প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নির্দেশনায় চীনের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা প্রতিরোধক গল্প
  2020-07-27 14:24:30  cri

 


জুলাই মাস থেকে চীনের বহু এলাকায় বন্যার দুর্যোগ দেখা দেয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও একই অবস্থা। বন্যার দুর্যোগে অনেক চীনা নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের ২৪টি প্রদেশ ও শহরের ২ কোটি ৩৮ লাখ ৫৭ হাজারেরও বেশি মানুষ দুর্যোগকবলিত হয়েছেন এবং জরুরি অবস্থায় ২০ লাখ ৩৯ হাজার লোককে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এ সম্পর্কে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দুর্যোগ প্রতিরোধ করার সাথে সাথে স্থানীয় বাসিন্দাদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করতে হবে, জনগণের জীবনের নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রাখতে হবে।

সম্প্রতি সিনহুয়া বার্তা সংস্থার সংবাদদাতা বিভিন্ন বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি দেখেন, বিভিন্ন এলাকার সরকার ও সিপিসি'র কর্মকর্তারা স্থানীয় জনগণকে নিরাপদ এলাকায় স্থানান্তর করেছেন এবং তাদের জন্য অস্থায়ী বাড়িঘর বা তাঁবু নির্মাণ করেছেন।

১৭ জুলাই চীনের ইয়াংসি নদীর উজানে বাঁধ ভেঙে বন্যা সৃষ্টি হয়। আকস্মিক বন্যার দুর্যোগ প্রতিরোধ করার সাথে সাথে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্ধার ও স্থানান্তরের কাজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। চিয়াংসি প্রদেশের বোইয়াং হ্রদের তীরে ছাংচৌ উপজেলার বেইফু গ্রামের ৮৭ বছর বয়সী গ্রামবাসী ছাও শাও নান সবার সাথে নিজের অভিজ্ঞতা ও গল্প শেয়ার করেন। তিনি বলেন, 'আমার জীবনে ৫ বারের মতো বন্যার কারণে বাঁধ ভাঙতে দেখেছি। যুবকালে বন্যার দুর্যোগের কারণে ভিক্ষা করেছি, তবে এবারের বন্যায় কোনো চিন্তা নেই। কারণ, সরকার আমাদের অনেক সহায়তা দেয়।'

স্থানীয় একটি মাধ্যমিক স্কুলে দুর্যোগকবলিত এলাকার গ্রামবাসীদের জন্য অস্থায়ী বাসস্থান নির্মিত হয়েছে। এখানকার ৫৬২ জন গ্রামবাসী ছাংচৌ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে এখানে এসেছেন। স্কুলের ৩২টি ক্লাসরুম তাদের অস্থায়ী বাসস্থানে পরিণত হয়েছে। এখানে বিছানা, লেপ ও প্রসাধনদ্রব্যাদিসহ বিভিন্ন সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। ক্লাসরুমে ফ্যান ও এয়ার কুলারও স্থাপন করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রেসিডেন্ট সি'র নির্দেশনা অনুসারে, বাসিন্দাদের যত্ন নিচ্ছে ও সহায়তা দিচ্ছে। বিভিন্ন অস্থায়ী বাসস্থানে জীবনযাপনের মান নিশ্চিতে নানান পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। যেমন, খাবার, পানি, বিছানা, চিকিত্সাসামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে; গোসলের ব্যবস্থা ও পেশাদার চিকিত্সকদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

চীনের চিয়াংসি প্রদেশের চিউচিয়াং শহরের দুটি প্রাথমিক স্কুলে দুটি অস্থায়ী বাসস্থান স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধক ব্যবস্থাও রয়েছে। যারা এখানে আসেন, তারা সর্বপ্রথমে কিউআর কোর্ড স্ক্যান করে নিবন্ধিত হন। তাদের শরীরের তাপমাত্রাও পরিমাপ করা হয়।

চীনের আনহুই প্রদেশের তিংচি জেলায় নদীর পানি ব্যাপক বেড়েছে। ফলে গ্রামবাসীদের বাড়ি যাওয়ার রাস্তাও ডুবে গেছে। স্যু এলাকার গ্রামবাসীরা জেলার সিপিসি'র কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে শেংলি জেলার এক প্রাথমিক স্কুলে স্থানান্তরিত হয়েছেন। গ্রামবাসী চিন লুং তে বাড়ি ত্যাগ করার সময় অস্থায়ী বাসস্থানের জীবন নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। তবে পরের দিন ঘুম থেকে জেগে তিনি গরম নাস্তা খেতে পেয়েছেন। এ সম্পর্কে শেংলি জেলার সিপিসি'র সম্পাদক ইয়াং খ্য ফেই বলেন, 'এখানকার বসবাসের পরিবেশের সাথে গ্রামের পরিবেশের তুলনা করা যায় না। তবে তাদের নিরাপদে থাকা নিশ্চিতে চেষ্টা করবো।'

চীনের হুনান প্রদেশের লুশি জেলায় একটি প্রাথমিক স্কুলের দুই তলার একটি ক্লাসরুম অস্থায়ী বিশ্রামঘরে পরিণত হয়েছে। রাতের সময় চিকিত্সকরা স্থানীয় গ্রামবাসীদের শরীর পরীক্ষা করেন। এ সম্পর্কে জেলার হাসপাতালের চিকিত্সক হাং চিং ফু বলেন, বাসিন্দাদের যখন কোথায় স্থানান্তর করা হয়, তখন চিকিত্সক পরিষেবাও সাথে সাথে থাকতে হয়।

 

স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় চিয়াংসি প্রদেশের ইয়োংসিউ জেলার হুতুং স্কুলে স্থানীয় গ্রামবাসীদের জন্য অস্থায়ী বাসস্থান নির্মিত হয়েছে। দুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য বন্যা যেন দুঃস্বপ্নের মতো, যথাযথ মানসিক সাপোর্ট না-দিলে সহজেই তারা উদ্বিগ্ন ও ভীত হতে পারেন। তাই বন্যার পর স্থানীয় মনোবিজ্ঞানীরা চিকিত্সকদল গঠন করেন। প্রতিদিন ৬টি অস্থায়ী বাসস্থানের ৮০টি ক্লাসরুমে যাওয়া-আসা করেন তারা; সংশ্লিষ্টদের মানসিক সহায়তা ও পরামর্শ দেন।

টানা কয়েক দিনের তুমুল ঝড়বৃষ্টির কারণে আনহুই প্রদেশের হুংপু জেলায় গুরুতর বন্যা ও জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ জেলার উপ-পরিচালক ছেন আই চেন বলেন, নারী ফেডারেশন ও সিপিসি'র যুব কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরা গত কয়েক দিন ধরেই নিয়মিত অস্থায়ী বাসস্থানে এসে বাচ্চাদের সাথে খেলা করছেন, প্রবীণদের সাথে কথাবার্তা বলছেন, এবং দুর্গত এলাকার নাগরিকদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন।

চীনের চিয়াংসি প্রদেশের বোইয়াং জেলার কুইহু গ্রামের গ্রামবাসী হুয়াং ইয়ু ছিন যদিও এখন অস্থায়ী বাসস্থানে আছেন, তবে কৃষিক্ষেতের চিন্তা তার মাথায়। তিনি বলেন, বন্যা দ্রুত শেষ হলে শরত্কালীন ধান চাষ করা যাবে। এ সম্পর্কে স্থানীয় দারিদ্র্যবিমোচন বিভাগের কর্মকর্তা ছেন চৌ পিং বলেন, স্থানীয় গ্রামবাসীদের খাওয়া-থাকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই বন্যা শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা না-করে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। জেলার সরকারি বিভাগ বন্যা প্রতিরোধক কর্মী আর জীবাণুমুক্তকারী কর্মী নিয়োগ করবে এবং অস্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগও স্থাপন করবে, যাতে দুর্যোগের কারণে বেকার লোকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা যায়।

রাস্তা বিধ্বস্ত ও কৃষিক্ষেত বিলীন হয়েছে। টানা এক মাস চীনের হুপেই প্রদেশে ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় জনগণের জীবনকে প্রথম স্থানে রেখে যত দ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্ট উদ্ধারকাজ ও স্থানান্তরকাজ করা হয়েছে। হুপেই প্রদেশের হুয়াংকাং শহরের থুয়ানফেং জেলার এক গ্রামের এক দমকলকর্মী রাবারের নৌকা চালিয়ে স্থানীয় গ্রামের ৪০ জনেরও বেশি বাসিন্দাকে স্থানান্তরে সহায়তা দেন। ৮ জুন থেকে টানা ৭ দফার বৃষ্টিপাত ঘটেছে হুপেই প্রদেশে। বৃষ্টিপাতের সময় মাসিক ২২ দিনে দাঁড়িয়েছে। ঝড়বৃষ্টির কারণে প্রদেশের মধ্যে নদী ও হ্রদের উচ্চতা অনেক বেড়ে গেছে এবং বহু এলাকায় জলাবদ্ধতা ও ভূমিধস দেখা দেয়।

এ বিপদজ্জনক মুহূর্তে ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ দুর্যোগকবলিত হয় এবং ৬৮ হাজার লোককে স্থানান্তর করতে হয়। তা ছাড়া, ৬ লাখ ৫৩ হাজারেরও বেশি হেক্টর কৃষিক্ষেত বিলীন হয়েছে। প্রবীণ ফাং মে রুং উছাংকে এলাকার একটি প্রাথমিক স্কুলে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি সংবাদদাতাকে বলেন, অস্থায়ী বাসস্থানে বিনা খরচে লেপ, কুইলট, বালতিসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া গেছে। খাবারও স্কুলের ক্যানন্টিনে খাওয়া হয়। বন্যার অবসান ঘটলে নিজ বাড়ি ফিরে যাবেন তিনি।

আসলে বন্যার প্রতিরোধের আরও অনেক সুন্দর গল্প রয়েছে। চীনারা ঐক্যবদ্ধভাবে বন্যার দুর্যোগ মোকাবিলা করছে। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের কথা অনুসারে বিভিন্ন শহর এ এলাকার সরকার স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনের নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে এবং যথাযথ উদ্ধারকাজ করেছে। ফলে বন্যার মধ্যেও দুর্যোগকবলিতদের থাকা-খাওয়ার চিন্তা করতে হচ্ছে না। আশা করা যায়, চীনাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বন্যা সফলভাবেই মোকাবিলা করা যাবে।

সুপ্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা অনুষ্ঠানের সময় শেষ হয়ে এলো। সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারেন বা মিস করেন, আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn,আমাদের যোগাযোগ ইমেল ঠিকানাben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040