'তুফু: চীনের সবচে মহান কবি' শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র
  2020-07-01 14:47:46  cri

প্রিয় বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানে আমরা মিশেল উড নামে এক ব্রিটিশ ইতিহাসবেত্তা ও তথ্যচিত্র পরিচালক এবং 'Du Fu: China's Greatest Poet বা তুফু: চীনের সবচেয়ে মহান কবি' নামের একটি শিল্পকর্মের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো।

প্রিয় বন্ধুরা, যদি আমরা মিশেল উডের শিল্পকর্ম নিয়ে কথা বলি, তাহলে আমরা বুঝতে পারব যে, তার শিল্পকর্ম চীনের ৫ হাজার বছরেরও বেশি সময়ের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। তাঁকে 'চীনা গল্প বলায় সবচে দক্ষ' পশ্চিমা তথ্যচিত্রের পরিচালক হিসেবে গণ্য করা হয়।

মিশেল উড বলেন, মাধ্যমিক স্কুলে লেখাপড়ার সময় তুফু'র কবিতার প্রতি তার আগ্রহ শুরু হয়। তিনি বলেন, "যখন আমার বয়স ১৫/১৬ বছর ছিলো, তখন আমি বইয়ের দোকানে তুফু'র কবিতা দেখেছিলাম। প্রথম লাইন পড়েই আমি মুগ্ধ হয়েছি। যা আমাকে অন্য এক জগতে উপহার দিয়েছে। সেই জগত সম্পর্কে আমি আগে কখনওই জানতাম না এবং কল্পনাও করতাম না। তারপর এসব কবিতা আমার মনে রেখাপাত করে।"

'Du Fu: China's Greatest Poet বা তুফু: চীনের সবচেয়ে মহান কবি' নামে তার এই তথ্যচিত্র প্রসঙ্গে মিশেল উড বলেন, আমার এই তথ্যচিত্র খুব ছোটখাটো হলেও এটি আমার কাছে একটি ভালোবাসার জিনিস। তিনি বলেন, কোনো কোনো পশ্চিমা লোক তাকে বলেন যে, এই তথ্যচিত্র তাদের দৃষ্টিসীমা প্রসারিত করেছে। এতে তারা এখন চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন, যা আগে তারা জানতেন না। অনেক পশ্চিমা লোক জানতেন না যে, চীন বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ও দীর্ঘকালীন কবিতার ঐতিহ্য ধারণ করে।

মিশেল উড বলেন, আরও অনেক ব্রিটিশ দর্শক তাকে জানান যে, বর্তমান সময়টি তার এই তথ্যচিত্র প্রচার করা এবং উপভোগ করার সবচেয়ে ভালো সময়। কারণ এটি পারস্পরিক সাংস্কৃতিক সমঝোতা বেগবান করতে সক্ষম।

তিনি মনে করেন, বর্তমান সময় সাংস্কৃতিক বিনিময়, সংলাপ ও পারস্পরিক সমঝোতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশ ও চীনের মধ্যে। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বে ভয়ঙ্কর বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে। চীনের বিরুদ্ধে অনেক কুসংস্কার ও বৈষম্য আমার মনে আঘাত দিয়েছে। আমি চীনা মানুষের মতো সমান অনুভূতি বোধ করতে পারি। চীনের বিরুদ্ধে এসব মিথ্যাচার ও আক্রমণ চালানো উচিত্ নয় বলে তিনি মনে করেন।

তথ্যচিত্রটি বাস্তব প্রভাব ফেলতে সক্ষম এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটসম্পন্ন মানুষের পারস্পরিক সমঝোতার জন্য দারুণ সহায়ক। এটাই হলো আমার এ তথ্যচিত্র নির্মাণের প্রধান কারণ।

মিশেল উড বলেন, 'Du Fu: China's Greatest Poet তুফু: চীনের সবচেয়ে মহান কবি' নামে তার এই তথ্যচিত্রটি প্রচারের পর কিছু লোক চিঠিতে জানতে চান যে, কোথায় তুফু'র কবিতা পাওয়া যায়। আমার এ তথ্যচিত্রের কারণে চীন ও চীনের কবিতার প্রতি মানুষের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এটি খুব মজার বলে তিনি মনে করেন।

তিনি স্বীকার করেন, কবিতা অনুবাদের প্রক্রিয়ায় অবশ্যই আক্ষেপ থাকে। বিদেশি ভাষায় তুফু'র কবিতার প্রকৃত অর্থ পুরোপুরি প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন, তাই আমার প্রামাণ্যচিত্রে কবিতা পড়ার জন্য ইয়েন ম্যাককলানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তথ্যচিত্রে তিনি একা একা ক্যামেরার সামনে তুফু'র কবিতা পড়ে শোনান। এটি ঠিক যেন তুফু'র সারা জীবনের দিকে ফিরে তাকানো! মিশেল উড বলেন, আমি ইয়েনকে ধন্যবাদ দিতে চাই। তিনি আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। তিনি বিনাখরচে আমাকে সাহায্য করেছেন। তারপর তাকে ধন্যবাদ জানাতে আমি তার নামে একটি গণকল্যাণমূলক তহবিলে চাঁদা দিয়েছি।

তথ্যচিত্রের পরিচালক হিসেব তিনি খুব স্পষ্টভাবেই জানেন যে, সব কাজ নিখুঁতভাবে করা যায় না। তিনি সীমিত সম্পদ, খরচ ও সময় দিয়ে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, তাই যথেষ্ট বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, চীনের সংস্কৃতি ও কবিতা সম্পর্কে তার জানাশোনা খুব সীমিত। তবে তিনি খুব ভালোভাবে জানেন যে, কবিতা মানবজাতির জীবন ও নৈতিকতার সঙ্গে সম্পর্কিত। কবিতায় সত্য, বিশ্বস্ততা, পরিবার, মৈত্রী ও দৃঢ়তার প্রশংসা করা হয়। তুফু'র কবিতা এখনও প্রচলিত হওয়ার কারণ শুধু তার সুন্দর ভাষাই নয়, বরং তার কবিতাগুলোতে মানবতার অনন্ত গৌরব ফুটে ওঠে।

উল্লেখ্য, 'Du Fu: China's Greatest Poet তুফু: চীনের সবচেয়ে মহান কবি' নামের এই তথ্যচিত্র নির্মাণের কাজে অংশ নিয়েছেন অনেক চীনা কর্মী। তাই এদিক থেকে বলা যায়, এটি হলো চীন ও ব্রিটেনের সহযোগিতায় তৈরি একটি সাংস্কৃতিক শিল্পকর্ম। তিনি সম্প্রতি 'ব্রিটেন-চীন সমঝোতা সমিতির' চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।

চীন ও ব্রিটেনের সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সহযোগিতা প্রসঙ্গে মিশেল উড বলেন, 'আমি সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একজন বিশ্বস্ত ভক্ত। আমি মনে করি, মানুষের পারস্পরিক সমঝোতা বাড়ানো উচিত্। চলচ্চিত্র ও টিভি নাটক এক্ষেত্রে সত্যিই সাহায্য করতে পারে। তথ্যচিত্র খুব ভালো একটি পদ্ধতি এবং এটি জনগণের আগ্রহ চাঙ্গা করার ক্ষমতা রাখে।'

তিনি বলেন, 'ব্রিটেন-চীন সমঝোতা সমিতির চেয়ারম্যান' হিসেবে কাজ করতে পেরে আমি গৌরব বোধ করি। এটি হলো ব্রিটেনের উদ্যোগে দেশ দু'টির পারস্পরিক সমঝোতা বৃদ্ধির একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য হলো ব্রিটেন ও চীনের পারস্পরিক সমঝোতা বাড়ানো এবং পারস্পরিক সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়া।

বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। যেমন, জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলা এবং নভেল করোনাভাইরাস মোকাবিলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীন ও ব্রিটেনের পরস্পরকে সহযোগিতা ও বিনিময় করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে জলবায়ু সংকট সমাধানে আমরা চীনকে 'বিশ্বনেতা' হিসেবে মনে করি।

চীন ও পশ্চিমা দেশগুলোর সংস্কৃতিতে নভেল করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব প্রসঙ্গে মিশেল উড বলেন, 'সাংস্কৃতিক বিনিময় বন্ধ দেখতে চাই না। তবে আমরা উদ্বেগের মধ্যে আছি। আমি মনে করি, মহামারী সাংস্কৃতিক বিনিময়ে ক্ষতি করতে পারে। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি, মহামারী যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ হবে। আরো বেশি লোক আমাদের সঙ্গে এই বিশ্বকে আরো সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য সাংস্কৃতিক সেতু স্থাপন করবেন এবং একসঙ্গে বৈষম্য নির্মূল করবেন।

এখন পর্যন্ত মিশেল উড ১২ দফায় চীনে এসেছেন। চীনে আসতে দারুণ পছন্দ করেন তিনি। তিনি বলেন, চীনে থাকতে খুব আরাম লাগে। চীনের ভূমিতে বিমান অবতরণ করার মুহূর্তে তার ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি হয় বলে জানান তিনি।

লিলি/তৌহিদ/শুয়ে

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040