দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। ১ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম ২৫ দিনে রোগী ছিল দুই অংকে, শনাক্ত হয় মাত্র ৫৪ জন। পরবর্তী ৩০ দিনের মাথায় ১ মে'তে গিয়ে সংখ্যাটি দাঁড়ায় ৪ অংকে, ছাড়িয়ে যায় ৮ হাজার। ১ জুনে পরবর্তী ৩০ দিনে গিয়ে তা ৬ গুণের বেশি হয়, রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০ হাজারের কিছু কম। আর ২ জুলাই শেষ ৩০ দিনে রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় দেড় লাখ-যা মোট শনাক্তের ৬৬ দশমিক ৮১ ভাগ!
করোনায় মৃত্যুর হারও আক্রান্তের মতোই। ১৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। ১ এপ্রিল পর্যন্ত তা এক অংকে ছিল, মারা যায় মাত্র ৬ জন। ১ মে পর্যন্ত ১৭০ জন, ১ জুন পর্যন্ত মারা যান ৬৭২ জন। আর ৫ জুলাইয়ে এসে তা দু'হাজার ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ শেষ মাসে মারা গেছেন প্রায় ১ ৪০০ জনের মতো- যা মোট মৃত্যুর ৬৪ দশমিক ৪১ শতাংশ।
জুন মাসে এই যে অস্বাভাবিক মৃত্যু ও নতুন রোগী- এর কারণ স্পষ্টতই ৩১ মে থেকে লকডাউন তুলে নিয়ে সব কিছু খুলে দেয়া। বিশেষজ্ঞরা বারবারই এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন। জুনে যে মৃত্যু ও নতুন রোগীর মিছিল শুরু হয়েছে তা জুলাইতে অব্যাহত থাকবে এমন সতর্কবার্তাও দিচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
এরই মধ্যে দোকানপাট-শপিং মল খোলা রাখার সময় বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। নিশ্চিতভাবে তা করোনা সংক্রমণ বাড়াবে। এরই মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক করোনা পরীক্ষার জন্য সরকারি ফি ২০০ থেকে ৫০০ টাকা ধার্য করার ঘোষণা দিয়েছেন। বেসরকারি পর্যায়ে যা হবে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। এতে মানুষজন করোনা পরীক্ষায় নিরুৎসাহিত হবে বলেও মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সামনে করোনা সংক্রমণের একটা বড় ঝুঁকি নিয়ে আসছে কোরবাণীর পশুর হাট। সরকারের তরফে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে, জনবহুল এলাকা এড়িয়ে কোরবাণীর পশুর হাট বসানোর কথা বলা হচ্ছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে কোরবানীর হাটে স্বাস্থ্যবিধি আর সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা প্রায় অসম্ভব এক ব্যাপার। এর বাইরে ঈদে গণপরিবহন খোলা থাকলে জনচলাচলও বাড়বে। এর সবকিছুই করোনার বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে জুলাই-আগস্টে।
প্রতিনিয়ত সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে চললেও সরকার ঘোষিত জোন-ভিত্তিক লকডাউনেরও খুব একটা তৎপরতা নেই। রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের পর ৩ জুলাই থেকে দ্বিতীয় এলাকা হিসেবে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে ওয়ারী। অথচ স্বাস্থ্য বিভাগের প্রাথমিক তালিকায় রাজধানীতে ৪৫টি রেডজোনের কথা বলা হয়েছিল। দেশের ৯টি জেলায় যে এলাকভিত্তিক লকডাউন চলছে-তাও অনেক জায়গায় যথাযথভাবে মানা হচ্ছে না- এমন খবর হরহামেশাই গণমাধ্যমে আসছে।
এতসব খারাপ খবরের মধ্যে একটা ভালো খবর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়-বিএসএমএমইউতে চালু হয়েছে ৩৭০ শয্যার করোনা সেন্টার। উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে করোনা সেন্টারটি চালু হয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করায় সেন্টারের প্রতিটি শয্যায় থাকবে অক্সিজেন সুবিধা। মূলত গুরুতর রোগীদেরই বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা দেয়া হবে।
করোনা-দুর্যোগের মধ্যে দেশের জন্য সবচেয়ে বড় সুসংবাদটি হলো: করোনার টিকা উদ্ভাবন প্রচেষ্টার খবর দিয়েছে বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। ২ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে পশুর শরীরে এ টিকার সফল প্রয়োগ করেছেন তারা। দ্বিতীয় পর্যায়ে পরীক্ষার পর মানবদেহে টিকাটির ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার জন্য সরকারের অনুমতি চাওয়া হবে। দেশের মানুষ গ্লোব বায়োটেকের এ উদ্ভাবনকে আনন্দের সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বে ১৪০টি টিকা তৈরির উদ্যোগ চলছে। এর মধ্যে ১০টি দেশ ও প্রতিষ্ঠান টিকা উদ্ভাবনের খবর দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড, যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না ও চীনের প্রতিষ্ঠান টিকা উদ্ভাবনে এগিয়ে। এ তালিকায় ১১তম দেশ হলো বাংলাদেশ। গ্লোব বায়োটেকের এ উদ্যোগ সাফল্য পেলে তা বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ববাসীর জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে।
ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।