চীনের সরকারি-কার্যবিবরণীতে ২০২০ সালের উন্নয়নের দিক্‌-নির্দেশনা
  2020-06-03 08:50:17  cri

২২ মে, নির্ধারিত সময়ের দু'মাস পর, চীনের ত্রয়োদশ জাতীয় গণকংগ্রেসের তৃতীয় অধিবেশন উদ্বোধন হয়। প্রধানমন্ত্রী অধিবেশনে সরকারি-কার্যবিবরণী পেশ করেন। এতে ২০২০ সালের চীনা অর্থনীতি ও সমাজ উন্নয়নের দিক্‌-নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এবার সরকারি-বিবরণীতে চলতি বছরের জন্য অর্থনীতি উন্নয়নের কোনো লক্ষ্যমাত্রা তথা জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা উল্লেখ করা হয়নি। সাধারণত এ ধরনের রিপোর্টে এক বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা উল্লেখ করা হয়। এনপিসির প্রতিনিধি, খ্যতা সুনফেই কোম্পানির সিইও লিউ ছিং ফেং বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত অপ্রত্যাশিত, তবে যৌক্তিক। মহামারী শেষ হয়নি। এ অবস্থায় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক না-করায় ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য কাজ করা সহজতর হবে।

মহামারীর কারণে বিভিন্ন কোম্পানির ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কোম্পানিগুলো জরুরি ব্যবস্থা নিয়েছে। যেমন, স্মার্ট চিকিত্সা সহকারী ফোনরোবট, অনলাইন শিক্ষা পরিষেবা, অনলাইন অফিসওয়ার্কসহ নানান নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করেছে কোম্পানিগুলো। নতুন ব্যবস্থা সম্ভাবনাও সৃষ্টি করেছে।

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে চীনের অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির হার আগে বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৮ শতাংশ কমেছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মহামারী এবং অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক পরিস্থিতির অনিশ্চয়তা বেশি। চীনের উন্নয়নও অনিশ্চতার সম্মুখীণ হচ্ছে।

যদিও সরকারি-বিবরণীতে অর্থনীতির বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বলা হয়নি, তবে কর্মসংস্থান, পণ্যের দাম, মানুষের আয়সহ নানা বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। চীনের জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের মহাপরিচালক হ্য লি ফেং বলেন, 'অর্থনীতির উন্নয়ন সম্পর্কে চিন্তা করার সময়, আরও জরুরি কাজ করতে হবে। যেমন, কীভাবে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানো যায়, কীভাবে মানুষের জীবিকা নিশ্চিত করা যায়, কীভাবে গুণগত মানের উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা যায়, ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে।

দুটি ট্রিলিয়ান ইউয়ানের পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয় সরকারি-কার্যবিবরণীতে, যা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। দুই ট্রিলিয়ান ইউয়ান পরিকল্পনার মধ্যে একটি হল আর্থিক ঘাটতি ১ ট্রিলিয়ান ইউয়ান বাড়ানো এবং ১ ট্রিলিয়ান ইউয়ানের বিশেষ মহামারী প্রতিরোধ রাষ্ট্রীয় বন্ড প্রকাশ করা। সিপিপিসিসির সদস্য ও চীনা শুল্ক সমিতির উপ-পরিচালক বলেন, ঘাটতির হার ৩.৬ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি অনুমান করা হয়েছে এবং বিশেষ রাষ্ট্রীয় বন্ড ও স্থানীয় সরকারি বিশেষ বন্ড প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা বাজারের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য সহায়ক।

এ দুই ট্রিলিয়ান ইউয়ান কেন্দ্রীয় সরকার বা প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে না, বরং সরাসরি শহর ও জেলা পর্যায়ে বরাদ্দ করা হবে এবং কোম্পানি ও মানুষের জীবিকার উন্নয়নে ব্যবহার করা হবে, যা মৌলিক সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকর।

১০ হাজার অক্ষরের এ সরকারি-কার্যবিবরণীতে ৩৯ বার কর্মসংস্থানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মানুষের কর্মসংস্থান ও জীবিকাকে কেন্দ্র করে ধারাবাহিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ও বিশেষ গ্রুপকে সমর্থন দেওয়া, অবসর ভাতা সময়মতো দেওয়াসহ নানান পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। সরকারি-কার্যবিবরণীতে ৯০ লাখের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, যথেষ্ট কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা প্রয়োজন ও করতে হবে। মহামারীতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কোম্পানি বা ব্যক্তি-ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেক কোম্পানি নতুন নিয়োগ দেয়নি। নির্দিষ্ট প্রকল্পের জন্য অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ বা ঘন্টা ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগ করাসহ নতুন পদ্ধতি তাই দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি অনেক কর্মী-শেয়ার-ওয়াবসাইট দেখা যাচ্ছে। ওখানে কোম্পানি চাহিদা অনুযায়ী নমনীয়ভাবে কর্মী নিয়োগ করতে পারে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মহামারীর সময়ে এমন নমনীয় নিয়োগের পরিমাণ ২-৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

কোম্পানিকে সমর্থন দেয়ার জন্য সরকার যেমন তাদের ভার কমিয়ে দেয় তেমন আর্থিক সহায়তা দেয়। যেমন, কোম্পানিগুলোর ভাড়া, ইন্টারনেট খরচ মওকুফ করার পাশাপাশি ছোট ও মাইক্রো কোম্পানিগুলোর জন্য ঋণের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।

সারা বছরে কোম্পানিগুলোর ২.৫ ট্রিলিয়ান ইউয়ানের ভার কমিয়ে দেয়া হবে এবং ছোট ও মাইক্রো কোম্পানিগুলোর সাধারণ ঋণ অনুমোদনের প্রক্রিয়া আরও ৪০ শতাংশ দ্রুততর করা হবে। কোম্পানির প্রথম ঋণ শোধ না-হলেও তাকে আবার ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোকে উত্সাহ দেয় সরকার।

মহামারীর কারণে দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে পাশাপাশি অনলাইন কেনাকাটা বাড়ে। লাইভ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় করা, অনলাইন ভ্রমণ, অনলাইন চিকিত্সাসহ নতুন শিল্প দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে। নতুন ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ ও শহারায়ন প্রক্রিয়া জোরদার করলে জেলা পর্যায়ের অর্থনীতির রূপান্তর ও ছোট ও মাঝারি কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।

পাশাপাশি বাণিজ্যিকিকরণ, বেসরকারি ব্যবসা পরিবেশ উন্নয়ন ও উন্মুক্তকরণের মাধ্যমে সংস্কার এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয় সরকারি-কার্যবিবরণীতে।

চলতি বছর, ২০২০ সালে, চীনে সার্বিকভাবে সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে সরকার। অন্যভাবে বললে, দেশকে সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্যমুক্ত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের এটা শেষ বছর। সার্বিক সচ্ছল সমাজ গড়ে তুললে দারিদ্র্যমুক্ত হবে দেশ। মহামারীর চ্যালেঞ্জের মুখে দারিদ্র্যবিমোচনের কাজ করতে হচ্ছে। সরকারি কার্যবিবরণীতে বলা হয়, গ্রামীণ অঞ্চলে সার্বিক দারিদ্র্যমুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। এনপিসির প্রতিনিধি রান হুই একটি দরিদ্র গ্রামের প্রধান। তিনি বলেন, গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সংখ্যা ১৮৮টি থেকে ৩ টিতে কমে এসেছে। চলতি বছর গ্রামের সার্বিক দারিদ্র্যমুক্তি বাস্তবায়নে তিনি আস্থাবান। ভবিষ্যতে পাহাড়ে সবজি চাষ, ফল গাছ চাষ ও গ্রাম পর্যটনের মাধ্যমে দারিদ্র্যমুক্তি বাস্তবায়ন সম্ভব।

চলতি বছরের আরও ২০০ দিন বাকি আছে। চীনে এখন রয়েছে ৫২টি দরিদ্র জেলা ও ১১১৩টি দরিদ্র গ্রাম। সেগুলো দারিদ্র্যমুক্তির লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। আশা করা যায়, মহামারীর বাধা সত্ত্বেও চীন বছর শেষ হবার আগেই সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্যমুক্ত হবে। (শিশির/আলিম/রুবি)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040