১৯৩৭ সালের পেইপিং (বর্তমানের বেইজিং) শহরের আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। উত্তর চীনে জাপানি সেনাদের আক্রমণ ক্রমশ জোরদার হচ্ছিল। বেইজিং ও থিয়েনচিনে বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হয়। মার্কো পোলো সেতু বা লুকৌছিয়াও নামক এই সেতুর গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পথ দখল নিতে জাপানি বাহিনী এ সেতুর কাছাকাছি এলাকায় সামরিক অভিযান শুরু করে। চীনের ২৯নং বাহিনী তখন এই অঞ্চল বা ওয়েনপিং শহর সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করেছিল। চীনা বাহিনীর অধিনায়ক সোং চে ইউয়েনের নেতৃত্বে গোটা বাহিনীর দিন রাত প্রস্তুতি নেয়। তারা আগ্রাসী জাপানি সেনাদের আক্রমণ প্রতিরোধের প্রস্তুতি নেয়। জাপানি বাহিনী চীনা বাহিনীর কঠোর প্রতিরোধের সামনে সামনে এগোনোর সাহস পেলো না।
১৯৩৭ সালের ৭ জুলাই গভীর রাতে জাপানি সেনারা তাদের একজন হারিয়ে যাওয়া সেনা খোঁজার অজুহাতে বলপ্রয়োগে ওয়ানপিং শহরে প্রবেশের দাবি জানায়। চীনা বাহিনীর তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করে। এরপর জাপানি সেনারা সংঘাত শুরু করে। এতে দু'পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। জাপানি বাহিনী তারপর মার্কো পোলো সেতুর ওপর আক্রমণ চালায়। পেইপিং ও থিয়েনচিনের বিভিন্ন মহলের দেশপ্রেমিক লোকেরা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টির নেতৃত্বে ২৯নং বাহিনীকে সাহায্য দিতে থাকে। কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি চৌ এনলাই লু শানে চিয়াং কাই শেকের সঙ্গে কুওমিনতাং পার্টি এবং কমিউনিস্ট পার্টি যৌথভাবে জাপানি আগ্রাসনবিরোধী প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা করেন। সে সময় চিয়াং কাই শেক তার ভাষণে 'ভূখণ্ড রক্ষায় প্রতিটি মানুষের যুদ্ধে অংশ নেওয়া দায়িত্ব' এমন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেন। ২৯নং বাহিনীর অধিনায়ক সোং চে ইউয়েন এবং উপ-অধিনায়ক থোং লিন কে'র নেতৃত্বে বাহিনীর সেনারা জাপানি বাহিনীর ওপর গুরুতর আঘাত হানে। তারপর জাপানি বাহিনী বিমান ও বোমা হামলা চালায়। ২৯নং বাহিনীর উপ-অধিনায়ক থোং লিন কে এবং সেনাপতি চাও তেং ইউ এ যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ হারান। জাপানি সেনাদের তুমুল আক্রমণে ২৯নং বাহিনীর গুরুতর ক্ষতি হয়। শক্তি বাঁচানোর জন্য অধিনায়ক সোং চে ইউয়েন ওয়ানপিং শহর থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
২৯নং বাহিনী অচলাবস্থায় পড়লেও চাং চি চোং নামে একজন ওয়ানপিং শহরে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৩৭ সালের ৭ জুলাই জাপান চীনের পেইপিং (বর্তমান পেইচিং)-এ 'মার্কো পোলো সেতুর ঘটনা' দিয়ে চীনের বিরুদ্ধে সার্বিক আগ্রাসী যুদ্ধ শুরু করে। এ ঘটনার পর চীনা জাতি জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সর্বমুখী প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করে।
'মার্কো পোলো সেতু ঘটনা বা the lu gou qiao incident' নামক এ চলচ্চিত্রে চীনের ইতিহাসের সেই ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।
১৯৩৭ সালের ৭ জুলাই মার্কো পোলো ব্রিজের ঘটনাটি দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধের শুরু, যা এশিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায়। আসলে ঘটনা কী ছিল এবং এটি এশিয়ার ক্ষমতাধর দুই শক্তির মধ্যে কীভাবে দীর্ঘ যুদ্ধের শুরু করে ? – তা জানার চেষ্টা করব।
মার্কো পোলো ব্রিজের ঘটনার আগে চীন ও জাপানের মধ্যে সম্পর্ক তুলনামূলক কম ছিল বলে জানা যায়। জাপানি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ১৯১০ সালে কোরিয়া, পূর্বে চীনের উপনদী ও রাষ্ট্রকে একত্রিত করে ১৯৩১ সালে মুকডেনের ঘটনাবলীর পর মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ করে ও দখল করে নেয়।
বেইজিংয়ের আশেপাশে উত্তর ও পূর্ব চীনের বৃহত্তর অংশগুলি আটকানোর পর জাপানি সেনাদের মার্কো পোলো ব্রিজের ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়। চিয়াং কাই-শেকের নেতৃত্বে কুওমিনতাং পার্টি নানজিং থেকে আরও দক্ষিণে অবস্থান নেয়। কিন্তু পেইফিং তখনও একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল।
বেইজিংয়ে প্রবেশের মৌলিক পথ হলো মার্কো পোলো ব্রিজ, ইতালিয়ান ব্যবসায়ী মার্কো পোলোর নামে এর নামকরণ করা হয়, যিনি ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ইয়ুননান দিয়ে চীন ভ্রমণ করেছিলেন। ওয়াংপিং শহরের কাছে আধুনিক এ সেতুটি ছিল বেইজিং ও নানচিংয়ের কুওমিনতাঙ দুর্গের মধ্যে সংযোগকারী একমাত্র রাস্তা ও রেল সংযোগ। জাপানি সাম্রাজ্যবাদী বাহিনী চীনকে চাপের মুখে রাখার চেষ্টা করেছিল। এজন্য এ সেতুটি ছিল কৌশলগতভাবে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। এরপর যে ঘটনাগুলো ঘটেছিল, তা বিস্তারিত চলচ্চিত্রের মধ্যে বর্ণনা করা হয়েছে। (লিলি/তৌহিদ/শুয়ে)