চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বহুবার বলেছেন যে, সিপিসি'র সদস্যদের কখনও মৌলিক লক্ষ্য ভুলে গেলে চলবে না। তাদেরকে মৌলিক লক্ষ্যের কথা মাথায় রেখেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। ১৯২১ সালে চীনের চেচিয়াং প্রদেশের চিয়াংশিং শহরের দক্ষিণ হ্রদে লাল নৌকায় চীনের বিপ্লবের আরম্ভ। সিপিসি'র প্রথম অধিবেশন সেখানে আয়োজিত হয়। ২০১৭ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আরেকবার চিয়াংশি পরিদর্শন করেন এবং সেখানে তিনি বলেন, কেবল নিবিড়ভাবে মৌলিক লক্ষ্য মাথায় রেখে চিরদিনের মতো সংগ্রাম করে সিপিসি'র প্রাণচাঞ্চল্য বজায় রাখতে হবে।
মৌলিক লক্ষ্য কী? চীনা জনগণের সুখী জীবন ও চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানই হচ্ছে মৌলিক লক্ষ্য।
জনগণের সেবা করা সিপিসি'র গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। জনগণের ওপর নির্ভর করে জনগণের কল্যাণ বয়ে আনা এবং জনগণকে গুরুত্ব দেয়া হবে সিপিসি'র সদস্যদের মূল উদ্দেশ্য। ব্যাপকভাবে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে সিপিসি'র উন্নয়ন-পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে।
গত কয়েক বছরে চীনের বিভিন্ন বিপ্লবী এলাকা পরিদর্শন করেন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। তিনি হ্যপেই প্রদেশের সিবাইপো জাদুঘর, শাআনসি প্রদেশের ইয়ান'আন সিপিসি'র সপ্তম কংগ্রেসের সভার স্থান, কুইচৌ জুন'ই সভার স্থান ইত্যাদি পরিদর্শন করেন। সি চিন পিং তার পরিদর্শনের সময় ইতিহাস স্মরণ করেন এবং নতুন প্রজন্মের সিপিসি'র সদস্যদের জানান যে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ভিত্তি হচ্ছে জনগণ।
প্রেসিডেন্ট সি আরেকটি কথা বলেছিলেন। তিনি বলেন: 'আমরা যাত্রার কারণ ও যাত্রার পথ ভুলে যেতে পারি না।' এ বক্তব্যের দার্শনিক মূল্য আছে। একজন মানুষ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে পরিকল্পনা বা লক্ষ্য ঠিক না-করে সুন্দরভাবে জীবন কাটাতে পারে না। কোনো কাজ ভালোভাবে করতে চাইলে অবশ্যই আগে ভালো বিবেচনা ও পরিকল্পনা করতে হবে।
২০২০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কোভিড-১৯ মহামারী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে বহু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। চীনও তাদের মধ্যে একটি। নতুন যুগে চ্যালেঞ্জ ও সংকটের সাথে সুযোগও থাকে। নিবিড়ভাবে মৌলিক লক্ষ্যকে মাথায় রাখলে নতুন নতুন সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।
বর্তমানে চীনের কোভিড-১৯ মহামারী নিয়ন্ত্রণকাজে কিছু অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। ৩ মাসের মধ্যে ১৪০ কোটি মানুষের একটি বড় দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। তবে গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাতের কারণে এখন দক্ষিণ চীনে বন্যা দেখা দিয়েছে। এ দুর্যোগ প্রতিরোধে জনগণকে সর্বপ্রথম স্থানে রাখার আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট সি। এখন চীনের বিভিন্ন এলাকায় সিপিসি'র সদস্যরা বন্যাউপদ্রুত এলাকার নাগরিকদের উদ্ধার ও স্থানান্তরে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে, হুপেই প্রদেশে। সেখানে জানুয়ারি মাস থেকে এপ্রিল মাসের শুরু পর্যন্ত কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধ করা হয়েছে এবং জুন মাস থেকে বন্যার ঠেকানোর কাজও শুরু হয়। তাই প্রেসিডেন্ট সি সবসময় বলেন, হুপেই প্রদেশ, বিশেষ করে উহান শহর এক 'বীরদের নগর'। মহামারীর সময়ও তিনি উহান পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথাবার্তা বলেন। তিনি তাদের খোঁজখবর নেন।
প্রেসিডেন্ট সি'র আচরণে সিপিসি'র সদস্যের চরিত্র প্রতিফলিত হন। দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সি ব্যাপক মনোযোগ দেন। সচ্ছল সমাজ গঠন সম্পর্কে তিনি বলেন, দরিদ্র এলাকার গ্রামবাসীদের জীবনমান উন্নত হলে চীনে সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।
তা ছাড়া, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রাণশক্তি জোরদারে কঠোরভাবে পার্টি প্রশাসন করা এবং দুর্নীতিদমনের ওপর তিনি গুরুত্ব দেন। ঘুষ দেওয়া-নেওয়া কোনোমতেই সহ্য করা হবে না বলেও বারবার উল্লেখ করেন তিনি।
ঘুষ খাওয়া বড় কর্মকর্তাকে 'বাঘ' আর তৃণমূলের কর্মকর্তাকে 'মাছি'-র সঙ্গে তুলনা করে সি বলেন, দুর্নীতিদমনের ক্ষেত্রে 'বাঘ ও মাছি'—কাউকে ছাড় দেওয়া চলবে না। তাঁর এ কথা থেকে বোঝা যায়, দারিদ্র্যবিমোচন ও সচ্ছল সমাজ গড় তোলার বড় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটি দক্ষ ক্ষমতাসীন পার্টি প্রয়োজন। কেবল পার্টির দুর্বলতা দূর করে দক্ষতা উন্নত করা সম্ভব। গত কয়েক বছরে চীনা নাগরিকদের শিক্ষা, চিকিত্সাবীমা, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি এবং বৃদ্ধকালে লোকদের দেখা-শোনাসহ বিভিন্ন খাতে সুবিধাজনক নীতি চালু করতে নির্দেশনা দেন তিনি। উনবিংশ জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, চীনের সমাজের অসঙ্গতি জনগণের সুখী জীবনের চাহিদা ও ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।
চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের 'চীনা স্বপ্ন' বাস্তবায়ন করতে হবে জনগণের মাধ্যমেই। দেশের উন্নয়ন সম্পর্কে সি বলেন, সিপিসি'র উন্নয়ন মানে চিরদিনের মতো জনগণের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা। আত্মবিপ্লব ও সংগ্রামের সাহস ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞতা থাকতে হবে। জনগণ সিপিসি'র কার্যক্রমের ভিত্তি।
আগের অনুষ্ঠানে আমরা সি'র প্রিয় বাক্যের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। একবার তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক প্রশাসন কার্যকর করতে চাইলে জনগণের ইচ্ছাকে মেনে নিতে হবে। জনগণের ইচ্ছা লঙ্ঘিত হলে ক্ষমতাসীন পার্টির শাসনও ব্যর্থ হবে। সেই জন্য তিনি সময় পেলে জনগণের কাছে চলে আসেন। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র লোকদের জীবনযাপন দেখতে যান। এ সম্পর্কে সি বলেন, 'ব্যস্ত হলেও আমি সময় পেলে গ্রামবাসীদের কাছে যেতে চেষ্টা করি। কারণ তাদের কথা আমি সবসময় মনে রাখি।' তিব্বত, ইয়ুননান, সিছুয়ান ও শাআনসিসহ চীনের ১৪টি চরম দরিদ্র এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। তা থেকে বোঝা যায় জনগণের প্রতি তাঁর গভীর আবেগ।
শাআনসি প্রদেশের লিয়াংচিয়াহ্য গিয়ে সি মুগ্ধ কণ্ঠে বলেন, 'আমি চিরদিন লিয়াংচিয়াহ্যকে মনে রাখব। ৪০ বছর পর হলেও স্থানীয় গ্রামবাসী ও জনগণকে ভুলে যাবো না।'
চরম দরিদ্র এলাকায় গ্রামবাসীদের জীবনযাপন দেখে তিনি অনেক দুঃখ পান। যখন জানতে পারেন তাদের জীবনমান উন্নত হয়েছে বা নতুন বাড়িতে তারা স্থানান্তরিত হয়েছে, তখন আবার খুশিও হন।
গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের সাথে কথাবার্তায় তিনি জানতে চান: নতুন বাড়িঘর নির্মাণে কতো টাকা খরচ হয়েছে? পরিবারের জন্য খাদ্যশস্যের চালান যথেষ্ঠ কি না? বাচ্চারা স্কুলে যেতে কতোটা পথ অতিক্রম করে? সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে এমনই আগ্রহী সি চিন পিং।
দরিদ্র এলাকার লোকদের সাথে কথাবার্তায় সি সবাই উত্সাহ দেন। তিনি বলেন, 'তোমাদের জীবনযাপন অবশ্যই উন্নত হবে। আরো সুখী জীবন বাস্তবায়ন করা সম্ভব।' আসলে এমন উত্সাহব্যঞ্জক কথা সত্যি হয়েছে। দারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্যমাত্রা এ বছরের শেষ দিকে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে ইতালির জাতীয় সংসদের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ফিগো'র সাথে বৈঠক করেন সি। তখন ফিগো সিকে বলেন: 'আমি স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার পর অনেক আনন্দিত। আপনি চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে কী অনুভব করেন?' সি উত্তরে বলেন, চীনা জনগণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে উত্সর্গ করতে চাই।