নভেল করোনাভাইরাস মহামারীতে ইউরোপের গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত দেশ স্পেন। দেশটির সরকার মার্চ মাস থেকে টানা ছয়বার জাতীয় জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ায়। সর্বশেষ ২১শে জুন জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হয়। চায়না মিডিয়া গ্রুপের প্রতিবেদক সম্প্রতি স্পেনের মাদ্রিদে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের চীনা ডিন মিস ছেন ডাননার সাক্ষাত্কার নেন। তিনি আমাদের বলেন যে, কীভাবে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট মহামারীর সময়ে তার কাজ ও শিক্ষাপদ্ধতি পরিবর্তন করেছিল, কীভাবে মহামারী রোধ ও লড়াই করেছিল এবং চীন ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সহযোগিতা এগিয়ে নিয়েছিল। তিনি বলেন যে, চীনা ভাষা সেতু ও বন্ধন হিসেবে দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ ও বোঝাপড়ার উন্নত করতে পারে এবং মহামারীতে কিছু পশ্চিমা দেশ ও গণমাধ্যমের চীন সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝি ও পক্ষপাতিত্ব দূর করতে সহায়তা করতে পারে।
২০০৫ সালে মাদ্রিদে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি স্পেনের প্রথম কনফুসিয়াস ইনস্টিউটও বটে। স্পেনের অন্যতম গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল হলো মাদ্রিদ।
ডিন ছেন বলেন, মাদ্রিদ কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট মহামারী প্রতিরোধে অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন কাজ শুরু করে। জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে তিনি কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের জন্য মাস্ক ও জীবাণুনাশক সরবরাহ করার প্রস্তুতি নেন এবং এন্টি-মহামারী উপকরণের সন্ধান শুরু করেন। মার্চ মাসে স্পেনে জরুরি অবস্থা শুরুর আগে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট যথেষ্ট প্রস্তুতি নেয় এবং শিক্ষক ও কর্মীদের জন্য উপকরণের কোনও অভাব হয় নি।
এ ছাড়া, স্পেনে নিযুক্ত চীনা দূতাবাস, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের সদর দফতর এবং শাংহাই ফরেন স্টাডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতারা কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের সহায়তায় ভিডিও কনফারেন্স করে, দেশটিকে সমবেদনা জানায় এবং মহামারী প্রতিরোধে বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহের দিকে অনেক গুরুত্ব দেয়। একই সময় মাদ্রিদে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট স্পেনের স্থানীয় চীনা গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে চীনে এবং স্থানীয় স্প্যানিশ সংস্থাগুলিকে তাদের দক্ষতার মধ্যে সহায়তা দিয়েছে।
ডিন ছেন বলেন, "চীনে মহামারীর সময় মাদ্রিদে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের কর্মীরা বিভিন্ন চীনা গোষ্ঠীর সঙ্গে সহযোগিতা করে স্থানীয়ভাবে সরবরাহ সন্ধান করে চীনা হাসপাতালের জন্য ১০০ সেট প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পাঠায়। পরবর্তীতে স্পেনে মহামারী শুরু হলে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট চাইনিজ সোসাইটি অফ স্পেন, ভ্যালেন্সিয়া চায়না চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং অন্যান্য চীনা দলগুলির মাস্ক পায়। আমরা মাদ্রিদের লেকানেস শহরেও মাস্ক দেই এবং স্থানীয় মহামারী প্রতিরোধে সমর্থন দেওয়ার জন্য স্প্যানিশ বেসরকারি সংস্থাকে অনুদান দেই। অনুদানপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো খুব খুশি হয়েছিল এবং কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটকে ধন্যবাদ জানিয়েছিল।"
মহামারীর কারণে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে সরাসরি ক্লাস ও কোর্স বাতিল করে দেয়। শিক্ষার্থীদের শেখার চাহিদা পূরণ করার জন্য এবং কোর্সের অগ্রগতিতে দেরি না করার জন্য, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট অনলাইনে পাঠদানের পদ্ধতি অনুসন্ধান করে এবং প্রয়োগ করে, অনলাইন কোর্সের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক সমস্যাগুলি সংগ্রহ করে এবং একে একে তা সমাধান করে। বর্তমানে, বেশিরভাগ কোর্স সফলভাবে চালু রয়েছে এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে অনলাইনে শিক্ষার পদ্ধতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে।
যেহেতু বড় আকারের সমাবেশের কার্যক্রমগুলো রাখা যায় না, তাই বক্তৃতা, সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতার ক্লাস এবং বই ক্লাবের মতো অফলাইন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
শেখার বিষয়বস্তু সমৃদ্ধ করতে এবং শিক্ষার্থীদের চীনা ভাষা শেখার উত্সাহ বাড়াতে, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট বিভিন্ন অনলাইন কার্যক্রম সক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করে।
ডিন ছেন বলেন, "আমরা অনলাইন কোর্স ও কার্যক্রম প্রচারের পদক্ষেপ নিয়েছি এবং মাদ্রিদের সামাজিক নেটওয়ার্কে 'চীনের প্রস্তাব' নামে একটি ধারাবাহিক কার্যক্রম চালু করেছি। চীনা ও বিদেশি কর্মীরা একসাথে চীনা চলচ্চিত্র, টিভি, সংগীত, বই, খাদ্য, শহর ইত্যাদি সম্পর্কে পরামর্শ দেয়, তারপরে ভিডিও এবং ছবি তৈরি করে এবং সরাসরি অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করে। তা ছাড়া, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট নিয়মিত চীনা কর্নার কার্যক্রমকে একটি অনলাইন ফর্মে রূপান্তরের চেষ্টা করে, যা স্প্যানিশ মানুষদের শুধু অংশগ্রহণেই আকৃষ্ট করে নি, বরং লাতিন আমেরিকার চীনা ভাষার প্রতি আগ্রহীও করে তোলে।"
যখন স্প্যানিশ মহামারী বেশ গুরুতর হয়ে ওঠে, তখন একটি যোগাযোগকারী সরঞ্জাম হিসাবে চীনা ভাষা উভয় পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
চীনা ভাষায় অধ্যয়নরত অনেক বিদেশি শিক্ষার্থী মনে করেন যে স্পেন ও চীনের একে অপরকে সহায়তা করা উচিত এবং কিছু শিক্ষার্থী আশা করেন যে, দু'দেশের টিকা গবেষণায় সহযোগিতা করা উচিত। ভাইরাস সম্পর্কিত তথ্য ও উপাত্ত ভাগাভাগি করা উচিত। তা ছাড়া, উচ্চতর চীনা দক্ষতা অর্জনকারী শিক্ষার্থীরা পশ্চিমা কিছু দেশের একতরফা মিথ্যাচারে অন্ধ না হয়ে সময়মতো চীনা কর্তৃপক্ষের চ্যানেল থেকে বিভিন্ন বিষয়ে সত্য জানতে পেরেছে।