চলুন বেড়িয়ে আসি: ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়
  2020-07-24 17:32:29  cri
সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যময় দেশ ভিয়েতনাম । আর ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় হল নানা রকম ঐতিহ্যে সমৃদ্ধশালী একটি শহর। ভিয়েতনামিজরা ইতিহাস ও সংস্কৃতি আগলে রাখতে ভালোবাসে। তা বুঝা যায় হ্যানয় শহর জুড়ে ঐতিহ্যের ছাপ, জাদুঘর ও টেম্পল দেখে। পর্যটকদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য বেশ পছন্দের একটি জায়গা যেখানে দেখার অনেক কিছুই রয়েছে।

হ্যানয়ের দর্শনীয় স্থান

হোয়া লো প্রিজন মিউজিয়াম:২০ শতকের দিকে ফরাসি সরকারের অধীনে থাকা ভিয়েতনামের বিপ্লবীদের কষ্ট ও দুঃখ-দুর্দশার বিভিন্ন দিক ও মুক্তির জন্য তাদের আকুল আবেদনের নানা বিষয় এখানে প্রতীকীর মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়েছে। জেলখানার ভিতরে ভিয়েতনামের বিপ্লবীদের কিভাবে কতটা কষ্ট দেওয়া হয়েছে পর্যটকদের শুধুমাত্র তার একটু আভাস দেওয়া হয়েছে।

ভিয়েতনাম ওমেন্স মিউজিয়াম: এই চমৎকার আধুনিক জাদুঘরে ভিয়েতনামের সমাজে নারীদের ভূমিকা ও সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। যুদ্ধের সময় নারীদের বীরত্বপূর্ণ গৌরবের স্মৃতিগুলো এখানে বিশেষ ভাবে গুরত্ব দেওয়া হয়েছে। এখানে কিছু বিশেষ অদ্ভুত সুন্দর পোস্টার আছে যা নিঃসন্দেহে পর্যটকদের নজর কাড়বে।

ভিয়েতনাম মিউজিয়াম অফ এথনোলোজি: ভিয়েতনামের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গুষ্টিদের উপজাতীয় শিল্প, শিল্পকর্ম ওতাদের গ্রামীণ জীবনের ঐতিহ্যবাহী নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস সংগ্রহ করে এখানে প্রদর্শন করা হয়েছে। বিভিন্ন জাতির বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের সংরক্ষকবলা যায় এই জাদুঘরকে।

টেম্পল অফ লিটারেচার: ১০৭০ সালে নির্মিত এই টেম্পল ভিয়েতনামের সেরাপণ্ডিতদের স্থান হিসেবে গণ্য করা হতো। এখানের প্যাগোডা ও বেদিগুলোর স্থাপত্য বিশেষভাবে নজরে পড়ে। একসময় শুধু রয়্যাল পরিবারের সদস্যরাই এখানে ভর্তি হবার সুযোগ পেতো।

ওয়েস্ট লেক:  শহরের সবচেয়ে বড় লেক, জা হো তেয় (Ho Tay) হিসেবেও পরিচিত। এই লেক টায় হো  শহর কে ঘিরে রেখেছে। এখানের দক্ষিন দিকে খাবারের বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট আছে আর পূর্ব দিকে রাস্তার ধারে রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে, কাপরের দোকান ও বেশ কিছু বিলাসবহুল হোটেল আছে। লেকের পাশে এখানের রেস্টুরেন্টগুলোতে খেতে সবাই বেশ পছন্দ করে আর লেকের মনোরম পরিবেশ ও ভালো লাগার মতো। শহরের শোরগোল থেকে একটু দূরে এসে সময় কাটাতে অনেকেই চলে আসে এখানে। আবার লেকের পাশের রাস্তা দিয়ে অনেকে বাইসাইকেল চালাতেও পছন্দ করে।

হোয়ান কিএম লেক:কথিত আছে, ১৫শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে সম্রাট লি থাইকে স্বর্গ থেকে পাঠানো এক জাদুকরী তলোয়ার যুদ্ধের পর এক বিশাল আকৃতির কচ্ছপ ছিনিয়ে নেয় তারপর আবার স্বর্গে এই তলোয়ারের প্রকৃত মালিকের কাছে পাঠানোর জন্য তলোয়ার সহ কচ্ছপটা লেকের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায়। সেই কারনে এই লেকের নামকরন করা হয় হো হোয়ান কিএম যার অর্থ হল পুনরুদ্ধারকৃত তলোয়ারের লেক। মিথ হোক বা সত্য, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অসংখ্য পর্যটক এই লেক দেখতে এখানে আসে।

লটে অবজারভেশন ডেক: হ্যানয় শহরের পশ্চিমে অবস্থিত এই ভবনের ৬৫ তালা থেকে হেনয় শহরের সৌন্দর্য সবচেয়ে সুন্দর ভাবে দেখা যায়। এই সুউচ্চ টাওয়ারে হোটেল, খাবার রেস্টুরেন্ট, রুফটপ বারের সাথে সাথে নিচের তালায় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও আছে। সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যেকোনো সময়ে যেতে পারবেন এই টাওয়ারে।

লং বিএন ব্রিজ: আমেরিকার যুদ্ধের স্মৃতিবিজারিত এই ব্রিজ অসংখ্যবার বোমা হামলার কবলে পড়েছে তবে প্রতিবার দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। বিখ্যাত আর্কিটেক্ট গাস্টভ আইফেল এই ব্রিজের ডিজাইনার। রাতের বেলায় এই ব্রিজের সৌন্দর্য মুগ্ধ করার মতো।

ওয়ান পিলার প্যাগোডা: এই প্যাগোডা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য পবিত্রতার প্রতীক। একটা পিলারের উপর নির্মিত এই প্যাগোডা পিছনে লোককাহিনী প্রচলিত আছে। ফরাসীদের ধ্বংসের কারনে বর্তমানে একটি কাঠের প্যাগোডা বানানো হয়েছে আগের জায়গায়। বলা হয়ে থাকে এই প্যাগোডার পিছনের গাছের নিচে বসেই বৌদ্ধদেব ক্ষমতা পেয়েছিল।

হো চি মিন মোসোলিয়াম: ভিয়েতনামের বিপ্লবি নেতা হো চি মিনের সমাধি। হো চি মিনের দেহাবশেষ এখানে সংরক্ষিত আছে যা সবসময় সামরিক বাহিনী দিয়ে সুরক্ষিত থাকে। সমাধি ঘিরে বিভিন ধরনের গাছের সমাহার আর সমাধির বাইরের দিক ধূসর গ্রানাইট পাথর দিয়ে তৈরি আর ভিতরে কালো, ধূসর লাল মসৃণ পাথর। বিপ্লবি এই নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে অনেকেই আসে এখানে।

ফাইন আর্টস মিউজিয়াম: এখানে ভিয়েতনামের স্থানীয় শিল্পীদের বিভিন্ন আর্টের প্রদর্শনী করা আছে। এখানে ঘুরে আসলে ভিয়েতনামের সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে জানার সুযোগ হবে।

কোথায় থাকবেন

ওল্ড কোয়ার্টারে থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো হোটেল আছে। যেমন- গ্রিন হাউজ, দা হানোয়িন হোটেল, সামারসেট গ্র্যান্ড হানয়, হ্যানয় কাবলিস হোটেল গুলোতে ১৫০০-২৫০০ এর মধ্যে দুইজন থাকার রুম পেয়ে যাবেন। তবে এখানে কম খরচে পর্যটকরা হোস্টেলে থাকতে বেশী পছন্দ করে, যেমন- হানয় ওল্ড কোয়ার্টারর্স বেকপ্যাকার্স হোস্টেল, দা ফাস্ট হোস্টেল, মিউ হস্তেল, হানই ইকো গ্রীন হোস্টেল, ডেইজি হোস্টেল, হানয় কজি হোস্টেল থাকলে ৪০০-৮০০ টাকার মধ্যে এক রুমে দুইজন থাকতে পারবেন।

কি ও কোথায় খাবেন

ওল্ড কোয়ার্টারে খাবারের বেশ কিছু ভালো রেস্টুরেন্ট আছে। এখানে ১০০-১৫০ টাকার মধ্যে বেশ ভালো খাবার পাবেন। খাবারের মধ্যে গই চুয়ান (এক ধরনের স্প্রিং রোল), এগ নগ লাটে, ফ্রাইড বানানা, ক্যারামেল পুডিং এবং ডেজার্ট সুপ খেয়ে দেখতে পারেন। আর পানীয়য়ের জন্য "বিয়া হৈ" বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।

কিছু টিপস

হোয়ান কিএম লেকে শুক্রবার থেকে রবিবার যাওয়া সবচেয়ে ভালো কারণ এই দিনগুলোতে সন্ধ্যা ৭টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ট্রাফিক বন্ধ থাকে আর তাই মেলার মতো এক পরিবেশ গড়ে উঠে চারদিকে।

ওল্ড কোয়ার্টারে হোটেল ভাড়া নিলে হাঁটা দূরত্বে কাছাকাছি অনেক জায়গায় ঘুরতে পারবেন।

সময় থাকলে অপেরা হাউজের কোনও শো দেখলে এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা হবে।

এখানের ওয়াটার পাপেট শো পর্যটকদের জন্য এক বিশেষ আকর্ষণ।

এখানে ডং জুয়ান মার্কেটে কেনাকাটা করতে পারবেন। এখানে কম দামে স্থানীয় জিনিস কিনতে পারবেন।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040