সাক্ষাত্কারে রাষ্ট্রদূত লি বলেন, "আপনি যদি হংকংয়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই জানেন যে, গত বছরের মে থেকে হংকং ছিল অশান্ত। সেখানে অগ্নিসংযোগ, সহিংসতা ও সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছিল। এসব ঘটনার মূল কারণ হলো হংকং ছিল মূলত অরক্ষিত একটি শহর। সেখানে স্থানীয় নিরাপত্তা রক্ষায় কোনও কার্যকর আইন ছিল না। ফলে অনেক বিদেশি এজেন্ট, সংগঠন, এমনকি, কিছু সরকারি সংস্থাও প্রকাশ্যে হংকংয়ের কিছু দাঙ্গাবাজকে দাঙ্গায় ভূমিকা রাখায় উস্কানি দিয়েছিল। এ অবস্থা প্রায় এক বছর স্থায়ী হয়। অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকার এ সংকটময় অবস্থা নিরসনের সিদ্ধান্ত নেয়। আর এটাই হলো হংকংয়ের জাতীয় নিরাপত্তা আইনের পটভূমি।
হংকংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা আইন চালু হওয়ায় হংকংয়ের উন্নয়নে কেমন প্রভাব পড়বে? এ প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রদূত লি বলেন, "এ আইনের কার্যকারিতা হংকংয়ের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে। হংকংয়ের আন্তর্জাতিক আর্থিককেন্দ্র, বাণিজ্যিককেন্দ্র আর নৌ পরিবহনকেন্দ্রের মর্যাদা আরও মজবুত হবে। আইনটি চালু হওয়ার অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমি আস্থার সঙ্গে বলছি যে, এ আইনটি হংকংয়ের দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা এবং 'এক দেশ, দুই সমাজব্যবস্থার' জন্য কল্যাণকর হবে।"
এ আইনটি গ্রহণের পর আন্তর্জাতিক সমাজে দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ শুধু নেতিবাচক কথা শুনে তা বিশ্বাস করেছেন। কিন্তু আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে, গত ৩০ জুন জাতিসংঘের ৪৪তম মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে হংকং সম্পর্কে দুই রকম কণ্ঠই শোনা গেছে। পশ্চিমা দেশগুলো নিয়ে গঠিত ২৭টি দেশের দলগত ভাষণে এই নেতিবাচক কথাগুলো উঠেছে। কিন্তু অপরদিকে, ৫০টি দেশ এক যৌথ ভাষণে চীন সরকারের এ পদক্ষেপের ব্যাপারে ইতিবাচক বক্তব্য ও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া, আরও ২০টি দেশের একক ভাষণেও চীনের প্রতি প্রবল সমর্থন জানানো হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত লি মনে করি, "আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতিক্রিয়া দেখানোর উত্তম জায়গা হলো জাতিসংঘ। বলা যায়, হংকংয়ের জাতীয় নিরাপত্তা আইন আন্তর্জাতিক সমাজের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে, এবং হংকংবাসীরও সমর্থন পেয়েছে। কয়েকদিন আগে, হংকংয়ের ২৯ লাখ মানুষ চীন সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে স্বাক্ষর দিয়েছেন।
পাশাপাশি, আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ অল্প কিছু দেশের নেতিবাচক কণ্ঠস্বর শুনেছি। আমি মনে করি, তারা ভালোভাবে এ আইনের ৬টি অধ্যায়ের ৬৬টি ধারা পড়ে নি। যদি তারা পড়তো, তাহলে এসব কথা বলতো না। কিন্তু হাস্যকর বিষয় হলো, কেউ কেউ আইনের ধারা পড়ার আগেই যা-তা বলা শুরু করে দিয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন সরকারের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট। হংকংয়ের জাতীয় নিরাপত্তা আইন আইনগত, যথার্থ ও যুক্তিসঙ্গত পদক্ষেপ। আপনারা ভালোভাবে খেয়াল করুন, অনেকই এমন ধারণা করে বসে আছেন যে, হংকংয়ে চীন প্রশাসনের আইনগত ভিত্তি হলো 'চীন-ব্রিটেন যৌথ বিবৃতি'! 'চীন-ব্রিটেন যৌথ বিবৃতির' প্রধান বিষয়বস্তু হচ্ছে, হংকংয়ের প্রত্যাবর্তনের পর কিছু কাজের ব্যবস্থাপনা এবং দু'দেশের হস্তান্তরের পদ্ধতি। হংকংয়ে চীনের নতুন আইন প্রণয়নের আইনগত ভিত্তি হচ্ছে, চীনের সংবিধান ও হংকংয়ের মৌলিক আইন। তাই, চীনের সংবিধান ও হংকংয়ের মৌলিক আইন অনুযায়ী 'জাতীয় নিরাপত্তা আইন' চালু করা যুক্তিসঙ্গত ও আইনগতভাবে বৈধ। আমাদের এ আইনটি প্রয়োজন।
এ আইনটি প্রণয়নের আইনগত ভিত্তি যথেষ্ট শক্তিশালী। আইনটি চীনের জাতীয় গণ-কংগ্রেসের অধিবেশনে গৃহীত হয়েছে। জাতীয় গণ-কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটি তা কার্যকর করেছে। এ দুটি ধাপই চীনের আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। আইনটি চালু হওয়ার অল্প কয়েক দিনের মধ্যে সুফল দেখা গেছে। হংকংয়ে ইতোমধ্যে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে।
তিনি বিশেষ জোর দিয়ে বলেন, চীনে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত রয়েছে; তাই, এ ধরণের কাজ সম্পন্ন করা সময়োচিত ও বুদ্ধিবৃত্তিক পদক্ষেপ।
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, প্রথমত এ আইনে সুস্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে, আইনটি অল্প কিছু ধরণের মানুষের ওপর প্রয়োগ করা যাবে। এ আইনটি কেবল চার ধরনের তত্পরতার বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হবে। যেমন, দেশকে বিভক্ত করা, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অবসানের চেষ্টা করা, সন্ত্রাসী তত্পরতা ও বিদেশি শক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশের নিরাপত্তা নষ্ট করা মানুষ এর আওতায় পড়বে।
দ্বিতীয়ত, হংকংয়ের আইনগত অভ্যাসকে সম্মান করতে হবে; অর্থাত্ 'অতীতের ঘটনা আইনের আওতায় আসবে না।'
তৃতীয়ত, অনেকেই জানেন না যে, হংকংয়ের মৌলিক আইন অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় চীন সরকার সেখানে সরাসরি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারে এবং চীনের মূল-ভূখণ্ডের আইন হংকংয়ে কার্যকর করতে পারে। কিন্তু চীন সরকার সেভাবে তা করে নি। আইন প্রণয়নে ধাপে ধাপে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাই, পশ্চিমা দেশগুলোর এ ব্যাপারে সমালোচনা করা একেবারে অযৌক্তিক।(আনন্দী/তৌহিদ/সুবর্ণা)