মে এবং অগাস্ট
  2020-07-22 13:43:06  cri

চলতি বছর হলো চীনা জাতির জাপানি আগ্রাসনবিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধ জয়ের ৭৫তম বার্ষিকী। এ বার্ষিকীর স্মরণে এ সপ্তাহে আমরা জাপান-বিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধসম্পর্কিত একটি চলচ্চিত্রের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো। আমাদের আজকের এ চলচ্চিত্রের নাম হলো 'May & August'।

'মে এবং অগাস্ট' এ চলচ্চিত্রের দুটি চরিত্রের নাম। তারা দুই বোন। তাদের খুব সুখী একটি পরিবার ছিলো। বাবা এক মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষাদান করতেন এবং মা ছিলেন সুন্দরী ও বুদ্ধিমতী নারী।

পরিবারের সদস্যরা সুখ-শান্তিতে নানচিং শহরে বাস করছিল। জাপানি বাহিনীর আগ্রাসী হামলায় সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। তারা শহর অবরোধ করার পাশাপাশি ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালায়। পরিবারে খাবার কোনো চাল ছিলো না। বাবা রাস্তায় গিয়ে কাপড়ের বিনিময়ে খাবার সংগ্রহের চেষ্টা করেন। তবে তিনি আর বাসায় ফিরতে পারলেন না। প্রচণ্ড কষ্টে মার হৃদয় ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়। মা দুই বোনকে বাসার চিলেকোঠায় লুকিয়ে রাখলেন। রাতে জাপানি বাহিনী ঘরে ঘরে হত্যাকাণ্ড শুরু করলো। মে ও অগাস্টের মা-ও জাপানি সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারান। চিলেকোঠায় লুকিয়ে থাকা তারা দুই বোন বেঁচে যায়। তারপর বড় বোন মে ছোট বোনের দেখা-শোনার দায়িত্ব নেয়। দুই বোনের অসহায় নিঃসঙ্গ জীবন শুরু হয়।

এক শরণার্থী শিবির তাদের খুঁজে পায় ও দায়িত্ব নেয়। সেখানে তারা চাচার সঙ্গে দুই বোনের দেখা হয়। চাচা তাদেরকে নিয়ে উসি শহরে নিজের বাসায় নিয়ে যান। বড় বোন মে চাচার ছেলের সঙ্গে একই স্কুলে লেখাপড়া শুরু করেন। স্কুলে সে ফাং ই নামে একটি ছেলের সঙ্গে পরিচিত হয়। ফাং ই নান চিং শহর থেকে এসেছে। তার বাবা-মাও নান চিং শহরে মারা গিয়েছিল। একই অভিজ্ঞতার কারণে মে এবং ফাং ই পরস্পরের ভালো বন্ধুতে পরিণত হয়। ফাং ই মারাত্মক অসুস্থ চাচার সঙ্গে বাস করে। সে ছবি আঁকতে পছন্দ করে। তবে তার কলমে আঁকা সব দৃশ্য হলো যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত শহর। তার ছবিগুলো খুব বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক। ব্যবসার কাজে মে'র চাচা মাঝেমাঝে বাইরে যেতেন। উসি শহরে জাপানি বাহিনীর বিমান হামলা ঘটে। চাচা বাইরে জাপানি সেনাদের গুলিতে মারা যান। মে ও অগাস্টের সর্বশেষ আত্মীয়ও মারা যান। তাদের দু'জনের দেখাশোনা করার ক্ষমতা চাচির নেই। এবার মে ও অগাস্ট সম্পূর্ণ এতিম হয়ে ওঠে। ফাং ই'র চাচাও মারা যান।

অসহায় মে, অগাস্ট এবং ফাং ই এবার কী করবে? কে তাদেরকে যত্ন নেবে? তারা কীভাবে টিকে থাকবে? চলচ্চিত্রে কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি। যুদ্ধকালীন শিশুদের কি ভবিষ্যৎ আছে? যুদ্ধের সময় আগামীকালের কোনও নিশ্চয়তা আছে? যুগে যুগে পৃথিবীতে যেসব গণহত্যা হয়েছে, তার কোনও সুফল কি পৃথিবী পেয়েছে?

প্রিয় বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশ আমরা একসঙ্গে পৃথিবীর কিছু কুখ্যাত গণহত্যার দিকে নজর দেবো।

মানুষের নিষ্ঠুরতার ইতিহাস অনেক পুরনো। সভ্যতার আদি থেকেই মানুষ মানুষের ওপর পশুসুলভ আচরণ করে আসছে।

পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ ও জঘন্যতম গণহত্যা হচ্ছে হলোকাস্ট। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের ওপর চালানো গণহত্যা। হিটলারের অধীনস্থ জার্মান নাৎসি সামরিক বাহিনী ইউরোপের তদানীন্তন ইহুদি জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বেশি অংশকে বন্দী শিবির ও শ্রম শিবিরে হত্যা করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন এডলফ হিটলারের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টির পরিচালিত গণহত্যায় তখন আনুমানিক ৬০ লাখ ইহুদি এবং আরও অনেক সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর মানুষ প্রাণ দিয়েছে। হিটলারের বাহিনী ৬০ লাখ ইহুদি ছাড়াও সোভিয়েত যুদ্ধবন্দী, কমিউনিস্ট, রোমানি ভাষাগোষ্ঠীর জনগণ, অন্যান্য স্লাবিক ভাষাভাষী জনগণ, প্রতিবন্ধী সমকামী পুরুষ এবং ভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতাদর্শের মানুষের ওপর এই অমানবিক গণহত্যা পরিচালনা করে। অনেক লেখক অন্য সব জনগোষ্ঠীর নিহত হওয়াকে হলোকাস্টের সংজ্ঞার আওতায় না এনে তারা শুধু ইহুদি গণহত্যাকেই 'হলোকাস্ট' নামে অভিহিত করতে চান, যাকে নািসরা নাম দিয়েছে 'ইহুদি প্রশ্নের চরম উপসংহার' বলে। নািস অত্যাচারের সব ঘটনা আমলে নিলে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ৯০ লাখ থেকে এক কোটি দশ লাখের মতো। অত্যাচার ও গণহত্যার এসব ঘটনা বিভিন্ন পর্যায়ে সংঘটিত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর অনেক আগেই নাগরিক সমাজ থেকে ইহুদিদের উত্খাতের জন্য জার্মানিতে আইন প্রণয়ন করা হয়। জনাকীর্ণ বন্দী শিবিরে রাজনৈতিক ও যুদ্ধবন্দীদের ক্রীতদাসের মতো কাজে লাগাত, যারা পরে অবসন্ন হয়ে রোগভোগের পর মারা যেত।

নানকিংয়ের গণহত্যা বা Nanjing genocide ১৯৩৭-৩৮ সালের কুখ্যাত এক ট্র্যাজেডি। এই ট্র্যাজেডিতে জাপানিদের নৃশংসতার শিকার হয় চীনের সাধারণ মানুষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে সংঘটিত নাচিংর গণহত্যা জাপানি যুদ্ধাপরাধগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাড়া জাগানো ঘটনা। মার্কো পোলো সেতু ঘটনার পর চীন-জাপান যুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৩৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর। বহুদিন অবরোধের পর প্রায় দেড় লাখ জাপানি সৈন্য চীনা শহর নানচিং দখল নেয়। এরপর প্রায় কয়েক সপ্তাহ শহরটিতে এক অবিশ্বাস্য মাত্রার গণহত্যা সংঘটিত হয়। জাপানি সৈন্যরা কখনো পরিকল্পিতভাবে, কখনো কেবল আনন্দের উদ্দেশ্যে অনির্দিষ্টভাবে শহরটির চীনা লোকদের হত্যা ও ধর্ষণ করা শুরু করে। সম্ভবত চার লাখ চীনাকে হত্যা করা হয়। সেই সঙ্গে ধর্ষিত হন নানচিংয়ের হাজার হাজার নারী।

লিলি/তৌহিদ/শুয়ে

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040