বিজিএমইএর দাবি অনুযায়ী তাদের শ্রমিক সংখ্যা ৪৫ লাখ হলে এর ৭০ শতাংশ অর্থাৎ ৩১ লাখের বেশি শ্রমিকের কাজ থাকছে না। এ ছাড়া তৈরি পোশাকের পশ্চাৎপদ শিল্প যেমন স্পিনিং, টেক্সটাইল, এক্সেসরিজ, পরিবহন, ফ্রেইট ফরোয়াডার্স, সিএন্ডএফ এজেন্টসহ পরোক্ষভাবে জড়িত শ্রমিক-কর্মচারীদের বড় অংশ কর্মহীন হয়ে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাকেঞ্জির তথ্য অনুযায়ী করোনার প্রভাবে আগের বছরের তুলনায় চলতি বছর বিশ্বের পোশাক বাজারে বিক্রি ৩০ শতাংশ হ্রাস পাবে। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে পোশাক রফতানি ১০ বিলিয়ন ডলার হ্রাস পাবে। চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) পোশাক শিল্পে ১৪ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল, যা গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি। করোনার প্রভাবে মার্চ পর্যন্ত ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে গেছে। কারণ বহির্বিশ্বে বাজার সংকুচিত হয়ে পড়েছে।
এদিকে, করোনার আঘাতে স্বাস্থ্য খাতেরও ভঙ্গুর চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। তাই ঢেলে সাজাতে এ খাতে বাজেটের ১২ শতাংশ বরাদ্দ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
চলতি বাজেটের মূল বিষয় কেমন হওয়া উচিত এ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সাবেক গভর্নর বলেছিলেন, এ বাজেটে বেশি ফোকাস থাকতে হবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দেশীয় শিল্প, কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ, উৎপাদন, কৃষি, ক্ষুদ্র শিল্প ও এসএমই খাতে। এছাড়া দ্রুত নজর দিতে হবে কর্মহীন, আয়হীন ও ক্ষুধার্ত মানুষের প্রতি।
যাদের খাবার ইতোমধ্যেই ফুরিয়ে গেছে। তাদের কর্ম এবং খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা করোনার থাবা গত তিন মাসে অনেক মানুষকে আয়হীন করে দিয়েছে। এদেরকে আয়ের পথে ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য প্রান্তিক মানুষের জন্য কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। এটি করতে হলে প্রথমে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হবে। সেজন্য গ্রামে টাকার প্রবাহ বাড়াতে হবে। অর্থাৎ গ্রামের যেসব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পুঁজি হারিয়ে বসে আছেন তাদেরকে নতুন করে পর্যাপ্ত পুঁজির জোগান দিতে হবে।
গ্রামে অনেক মাঝারি ও কুটির শিল্প রয়েছে। সেগুলোতে পুঁজির জোগান দিতে হবে। তারা পুঁজি পেলে নতুন করে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। শ্রমিকদের বেতন ভাতা দেবেন। এতে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে।
বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোও মূল শহরের বাইরে অবস্থিত। সেগুলোতেও টাকার জোগান দিতে হবে। তাদেরকেও উৎপাদন কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। এভাবে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতিও বাড়বে। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প থেকে সরে আসতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে আরও দক্ষতা আনতে হবে। এগুলো যাতে দ্রুত মানুষের উপকারে আসে সে উদ্যোগ নিতে হবে।
একই সঙ্গে যেসব বড় শিল্প গ্রুপ রয়েছে তাদেরকে নতুন নতুন ইউনিট গড়ে তুলতে উৎসাহিত করা গেলে কর্মসংস্থান দ্রুত বাড়বে। কর্মসংস্থানের একটি বড় অংশ হচ্ছে কৃষি ও পর্যটন খাত। এ খাত দুটিকে চাঙ্গা করতে হবে। এরা যাতে নতুন করে কর্মহীন হয়ে না পড়ে সেজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় রাখতে হবে। ইতোমধ্যে যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছে তাদের জন্য তাৎক্ষণিক কর্মসৃষ্টি হয় এমন সব প্রকল্পে দ্রুত হাত দিতে হবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে।
করোনার প্রভাব মোকাবেলায় শিল্প খাতে বিশেষ নজর দেয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করার পাশাপাশি দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া ও এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।