গত সপ্তাহের অনুষ্ঠানে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নিংসিয়া পরিদর্শনের কিছু তথ্য শেয়ার করেছি। আসলে চলতি বছরের শুরুর দিক থেকে এ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট সি চীনের বিভিন্ন এলাকা বা শহর পরিদর্শন করেন এবং দারিদ্র্যবিমোচন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে তাঁর আশাবাদও প্রকাশ করেন। নিংসিয়া হুই জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের উচুং শহর পরিদর্শনকালে তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে দেখা করেন এবং একটি কমিউনিটির চত্বরে দাঁড়িয়ে সি সবাইকে বলেন, 'বিভিন্ন জাতির লোক চীনা পরিবারের সদস্য; দারিদ্র্যবিমোচন, সার্বিক সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলা, আধুনিকায়নের যাত্রায় কোনো জাতি পিছিয়ে পড়তে পারে না।'
আসলে প্রেসিডেন্ট সি'র সাথে নিংসিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৯৭ সালে ফুচিয়ান প্রদেশের সিপিসি'র উপসম্পাদক হিসেবে তিনি প্রথমবারের মতো নিংসিয়া পরিদর্শন করেন। তখন থেকে তিনি নিংসিয়া'র উন্নয়নে ব্যাপক মনোযোগ দেন। পরে ২০০৮ সালে এবং ২০১৬ সালে তিনি দু'বার নিংসিয়া পরিদর্শন করেন। স্থানীয় গ্রাম ও কমিউনিটির দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রম এবং সংখ্যালঘু জাতির লোকদের ঐক্যবদ্ধ সহাবস্থানসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করেন সি। তা থেকেও বোঝা যায়, চীনের সংখ্যালঘু জাতির দরিদ্র মানুষের ওপর সি যথেষ্ট গুরুত্ব দেন।
বিগত কয়েক বছরে সি বহুবার বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির এলাকা পরিদর্শন করেন। যেমন, হুনান প্রদেশের শিবাতুং গ্রামে তিনি প্রথমবারের মতো নির্দিষ্ট দারিদ্র্যমুক্তির সহায়তা চিন্তাভাবনা পেশ করেন। সিছুয়ান প্রদেশের তালিয়াংশান পহাড়ে তিনি স্থানীয় গ্রামের কর্মকর্তাদের সাথে কথাবার্তায় গ্রামবাসীদের জীবনমান উন্নয়নের পদ্ধতি বুঝিয়ে দেন। বিভিন্ন পরিদর্শনে তিনি বহুবার জোর দিয়ে বলেন, সচ্ছল সমাজের গঠনের পর কেউ অভাবে থাকবে না; অভিন্ন সমৃদ্ধির যাত্রায় কেউ পিছিয়ে থাকবে না।
ঐক্যবদ্ধ থাকলে উন্নয়ন সম্ভব এবং উন্নয়ন বাস্তবায়ন হলে ঐক্যবদ্ধ থাকা সহজ। বিভিন্ন জাতির লোকদের যৌথভাবে জীবনমান উন্নত করা চীনা জাতির শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্যের প্রতীক এবং চীনের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার প্রাধান্য। প্রেসিডেন্ট সি সবসময় বিভিন্ন জাতির লোকদের জীবনমান উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেন এবং সবার যৌথ প্রয়াসে সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন সম্ভব বলে তিনি আশা করেন।
তিনি সবাইকে বলেন, জাতির ঐক্য ও সবার যৌথ প্রয়াসে অবশ্যই অভিন্ন উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ বাস্তবায়ন করা সম্ভব; সবার জীবন অবশ্যই আরও সুখী হবে।
এবার নিংসিয়া পরিদর্শনে তিনি স্থানীয় কৃষি-বাগানসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখেন। বিশেষ করে হ্যলান পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে মনোযোগ দেন। আসলে হ্যলান পাহাড় চীনের গুরুত্বপূর্ণ ইকোলজিকাল এলাকাগুলোর অন্যতম। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে উত্তরপশ্চিম চীনের ইকোলজিকাল কাঠামোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এখানে কয়লা ও ডাইনাস রকের পর্যাপ্ত মজুত আছে। গত শতাব্দীর ৫০-এর দশকে স্থানীয় গ্রামবাসীদের নির্বিচার আচরণের কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে স্থানীয় ইকোলজিকাল পরিবেশও দুর্বল হয়ে যায়।
নিংসিয়া পরিদর্শনের সময় হ্যলান পাহাড়াঞ্চলের পরিবেশ সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেন সি। তখন থেকে হ্যলান পাহাড়ের পরিবেশ সংরক্ষণকাজ ধীরে ধীরে শুরু হয়। এখন এ পাহাড়াঞ্চলের আকাশ নীল, নদী পরিচ্ছন্ন, আর বায়ুও পরিস্কার, যা নিংসিয়া'র কৃষিশিল্পের উন্নয়নে সুষ্ঠু ইকোলজিকাল ভিত্তি স্থাপন করেছে।
সবুজ পাহাড় ও পরিচ্ছন্ন নদী হবে সোনার ও রুপার মতো। ভবিষ্যত প্রজন্মের সুখী জীবন নিশ্চিত করতে স্থানীয় ইকোলজিকাল পরিবেশ সংরক্ষণের নির্দেশনা দেন সি। তা থেকে তাঁর দূরদর্শিতা বোঝা যায়। কারণ, অর্থনীতির টেকসই উন্নয়ন আর মানুষের সুখী জীবনের প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। পরিবেশ দূষিত হলে মানুষের সুখী জীবন সম্ভব নয়। সবার উচিত পরিবেশ সংরক্ষণের চেষ্টা করা এবং একসাথে অসাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করা।
ইনার মঙ্গোলিয়ায় সি'র ভ্রমণ
২০১৪ সালের বসন্ত উত্সবের আগে ইনার মঙ্গোলিয়ায় পরিদর্শন করেন প্রেসিডেন্ট সি। তিনি সিলিনহোট শহরের এক জেলায় স্থানীয় নাদাম উত্সবে অংশ নেন; স্থানীয় পশুপালকদের সাথে দঙ্গল ও ঘোড়া চড়া প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন এবং মঙ্গোলিয়ান জাতির সুর ও নৃত্য দেখেন। তখন সি মঙ্গোলিয়ান জাতির রীতিনীতি অনুসারে রুপার বাটিতে দুধ দিয়ে শুভকামনা জানান। মঙ্গোলিয়ান জাতির নৃত্য ও সংগীত শুনে ও দেখে অনেক মুগ্ধ হন সি। তিনি বলেন, বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির সভ্যতা জাতির আত্মার প্রতিফলন। তাই ভিন্ন জাতির রীতিনীতি মিশে চীনা সভ্যতা অনেক সমৃদ্ধ ও চমত্কার হয়েছে।
হুনান প্রদেশের বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির লোকদের সাথে দেখা
২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে পাহাড় অতিক্রম করে হুনান সিয়াংসি অঙ্গরাজ্যের সংখ্যালঘু জাতির লোকদের সাথে দেখা করেন সি। স্থানীয় মিয়াও জাতির এক গ্রাম চরম দরিদ্র। তাদের জীবন দেখে সি বলেন, 'আমি সবার জীবনমান দেখতে চাই। এখানকার দরিদ্র লোকদের জীবন উন্নত হলে দারিদ্র্যমুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব।'
২০১৯ সাল পর্যন্ত চীনের বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির দারিদ্র্যমুক্তির অনেক সুখবর পাওয়া গেছে। গত ৭ বছরের মধ্যে বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির অধ্যুষিত এলাকায় ২.৫ কোটিরও বেশি লোক দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে এবং দারিদ্র্য ২১ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশে নেমে এসেছে।
সংখ্যালঘু জাতির লোকদের আর্থিক অবস্থার প্রতি মনোযোগ দেওয়ার সাথে সাথে সাংস্কৃতিক বিষয় সংরক্ষণের ওপরও গুরুত্ব দেন সি। ২০১৪ সালের মার্চ মাসে যখন দুই অধিবেশন চলছিল, তখন সংখ্যালঘু জাতির প্রতিনিধি ও সদস্যদের সাথে দেখা করে সি জিজ্ঞেস করেন: এখন বিভিন্ন গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটে কোন কোন সংখ্যালঘু জাতির ভাষা দেখা যায়? পরে ভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার ওয়েবসাইটও চালু হয়।
চীনা প্রেসিডেন্ট সি'র দৃষ্টিতে সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতি ও ভাষার সংরক্ষণ ও উত্তরাধিকারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া চীনা সভ্যতা সংরক্ষণের কার্যকর পদক্ষেপ। বিভিন্ন জাতির সংস্কৃতির সুষম সংমিশ্রণ ও নিজস্ব বৈশিষ্ট্য চীনা সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ বিষয়। তাই সঠিক চিন্তাধারায় সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতি রক্ষা করা চীনা জাতির আত্মবিশ্বাস গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্য রয়েছে।
সুপ্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা অনুষ্ঠানের সময় শেষ হয়ে এলো। সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারেন বা মিস করেন, আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn,আমাদের যোগাযোগ ইমেল ঠিকানাben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn
তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)