চলুন বেড়িয়ে আসি: মালয়েশিয়ার দর্শনীয় স্থান
  2020-06-24 18:09:40  cri
 কর্মব্যস্ত জীবন থেকে কিছুটা অবসর পেলে ভ্রমণপ্রেমীরা বেড়িয়ে পড়েন ঘুরতে। ছুটিতে যদি ভাবছেন দেশের বাইরে কোথাও ঘুরতে যাবেন তাহলে মালয়েশিয়া হতে পারে আপনার জন্য চমৎকার এক ভ্রমণ গন্তব্য। কম সময়ে কম খরচে যারা কাছের কোনো দেশে ঘুরতে যেতে চাইছেন তারা যেতে পারেন এশিয়ার ভ্রমণ স্বর্গ মালয়েশিয়াতে। বৈচিত্র্যতায় ভরপুর এই দেশটিতে রয়েছে দেখার মত অনেক আকর্ষণীয় স্থান। সমুদ্র, পাহাড়, দ্বীপ, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি কি নেই এখানে। চাইলে ইচ্ছেমত শপিংও করে নিতে পারবেন। শপিং এর জন্য মালয়েশিয়ার রয়েছে আলাদা সুখ্যাতি।
পেনাং:
পেনাং মালয়েশিয়ার অন্যতম একটি পর্যটন আকর্ষণ। এটি মালয়েশিয়ার প্রধান ও এশিয়ার বিখ্যাত একটি দ্বীপ । নীল জলরাশি, পাহাড় ও বিশাল সেতুর বন্ধনে ঘেরা পেনাং মূলত গভীর সমুদ্রের মাঝে বিশাল একটি জেটি। এখানে আমদানি পণ্য খালাস করা হয়। এখানে চমৎকার একটি সেতু আছে। এছাড়া পেনাং এর রাষ্ট্রীয় মসজিদ এই বন্দরের কাছেই। এটা মালয়েশিয়ার সবচেয়ে জমকালো মসজিদ হিসেবে পরিচিত। এখানে সব কিছুই দেখার মত। পেনাং এর মূল আকর্ষণ ক্যাবল ট্রেন। পেনাং গেলে অবশ্যই এই ক্যাবল ট্রেনে চড়বেন। প্রাপ্তবয়ষ্কদের জন্য আট রিঙ্গিত আর ছোট ও বৃদ্ধদের জন্য চার রিঙ্গিতের বিনিময়ে এই ট্রেনে চড়ে যেতে পারবেন পেনাং পর্বতে। এটি আপনার জন্য দারুণ একটি অভিজ্ঞতা বয়ে আনবে।
প্রাচ্যের মুক্তা হিসেবে পরিচিত মালয়েশিয়ার পেনাং-এর দর্শনীয় স্থান সমূহ
স্থানীয়ভাবে পুলাউ পিনাং নামে পরিচিত পেনাং একটা কচ্ছপাকৃতির দ্বীপ দ্বারা গঠিত যার আয়তন ২৮৫ বর্গ কিলোমিটার। 'প্রাচ্যের মুক্তা' হিসেবে পরিচিত পেনাং এশিয়ার মালয়েশিয়ার বিখ্যাত দ্বীপ গন্তব্যের অন্যতম। এখানে আছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জাঁকজমকপূর্ণ ঐতিহ্য, মহান আতিথেয়তা এবং প্রাচুর্য। এটা সব পর্যটকদের জন্য একটা ওয়ান স্টপ গন্তব্য যেখানে রয়েছে প্রচুর রেস্তোরাঁ, রাস্তার পাশের ক্যাফে, ডিস্কোথেক, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরস এবং অকৃত্রিম সমুদ্র সৈকত। পেনাং এর সব বিখ্যাত ভ্রমণ জায়গা নিয়েই আজকের আয়োজন।
রাষ্ট্রীয় মসজিদ:
পেনাং এর রাষ্ট্রীয় মসজিদ গ্রীনলেন উপশহরে ৪.৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এটা মালয়েশিয়ার সবচেয়ে জমকালো মসজিদ হিসেবে চিহ্নিত। মসজিদে প্রার্থনা হলে একটি ঝাড়বাতি রয়েছে যা প্রায় বিশ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট। এই মসজিদ ভ্রমণ করতে রাষ্ট্রীয় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন হয়। এখানে পরিদর্শনে আসতে বিশেষ ধরনের পোষাকও পরিধান করতে হয়।
রাষ্ট্রীয় জাদুঘর:
পেনাং রাষ্ট্রীয় জাদুঘরে চিত্রাঙ্কনের এক বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। যার মধ্যে ক্যাপ্টেন রবার্ট স্মীথের দশটি মূল চিত্রাঙ্কনের আটটিই রয়েছে। এখানে আরও রয়েছে বাবা নিওনিয়ার চীনা মাটির বাসন-কোসন, জুয়েলারি, পোষাক এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় মূল্যবান সামগ্রী যেগুলির সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব অতুলনীয়। মালয়েশিয়ার ইতিহাস ঐতিহ্য বেশ গাড় হয়ে জুড়ে আছে এই জাদুঘরে।
এডওয়ার্ড ক্লক টাওয়ার:
৬০ ফুট দীর্ঘ ক্লক টাওয়ারটি জন্য বিখ্যাত ১৮৯৭ সালে রানী ভিক্টোরিয়ার হীরকজয়ন্তীতে তাঁকে উপহার প্রদান করা হয়। এর প্রতি ফুট রানীর প্রতি বছর শাসনকালের স্মরণে করা হয়। এই কাঠামোটি মূলত কাঠের তৈরি এবং কামান দ্বারা বেষ্টিত যেগুলি ব্রিটিশরা অধিকার করেছিল। ইতিহাসের এক বিশাল অংশ জুড়ে আছে এই টাওয়ারে।
পেনাং পাহাড়:
পেনাং পাহাড় মুলয় স্থানীয় লোকজন ও পর্যটকদের জন্য জনপ্রিয় এক মিলনস্থান । সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৩০ মিটার উচ্চ এই পাহাড়ে তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত প্রায় নেমে আসে। এখান থেকে জর্জ টাউনের সুন্দর চলমান দৃশ্য ও মালয় উপদ্বীপের উপকূলভূমির সব অসাধারণ দৃশ্য দেখা যায়।
উদ্ভিদ উদ্যান:
এই ধরনের উদ্ভিদ উদ্যান মালয়েশিয়ায় মাত্র একটিই রয়েছে। এর আয়তন ৩০ হেক্টর এবং এটা জঙ্গলপূর্ণ পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত। এখানে বিশাল ক্রান্তীয় উদ্ভিদ ও প্রাণীর সংগ্রহ রয়েছে। এখানে পেনাং ব্রিজের রেপ্লিকা, একটা পাঠাগার এবং রয়েছে প্রচুর রেসাস বানর। মালয়েশিয়া অসাধারণ সব স্থাপনায় ভরপুর হলেও উদ্ভিদ উদ্যান রয়েছে এই একটি।
বন ও চিত্তবিনোদন পার্ক :
পেনাং এর উত্তর-পূর্ব অংশে ১০০ হেক্টর জমি নিয়ে এই সুন্দর পার্কটি অবস্থিত। এখানে কয়েকটি স্বচ্ছ পানির পুল, ফুটপাথ, বিশ্রাম ঘর, শিশুদের খেলার মাঠ এবং বন জাদুঘর। এই বন জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে অসাধারণ গ্রীষ্মমন্ডলীয় কাষ্ঠ সামগ্রী এবং সংরক্ষিত বিভিন্ন প্রজাতির পোকা।
বাটু কেভস:
বাটু কেভস মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
বাটু কেভস ওরফে শ্রী শুব্রমানিয়ার মন্দির হল প্রভু মুরুগান-এর প্রতি উৎসর্গীকৃত হিন্দু মঠ। মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গোর রাজ্যে অবস্থিত মন্দিরটি একটি প্রতিকী পর্যটন গন্তব্যস্থল। গুহাগুলি সূঙ্গাই বাটু বা বাটু নদীর নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছিল। এটা নথিভুক্ত করা হয়েছে যে তেমূয়ান লোকেরা(ওরাং আসলি উপজাতি)শরণার্থী হিসাবে এই গুহার কিছু অংশ প্রবেশপথ হিসাবে ব্যবহার করত।
বাটুর চুনাপাথরের গুহাগুলি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০০ ফুট উচ্চে নির্ধারিত রয়েছে। এটি মনে করা হয় যে, এই গুহাগুলির চুনাপাথর প্রায় ৪ কোটি বছরের প্রাচীন। ২০০৯ সালে, দাতুক আর নাদারাজাহ-র আবেদনের উপর ভিত্তি করে মালয়েশিয়া সরকার গুহা ভবনটির উন্নয়নের জন্য আর.এম. ৩.৬ মিলিয়ন-এর অনুমোদন দ্বারা পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাথে সহযোগিতা করেন।
এক মনোরম, ১৪০ ফুট-উচ্চ প্রভু মুরুগানের মূর্তি সিঁড়ির ডানদিকে অবস্থিত রয়েছে। মূর্তিটি ২০০৬ সালের ২৯শে জানুয়ারি স্থাপিত হয়েছিল। প্রায় ১৫৫০ ঘন মিটার কংক্রিট, ৩০০ লিটার সোনালী রং এবং ২৫০টন ইস্পাত দন্ড এই বিরাট মূর্তিটি নির্মাণ করতে ব্যবহার করা হয়েছে।
মন্দির ভবনটি, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির মধ্যবর্তী সময়ে অনুষ্ঠিত, থাইপুশমের বার্ষিক হিন্দু উৎসব চলাকালীন সার্ডিনের ন্যায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এখানে তিনটি গুহা আছে, কিন্তু প্রধান গুহাটিতে মন্দির রয়েছে। রামায়ণ গুহায় বৈশিষ্ট্যপূর্ণ চিত্রাঙ্কনগুলি প্রভু শ্রীরাম-এর কাহিনী পেশ করে। লম্বা লেজ যুক্ত ম্যাকিউ বানরগুলিকে প্রায় সব মন্দিরে পাহাড়ের ওপর উচ্চসিত দেখতে পাওয়া যায়। আপনি এদের গুহার চারপাশে ক্রীড়াকৌতুক করতে দেখতে পাবেন। বেশ কিছু ভারতীয় রেঁস্তোরা এবং দোকানপাট মন্দির ভবনটির প্রায় চারপাশে দেখতে পাওয়া যায়। আপনি মশলাদার খাবারের সুস্বাদ উপভোগ করতে পারেন অথবা তাদের কাছ থেকে মন্দিরের অর্ঘ্য, এমনকি সৌখিন স্মারণিক জিনিসপত্রও কিনতে পারেন।
বাটু কেভস দর্শনের সময়
বাটু কেভস প্রতিদিন সকাল সাতটা. থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকে।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040