২ জুন, উহান কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৪ মে থেকে ১ জুন পর্যন্ত উহানে মোট ৯৮,৯৯৮২৮ জনের কোভিড-১৯ টেস্ট করা হয়। তাদের মধ্যে ৩০০ জন লক্ষণহীন রোগী ছাড়া কোনো নিশ্চিত রোগী পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি, লক্ষণহীন রোগীদের দ্বারা অন্যদের আক্রান্ত হবার ঘটনাও পাওয়া যায়নি।
১৪ মে থেকে উহানে চালু হয় সার্বিক কোভিড-১৯ টেস্ট কার্যক্রম। এর লক্ষ্য ছিল মূলত লক্ষণহীন আক্রান্ত ব্যক্তি খুঁজে বের করা। ২ জুন অনুষ্ঠিত হুপেই কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ পরিচালনা কেন্দ্রের এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, ১৪ মে থেকে ১ জুন পর্যন্ত উহানে মোট ৯৮৯৯৮২৮ জনের টেস্ট করা হয়। এর ফলে উহানে ১ কোটি ৯ লাখ ৯ হাজার জনের কোভিড-১৯ টেস্ট করা হয়। তার মানে, উহানের প্রায় বাসিন্দার ভাইরাস টেস্ট করা হয়েছে।
উহান শহরের হান ইউয়াং এলাকার লং ইয়াং রাস্তার ফাং ছাও কমিউনিটি একটি কম্প্রিহেনসিভ ব্যবসায়িক কমিউনিটি এবং এখানে নির্মাণাধীন সাইটও বেশি। এ কমিউনিটির সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক তু ইউন বলেন, এখানে বাসিন্দারা ছাড়া, ব্যবসায়ী ও নির্মাণাধীন সাইটের কর্মীদেরও টেস্ট করা হয়েছে। এ কমিউনিটিতে স্থায়ী ও ভাসমান জনসংখ্যা প্রায় ৭০০০ জন। ১০০০ জনের টেস্ট আগেই করা হয়। এবার আরও ৫০০০ জনের টেস্ট করা হয়েছে। তু উইন আরও বলেন, ৫ দিনের মধ্যে ৯০ শতাংশ বাসিন্দার নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং পরবর্তী এক সপ্তাহে বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করা হয়। পুলিশ স্টেশনের কাছ থেকে ভাসমান লোকের ফাইল পায় কমিউনিটি এবং তাদের এক একজনকে ফোন করা হয় এবং নিশ্চিত করা হয় যে, তাদের সবার টেস্ট হয়েছে বা হবে। পাশাপাশি, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের বাড়িঘরে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
৩১ মে সকালে, ২৩ বছর বয়সি ইউয়ু মিং, উহান শহরের চিন ইন হু কমিউনিটির স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোভিড-১৯ টেস্ট করানোর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তার সঙ্গে আরও দশ-বারো জন অপেক্ষা করছিলেন। তারা সবাই ১৫ মিনিটের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করেন। তিনি বলেন, ১৩ মে থেকে তিনি কাজের কারণে হুনান প্রদেশে যান এবং ৩০ মে ফিরে আসেন। ফিরে আসার পরপরই তিনি টেস্টের বিজ্ঞপ্তি পান। তিনি বলেন, 'সবার টেস্ট হচ্ছে জেনে আমিও এসেছি।' এদিকে, যারা এখনও উহানে ফিরে আসেননি, তাদের করোনা টেস্ট উহানে পৌঁছানোর পরপরই করা হবে বলে জানান কমিউনিটির দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা।
দু'সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ১ কোটি মানুষের করোনা টেস্ট করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে: এসব টেস্ট কি নির্ভুল ছিল? উহানে এসময় গড়ে প্রতিদিন ১০ লাখ টেস্ট করা হয়। উহান স্বাস্থ্য কমিশনের উপপরিচালক ওয়াং ওয়ে হুয়া বলেন, উহানে পরীক্ষাকেন্দ্র ২৩ থেকে ৬৩টিতে উন্নীত করা হয়। পরীক্ষাকর্মী ৪১৯ জন থেকে ১৪৫১ জনে এবং পরীক্ষা সরঞ্জাম ২১৫ থেকে ৭০১টিতে বাড়ানো হয়। টেস্টের জন্য দিন-রাত ২৪ ঘন্টা কাজ হয়েছে। তাই, এতো বেশি টেস্ট করা সম্ভব হয়েছে।
২ জুন, সাংবাদিক একটি পরীক্ষা কেন্দ্রে যান এবং ওখানে দেখেন ভবনের সামনে কয়েকটি অস্থায়ী ঘর আছে। এ ঘরগুলো নমুনা গ্রহণের জায়গা। এ কেন্দ্রে প্রতিদিন ৩৭ হাজার নমুনা পরীক্ষা করতে পারে। কিছুদিন আগে ২.৮ লাখ নমুনা এখানে পৌঁছায়। সময়মতো কাজ শেষ করার জন্য অন্য প্রদেশ থেকে ১০০ জন ব্যক্তি ও ৩০টি সরঞ্জাম এখানে স্থানান্তর করা হয়।
পরীক্ষার নির্ভুলতা নিশ্চিত করতে উহানে চালু হয় মিশ্র পরীক্ষা। কয়েকটি নমুনা মিশ্রণ করে পরীক্ষা করে যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে এক একটি আলাদাভাবে নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। একবার ৫টি নমুনা মিশ্রণ করে পরীক্ষার সঠিকতা উচ্চ। এবার উহানের কোভিড-১৯ পরীক্ষার মধ্যে ৭৫.৩ শতাংশ একক নমুনা পরীক্ষা এবং ২৪.৭ শতাংশ মিশ্র পরীক্ষা হয়। পাশপাশি সন্দেহভাজনদের নমুনা ও পজেটিভদের নমুনা দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করা হয়। উহান ক্লিনিকল পরীক্ষা কেন্দ্র বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে কিছু নমুনা নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো চেক করে। মোট ৩৫৯৬১টি নমুনা নেয় উহান ক্লিনিকল পরীক্ষা কেন্দ্র এবং কোনো সমস্যা আবিষ্কার করা যায়নি।
৩০০ লক্ষণহীন ব্যক্তি কী করবে?
এবার মোট ৩০০ জন লক্ষণহীন ব্যক্তি পাওয়া গেছে। তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে এমন ১১৭৪ জনকে পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের কেউ আক্রান্ত হননি। লক্ষণহীন ব্যক্তি কী অন্যকে সংক্রমিত করতে পারেন? এটা সবার মনের একটি বড় প্রশ্ন। ২৬ এপ্রিল থেকে, উহান রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ১০৬ জন লক্ষণহীন ব্যক্তির কফের নমুনা নিয়ে গবেষণা ও পরীক্ষা করেছে। তবে কোনো ভাইরাস পাওয়া যায়নি। ১৪ মে থেকে ৩০০ জন লক্ষণহীন ব্যক্তির বাড়ি থেকে মাস্ক, কাপ, মোবাইল ফোন, টুথব্রাশসহ নানা জিনিস নমুনা হিসেবে নেওয়া হয় ও পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু এসব জিনিসে ভাইরাস পাওয়া যায়নি।
তাহলে এ ৩০০ জন ব্যক্তি কী করবে? চিনা রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের উপপরিচালক ফেং চি চিয়ান বলেন, যদিও লক্ষণহীন ব্যক্তি থেকে অন্যদের আক্রান্ত হবার কেস নেই, তবু উহান শহর কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেয়। লক্ষণহীণ ব্যক্তিদের সবাইকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। প্রত্যেক লক্ষণহীন ব্যক্তির জন্য তার আসল অবস্থা অনুযায়ী চিকিত্সা পরিকল্পনাও তৈরি করা হয়েছে। আইসোলেশন শেষে হবার পর দ্বিতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে তারা নির্দিষ্ট হাসপাতালে গিয়ে আবার করোনা টেস্ট করাবেন।
দু সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ১ কোটি জনকে পরীক্ষা করা হয় এবং তার খরচ ৯০ কোটি ইউয়ান। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ব্যপক পরীক্ষা ও বিগ ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে কমিউনিটিতে আরও কার্যকর ও সঠিকভাবে মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এবারের ফলাফল অনুযায়ী, ধাপে ধাপে ইন্ডোর পাবলিক প্লেস উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে এবং মানুষ জীবনের সব সুবিধা ভোগ করার সুযোগ পাবে।
এবারের পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, উহানে ৯৭ শতাংশ কমিউনিটিতে কোনো লক্ষণহীন রোগী নেই। ১ জুন উহান রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র শহরের কলের জল, গার্হস্থ্য নর্দমা, ট্যাক্সি, বাস, পাতাল রেল, স্টেশন, দোকান, রেস্তোঁরা ও পার্ক থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এবং কিছু পোষা প্রাণীর নমুনাও নেয়। ২৩১৪টি নমুনার পরীক্ষার সবকটি নেগেটিভ। তার মানে, খোলা জায়গায় যথেষ্ট ব্যবধান রেখে মানুষ শরীরচর্চা বা অন্য কাজ করতে পারে। অবশ্য, হাত ধোয়া, আলাদা থালাবাসন ব্যবহার করাসহ ভাল অভ্যেস বজায় রাখা উচিত। (শিশির/আলিম/রুবি)