আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন 'রোববারের আলাপন'। আপনাদের সঙ্গে আছি আলিম এবং শিয়েনান আকাশ।
আকাশ: বড় ভাই, বডি বিল্ডিং আমার অনেক ভাল লাগে। আপনিও কি তা পছন্দ করেন? বডি বিল্ডিং সম্পর্কে আপনার জীবনের কোনো গল্প থাকলে শেয়ার করুন প্লিজ!
আলিম:....
আলিম: আকাশ, আমি জানি কোভিড-১৯ প্রতিরোধে এখন বেইজিংয়ে সব জিম অস্থায়ীভাবে বন্ধ আছে। তাহলে আপনি কিভাবে বডি বিল্ডিং করেন?
আকাশ: আমার বাড়িতে, বাসার জন্য সুবিধাজনক ছোট আকারের হরাইজন্টাল ও প্যারালাল বার আছে। এজন্য বাসায় শরীরর্চচা করতে পারি। এ ছাড়া আমাদের পাশে একটি পার্ক আছে, নাম হচ্ছে লাও সান পার্ক। ওখানেও বডি বিল্ডিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জাম আছে। আপনিও ভাবি ও ছেলেকে নিয়ে ওখানে যেতে পারেন। ওখানে ছোট ছোট পাহাড়, তৃণভূমি, বন, ফুল, সবই আছে।
আলিম:…
আকাশ: বন্ধুরা, আজকে আমরা বডি বিল্ডিং সম্পর্কে একটি চীনা গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করব, কেমন?
চীনের চ্য চিয়াং প্রদেশের হু চৌ শহরে একটি জিম আছে। জিমে রানিং ম্যাশিন নেই, ডেকোরেশানেরও বালাই নেই। খুবই সাধারণ একটি জিম। কিছু বেসিক ইকুইপমেন্ট আছে, যেমন: ডাম্বেল। এখানকার অনেক ইকুইপমেন্ট জিমের মালিক নিজে তৈরি করেছেন। তবে এখানে যারা আসেন, তারা এসব ইকুইপমেন্ট নিয়ে সন্তুষ্ট।
এ পুরাতন জিমের বয়স ১৮ বছর। ভেতরে প্রায় দু'শরও বেশি বডি বিল্ডার শরীরচর্চা করেন। তারা সবাই সত্যিকারের বডি বিল্ডার। বডি বিল্ডিং ভালবাসেন।
এ জিম খোলার আগে, মালিক চাং লি সুং একটি কোম্পানিতে কাজ করতেন। তখন থেকেই তিনি বডি বিল্ডিং পছন্দ করতেন। ১৯৯২ সাল থেকে তিনি এবং তার বন্ধুরা অনেক বার বডি বিল্ডিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সফল হন। তারপর চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি জিম খুলে বসেন। বছরে জিমের মাথাপিছু ফি মাত্র ৭০০ ইউয়ান। তিনি বলেন, এ জিম বডি বিল্ডিংয়ের জন্য উত্সর্গিত, টাকা উপার্জনের হাতিয়ার নয়।
জিমে যারা আসেন, তারা সমাজের বিভিন্ন পেশার লোক। ব্যবসায়ী, শিক্ষক, মত্স্য-বিক্রেতা—সব ধরনের পেশার লোক আসেন এখানে।
প্রতিদিন সবার আগে যিনি আসেন, তিনি কাছাকাছি একটি বাজারে মাছ বিক্রি করেন। কারণ, রাত ২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত তিনি বাজারে পাইকারী দরে মাছ বিক্রি করেন। কাজশেষে তিনি জিমে আসেন। কিন্তু এতো সকালে জিমের কর্মচারী কেউ আসে না। মালিক তাকে একটি স্পেয়ার চাবি দিয়ে রেখেছেন।
এ জিমে যারা আসেন, তাদের অধিকাংশই মধ্যবয়সী। তাদের কেউ কেউ আগে অন্য জিমে ব্যয়াম করতেন। কিন্তু সেসব জিমে কথা বলার জন্য মানুষ কম। হু চৌ শহরের সবচেয়ে পুরাতন ও সাধারণ জিমটিই এখন তাদের পছন্দ।
সকালে বাজারে শাকসবজি ও মাংস কেনার পর, কেউ কেউ এসে বডি বিল্ডিং শুরু করেন; কেউ কেউ সারা বিকেল জিমে থাকেন এবং সাড়ে তিনটা প্রাথমিক স্কুলের ক্লাস শেষে স্কুল থেকে নাতি বা নাতনিকে পিক করে বাসায় ফিরে যান। সন্ধ্যার সময় জিমে মানুষের ভিড় সবচেয়ে বেশি। জিমে সবচেয়ে আনন্দের সময় সেটি। জিমের মালিকসহ সবাই শরীরচর্চাশেষে একসঙ্গে ডিনার করেন।
অনেকে আছেন যারা অনেক বছর বডি বিল্ডিং থেকে বিরত ছিলেন এবং এখন নতুন করে শুরু করেছেন। চৌ চোং হুয়াংয়ের বয়স ৫২ । তিনি ১৯৮৮ সাল থেকে মালিক চাং লি সুর সাথে একসাথে বডি বিল্ডিং করে আসছেন এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। তিনি গাড়িচালকের চাকরি করেন। কাজের ব্যস্ততার কারণে তিনি ১০ বছর বডি বিল্ডিং করেননি। দীর্ঘকাল ধরে গাড়ি চালানোয় তার শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তিনি আবার বডি বিল্ডিং শুরু করেছেন।
এ ধরনের মধ্যবয়সী বডি বিল্ডারদের সবার আলাদা আলাদা গল্প আছে। তারা একসঙ্গে বডি বিল্ডিং করেন, আড্ডা দেন, ডিনার করেন, একসঙ্গে জীবন কাটান।