এই পর্যন্ত চুং পা গ্রামে লিউ ছাও প্রায় তিন মাস ধরে কাজ করেছেন। সিএমজি'র সাংবাদিক হিসেবে এখন গ্রামের দারিদ্র্যমুক্তকরণ কর্মকর্তা হয়েছেন, এখন তাঁর একটি ই জাতির মানুষের মতো নামও আছে, 'ই হুও কুও কুও'। গ্রামবাসীরা তাঁকে আদর করে 'সম্পাদক হুও হুও' ডাকে। গ্রামে কাজের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে তিনি বলেন, ক্লান্তিকর তবে আনন্দ আছে, কষ্ট হলেও এ অভিজ্ঞতা অনেক মূল্যবান।
লিউ ছাও বলেন, কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে যে, এখানকার জীবন কি খুব অসুবিধা হয়? আমি বলি, যত কষ্ট হোক না কেন, আমি এ জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবো। আমার অসুবিধা মানে গ্রামবাসীর অসুবিধা। আমি, আমার চেষ্টার মাধ্যমে পুরো গ্রামের ৪২৪৫জন মানুষকে সত্যিকারের গ্রাম-পুনরুদ্ধারের পথে নিয়ে যেতে চাই।
৪ জুন, লিউ ছাও নিজের জীবনে প্রথমবারের মত ভূমিধস দেখেন। তখন চুং বা গ্রামে প্রচুর ঝড়বৃষ্টি হচ্ছিল। এর ফলে ভূমিধস হয়। বিপদজনক মুহূর্তে, লিউ ছাও ও গ্রামের অন্য কর্মীরা প্রতিটি পরিবারে গিয়ে সবাইকে সতর্কতা দেন। সবাই হাতে হাত রেখে মানবপ্রাচীর তৈরি করে। বৃদ্ধসহ গ্রামের সব মানুষকে নিরাপদে স্থানান্তরিত করে; সেদিন কেউ হতাহত হয় নি।
সে দিনের কথা স্মরণ করে লিউ ছাও বলেন, যখন আমি কর্দমাক্ত নদীতে পা রাখি, তখন আমি বুঝতে পরি যে, সত্যিকারের ভূমিধস কী ভয়াবহ। ভূমিধসের সময় অনেক বড় বড় পাথর ছুটে আসে, পায়ের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে না পারলে কর্দমাক্ত স্রোতের সঙ্গে ভেসে চলে যেতে হবে।
ভূমিধসের কারণে চুং পা গ্রামের বাড়িঘর, জমি ও সেতুর বিভিন্ন মাত্রার ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে ভালো খবর হলো কোনো মানুষ হতাহত হয় নি। পরে লিউ ছাও গ্রামবাসীদের নিয়ে পরিষ্কার ও মেরামতের কাজ করেন। যাতে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায়।
সম্প্রতি তাদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করাসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে চুং পা গ্রামের নিবন্ধিত ৪১০টি দরিদ্র পরিবারের নিরাপদ বাসস্থান সমস্যার সমাধান হয়েছে। ১৫ জুন, লিউ ছাও ও গ্রামের অন্যান্য কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবকরা 'ভালোবাসা সেবার গাড়ি দল' গঠন করে চূড়ান্তভাবে ১৪টি পরিবার স্থানান্তরের কাজে সাহায্য করেন।
লিউ ছাও জানান, দরিদ্র পরিবারের জীবনযাপনের মান, বাড়িঘরের মান উন্নত করার জন্য নতুন আবাসিক এলাকায় মাঝারি আকারের স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৮শ' শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক স্কুল এবং ৩ শ' শিশুর জন্য কিন্ডারগার্টেন নির্মিত হবে। এর আগে চুং পা গ্রামে সরকারি স্কুল ছিল না। ভবিষ্যতে গ্রামে সরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হবে। শিক্ষাদানের মান ব্যাপকভাবে উন্নত হবে।
নিজের প্রত্যাশা সম্বন্ধে লিউ ছাও বলেন, আশা করি, দুই বছর পর আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারবো যে, এখানকার প্রতিটি পাহাড়ে আমি উঠেছি, প্রত্যেক ইঞ্চি জমিতে আমি পা দিয়েছি, প্রতিটি মানুষকে আমি চিনি। প্রত্যেক পরিবার আমাদের প্রচেষ্টা ও নিজস্ব পরিশ্রমের মাধ্যমে ভালো জীবনের পথে এগিয়ে গেছে।