবং অবশেষে শান্তি আসবে।