আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন 'রোববারের আলাপন'। আপনাদের সঙ্গে আছি আলিম এবং শিয়েনান আকাশ।
বন্ধুরা, আমি সম্প্রতি একটি তথ্যচিত্র দেখেছি। এতে একজন শরীরচর্চা শিক্ষকের গল্প বলা হয়েছে। উনি ২৪ চব্বিশ বছর ধরে ১২০ জন ছেলেমেয়েকে দত্তক নিয়েছেন এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। আমি এ তথ্যচিত্র দেখে অনেক মুগ্ধ হয়েছি, অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমি আজ এ গল্প আমাদের ভাইবোনদের সাথে শেয়ার করব, কেমন?
এ শিক্ষকের নাম পাই চিয়ান। ২৪ বছর ধরে তিনি ১২০টিরও বেশি ছেলেমেয়েকে দত্তক নিয়েছেন। সব ছেলেমেয়ে একটি বাসায় বসবাস করে। এ বাসার নাম হচ্ছে : "স্বপ্নের বাড়ি"।
ছেলেমেয়েদের কারুর বাবা-মা ডিভোর্সি, কারুর বাবা-মা নেই, কারুর পরিবারে অর্থসংকট প্রবল। এ অসহায় বাচ্চাদের পাই চিয়ান সাহেব দত্তক নিয়েছেন, আশ্রয় দিয়েছেন, শিক্ষা দিচ্ছেন। তাঁরা প্রতিদিন ভোর সাড়ে চারটায় ঘুম থেকে উঠে ১৬ ষোল কিলোমিটার দৌড়ায়। তাদের কঠোর প্রশিক্ষণ তাদেরকে খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে র্ভতির সুযোগ এনে দেবে এবং তাদেরকে পেশাদার খেলোয়াড় হতে সাহায্য করতে পারে। বিশ্ববিদালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তারা ভালো চাকরি পেতে পারে, তাদের পিতা-মাতাকে সাহায্য করতে পারে, নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।
১৯৭৩ তিয়াত্তর সালে, পাই চিয়ান সাহেব চীনের উত্তরপূর্বাঞ্চলে একটি কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হচ্ছেন পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্য। তাঁদের স্কুলে লেখাপড়াকে সমর্থন দেয়ার জন্য তার বাবা-মা দিনরাত দারুণ ব্যস্ত থাকেন। তার বড় ভাই ও ছোট বন স্কুলে যাওয়ার সুযোগ ছেড়ে দিয়ে তাঁকে সুযোগ করে দেয়। এ জন্য তিনি সবোর্চ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে খুব পরিশ্রম করেন ও কঠোরভাবে লেখাপড়া করেন। অবশেষে তিনি বিশ্ববিদালয়ে র্ভতি হতে সক্ষম হন। ১৯৯৫ সালে তিনি বিশ্ববিদালয় থেকে ভালোভাবে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর তিনি একটি মাধ্যমিক স্কুলের শরীরচর্চা শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
পাই চিয়ান সাহেব একটি গরীব পরিবারের ছেলে। এজন্য তিনি গরীব পরিবারের ছেলেমেয়েদের প্রতি বরাবরই সহানুভূতিশীল। যেসব শিক্ষার্থীর স্কোর ভালো ও যারা গরীব, তাদের প্রতি তিনি বিশেষ মনোযোগ দেন। একসময় তিনি গরীব ও অনাথা শিশুদের দত্তক নেওয়া শুরু করেন। তিনি আশা করেন, তাঁর সাহায্যে ও শিক্ষায়, এসব গরীব শিশু একদিন মানুষের মতো মানুষ হবে এবং নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হবে।
কিন্তু একজন পিই শিক্ষকের বেতন বেশি না। এতো বেশি ছেলেমেয়ের জীবন নিশ্চিত করা তার জন্য খুব কঠিন। এ ছাড়া তিনি নিজেও এতো বেশি ছেলেমেয়ের যত্ন নিতে পারেন না। এজন্য তিনি তাঁর মা-কে নিয়ে আসেন। দু'জনই একসাথে তাদের যত্ন নেওয়া শুরু করেন। মা তার গ্রামবাড়ির কয়েক ডজন গরু বিক্রি করে সে অর্থ নিয়ে আসেন। এ অর্থ দত্তক গরীব ছেলেমেয়েদের পেছনে ব্যয় করেন। আস্তে আস্তে পাই চিয়ানের বড় ভাই, বড় বোনসহ অনেকে নিজ নিজ চাকরি থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটা অংশ ছেলেমেয়েদের যত্নে ব্যয় করা শুরু করেন।
২০০৪ সালের বেইজিং আন্তর্জাতিক ম্যারাথন প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে, তাঁর প্রশিক্ষণ ও শিক্ষায়, তাঁর ছেলেমেয়েরা ক্রমে ক্রমে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভালো ফলাফল করতে শুরু করে।
২০০৮ সালে পাই চিয়া বেইজিং গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসের মশাল বহনের যোগ্যতা অর্জন করেন। ২০০৯ সালে সিসিটিভি তাঁর গল্প নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরী করে। ক্রমে ক্রমে জনতা তার গল্প এবং "স্বপ্নের বাড়ি" সম্পর্কে জানতে পারে। সমাজের বিভিন্ন মহল থেকে তিনি সমর্থন পেতে শুরু করেন। অনেকে ভাত, আটা, ময়দা ইত্যাদি দান করেন। পাশাপাশি, তার স্বপ্নের বাড়িতে আরও অনাথ ছেলেমেয়ে আসতে শুরু করে।
বিগত ২৪ বছরে, পাই চিয়ান সাহেব মোট ১২০টিরও বেশি ছেলেমেয়েকে দত্তক নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৬ জন বিশ্ববিদালয়ে র্ভতি হয়েছেন এবং এর মধ্যে ৪ জন এমএ ক্লাশে পড়ছেন।
পাই চিয়ান সাহেব ছেলেমেয়েদেরকে শারীরিক প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি অন্যান্য শিক্ষাও দিয়ে থাকেন। তিনি তাদেরকে কনফুসিয়াসসহ চীনের ঐতিহ্যবাহী চিন্তাবিদদের চিন্তাধারা শিক্ষা দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন পদ্ধতিতে তিনি তাদেরকে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করতে উত্সাহ দেন।
বড় ভাই, আপনি এ গল্প শুনে কেমন লাগল?