সম্প্রতি চীন, লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের নেতাদের এক অনলাইন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে চীনের তৈরি কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চীন। একই সঙ্গে এই ভ্যাকসিন পেতে যে অর্থ প্রয়োজন হবে তা ঋণ হিসেবে দেশগুলোকে দেওয়ার কথা জানিয়েছে বেইজিং। এ সম্পর্কে মার্কিন ব্লুমবার্গ ও সিএনএন টেলিভিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিস্তিরিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নিয়ে এসব ঘোষণা দিয়েছেন। মেক্সিকো সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, 'বৈঠকে ওয়াং ই বলেছেন, চীন করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করলে বিশ্বের সব দেশ তা পাবে।'
অনলাইন বৈঠকে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তার অংশ হিসেবে চীনের চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের তালিকা তুলে ধরেছেন ওয়াং ই।
চীন এমন এক সময় করোনা ভ্যাকসিনের পাশাপাশি লাতিন ও ক্যারিবীয় দেশগুলোকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিল; যখন বিশ্বের প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির চরম উত্তেজনা চলছে। লাতিন ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে ঐতিহাসিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারের পররাষ্ট্রনীতি কার্যকর রয়েছে।
বর্তমানে করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে লাতিন আমেরিকা। ওই অঞ্চলের ব্রাজিল, মেক্সিকো এবং পেরু বর্তমানে বিশ্বে করোনায় মৃত্যুর শীর্ষ দশ দেশের তালিকায় রয়েছে।
সাও পাওলোভিত্তিক একটি বিজনেস স্কুলের চীন বিশেষজ্ঞ ওলিভার স্টুয়েনকেল বলেন, মহামারির বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন তৈরির বিষয়ে চীন দেখাতে চায় যে, চীনের উত্থান অন্যদের জন্য সুবিধা এবং উপকারই বয়ে আনবে।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ভার্চুয়াল ওই বৈঠকে আর্জেন্টিনা, বার্বাডোজ, চিলি, কলম্বিয়া, কোস্টা রিকা, কিউবা, দ্য ডোমিনিক্যান রিপাবলিক, ইকুয়েডর, পানামা, পেরু, ত্রিনিদাদ, টোবাগো ও উরুগুয়ের প্রতিনিধি এবং মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী অংশ নেন।
বর্তমানে করোনাভাইরাস বিশ্বের দুই শতাধিক দেশে ছড়িয়েছে। এই ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা দেড় কোটি ছাড়িয়েছে, প্রাণ গেছে ৬ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি। চীন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনও লাগামহীন অবস্থায় রয়েছে করোনা।
করোনাভাইরাস মহামারিতে পুরো বিশ্ব বিপর্যয়ের মুখোমুখি হলেও এখন পর্যন্ত এর কোনও ভ্যাকসিন কিংবা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। তবে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ করে তৃতীয় ধাপে প্রবেশ করেছে।
জাতিসংঘ বলছে, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টায় তৃতীয় ধাপে পৌঁছেছে তিনটি প্রতিষ্ঠান। সেগুলো হলো- চীনের সিনোভ্যাক, ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না। এছাড়া চীনের তৈরি করোনাভাইরাসের ছয়টি ভ্যাকসিন পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপে রয়েছে।
বিশ্ব জুড়ে করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি বাড়ছে, একইসাথে চলছে এই রোগের টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা।
জাতিসংঘের সর্বশেষ ২০শে জুলাইয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টিকা বানাতে ১৭৩টি উদ্যোগ চলছে। এর মধ্যে কয়েকটি টিকার মানবদেহে পরীক্ষা চলছে। যদিও বিশেষজ্ঞদের অধিকাংশের ধারণা, মানবদেহে ব্যবহারের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হতে এই বছর পার হয়ে যাবে।
কার্যকর টিকা আবিষ্কারের সম্ভাবনা বাড়ার সাথে সাথে আলোচনায় আসছে, কীভাবে এই টিকা মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে।
কোভিড-১৯ এর নিষ্ক্রিয় অংশের ওপর ভিত্তি করে একটি টিকা আবিষ্কারের কাজ করছে চীনের কোম্পানি সিনোভেক। প্রথম দফার পরীক্ষাগুলোয় এই টিকাটি বেশ সাফল্য দেখিয়েছে। এখন ব্রাজিল ও বাংলাদেশে কয়েক হাজার মানুষের ওপর টিকাটির তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু হয়েছে।