আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন 'রোববারের আলাপন'। আপনাদের সঙ্গে আছি আলিম এবং শিয়েনান আকাশ।
আকাশ: বড় ভাই, জুন ২৫ হলো একটি চীনা ঐতিহ্যবাহী দিবস? তা কি আপনি জানেন?
আলিম: কি ভাই?
আকাশ: বন্ধুরা, ২৫ জুন হলো ড্রাগন নৌকা দিবস। এদিন থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী ছুটি রয়েছে।
আলিম: আচ্ছা, আকাশ ভাই, এ দিনে আসলে চীনারা কি কি করেন?
আকাশ: এদিনে চীনারা ড্রাগন নৌকা প্রতিযোগিতা করে এবং চোং চি খায়। বড় ভাই, আপনি কি চোং চি খেয়েছেন?
আলিম:...
আকাশ: বন্ধুরা, চোং চি আঠালো ভাতের সঙ্গে মাংস বা রেড বিনের পেস্ট মিশিয়ে তৈরি একধরনের খাবার। সাধারণত এ খাবার গাছের পাতায় মোড়ানো থাকে। আর এটি রান্না হয় ভাপে। চীনের দক্ষিণাঞ্চলে সাধারত চোং চির ভেতরে মাংস থাকে। স্বাদ হয় নোনতা। চীনের উত্তরাঞ্চলে যেমন আমার জম্মস্থান হান তানে, জনগণ সাধারণত আঠালো ভাতের সঙ্গে কুলের পেস্ট, মিষ্টি রেড বিন পেস্ট ইত্যাদি ব্যবহার করে। খেতে মিষ্টি।
আলিম:...
আকাশ: বড় ভাই, বাংলাদেশের উত্তরায় একটি দোকান আছে, যার নাম 'মিষ্টিমুখ'। ওখানে মুখ মানে মুখমণ্ডল বা মুখ তাইনা?
আলিম:...
আকাশ: আচ্ছা, অনেক মজার। চীনা বন্ধুদের অনেককেই আমি সেখানে নিয়ে বাংলাদেশি মিষ্টি খাইয়েছি। তো বড় ভাই, আমাদের বাংলাদেশি মিষ্টি বা খাবারের মধ্যে চোং চি স্বাদের মতো খাবার আছে?
আলিম:...
আলিম: তো আকাশ, এ দিনে আর কি কি করে চীনারা?
আকাশ: আমি আগে বলেছি তো, তারা চোং চি খায়। এ ছাড়া ড্রাগন নৌকা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
আলিশ: আচ্ছা।
আকাশ: বড় ভাই, বাংলাদেশের কিছু কিছু অঞ্চলে যেমন রাঙামাটিতে ড্রাগন নৌকা প্রতিযোগিতা বা নৌকা প্রতিযোগিতা আছে কি?
আলিম:...
আলিম: ভাই, তাহলে কেন এদিন চীনারা চোং চি খায় এবং ড্রাগন নৌকা প্রতিযোগিতা করে?
আকাশ: আচ্ছা, বড় ভাই, আসলে ড্রাগন নৌকা দিবস কীভাবে এলো সেটা আগে জানা দরকার। এর পেছনের ইতিহাসের কয়েকটি সংস্করণ আছে। আমি তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত গল্পটি বলি, কেমন? বন্ধুরা, প্রাচীনকালে একসময় চীনে মোট ৭টি রাজ্য ছিল। ছুই ইয়ান হলেন ছু নামক একটি রাজ্যের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কবি। উনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে, দেশ কিছু ইতিবাচক সংস্কারের ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু রাজা তার প্রস্তাব শুনেন না। কিছু কিছু খারাপ লোক তাঁর বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়। রাজা এ ধরনের কথা শুনার পর তাঁকে রাজধানী থেকে নির্বাসনে পাঠান। শাস্তি হিসেবে তাঁকে দেশের খুব দূরের একটি স্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি নির্বাসনে থাকাকালে কিছু বিখ্যাত কবিতা লিখেছেন। এখনও চীনাদের মধ্যে অনেক প্রিয় সেসব কবিতা।
যা হোক, কয়েক বছর পর, ছিং রাজ্যের বাহিনী ছু রাজ্যের বাহিনীকে পরাজিত করে দেশের রাজধানী দখল করে। ছুই ইয়ান এ খবর পেয়ে মনে অনেক কষ্ট পান। তারপর তিনি নদীতে ঝাপিয়ে পড়েন। স্থানীয় জনতা এ খবর পেয়ে নৌকা নিয়ে নদী থেকে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করে। স্থানীয় বসিন্দারা ভয় পান যে, নদীর মাছ ছুই ইয়ানকে খেয়ে ফেলবে। এজন্য তারা ভাতের দলা নদীতে নিক্ষেপ করতে থাকে। তাদের আশা ছিল, মাছ ছু ইয়ানের দেহের পরিবর্তে ভাতের দলা খেয়ে সন্তুষ্ট থাকবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছুই ইয়ানের মৃতদেহ আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সেই থেকে, তার মৃত্যুর দিনে, ড্রাগন নৌকা প্রতিযোগিতা করা এবং চোং চি খাওয়া শুরু করে। এ সবই ছু ইয়ানকে স্মরণ করে করা হয়।