সংবাদ পর্যালোচনা:দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি চীনের উন্নয়ন-প্রক্রিয়ার জন্য নতুন চিন্তাধারা যুগিয়েছে
  2020-06-02 14:52:37  cri
জুন ২: চীনের আন্তর্জাতিক অর্থনীতি বিনিময়কেন্দ্রের উদ্যোগে পহেলা জুন অনলাইন ফোরামের আয়োজন করা হয়। এতে চীনের অর্থনীতির ভবিষ্যত উন্নয়ন নিয়ে দৃষ্টিপাত করা হয়।

বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক দ্বি-চক্রের নতুন প্যাটার্ন বর্তমানে চীনের উন্নয়নে নতুন ধারণা যুগিয়েছে। কর্মসংস্থান স্থিতিশীল করে তোলা এবং গণজীবিকা সুনিশ্চিত করার মাধ্যমে মহামারীর কারণে কমে যাওয়া ভোগের চাহিদা বাড়ানো সম্ভব হবে বলে তারা মনে করেন। এতে অর্থনীতির উন্নয়নে ভোগের মৌলিক ভূমিকা জোরালো হবে।

চীনের গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের অর্থনৈতিক কমিশনের উপ-প্রধান ইয়াং ওয়েই মিং ফোরামে বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনীতি সুগভীরভাবে অবণতিশীল হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও পুঁজি বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে, আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজার অশান্ত হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বাধার শিকার হচ্ছে। ভবিষ্যতের অনেক লম্বা সময়ের জন্য চীনকে অস্থিতিশীল ও অনিশ্চিত এই বিশ্বেই উন্নয়ন-কার্যক্রম চালাতে বাধ্য হবে। তিনি বলেন,

"চীনের ১৪০ কোটি মানুষে বড় বাজার পুরোপুরিভাবে ব্যবহৃত হয়নি। বর্তমানে প্রধানত অভ্যন্তরীণ বাজারের ওপর নির্ভর করে সব কাজ চালানো উচিত। আন্তর্জাতিক সঞ্চালন বজায় রাখার সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় উত্পাদনের ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত। বাইরের উপর আমাদের নির্ভরশীলতা কমানো হলো বর্তমানে আমাদের সামনে এমন চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোবাকিলা করতে হবে।"

চীনের গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের সদস্য এবং রাষ্ট্রীয় পরিষদের উন্নয়ন গবেষণাকেন্দ্রের সাবেক উপ-প্রধান ওয়াং ই মিং বলেন, বর্তমানে বহিঃর্বিশ্বের পরিবেশ দ্রুত গতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে। কেবল অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ালে কার্যকরভাবে নেতিবাচক প্রভাব প্রশমন করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন,

"বর্তমানে কর্মসংস্থান পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা উচিত। বর্তমানে বিদেশী বাণিজ্য-আদেশ ব্যাপকভাবে কমে গেছে। অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওপর কর্মচ্যুতির চাপ বাড়ছে। অর্ডার সম্প্রসারণের চ্যানেল বাড়াতে এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করা প্রয়োজন। তা ছাড়া, কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত। যাদের সত্যিকার সমস্যা আছে, তাদেরকে গণকল্যাণমূলক চাকরি যোগাতে পারে সরকার।"

চলতি বছর চীন সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্য অনুযায়ী নতুন করে ৯০ লাখ মানুষকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া হবে। ইয়াং উই মিন বলেন, "যদি আমরা ধরি, নতুন চাকরি পাওয়া প্রত্যেক লোকের বার্ষিক আয় ৫০ হাজার ইউয়ান রেনমিনপি হবে, তাহলে সারা বছরে ৯০ লাখ লোকের বার্ষিক আয় ৪৫০ বিলিয়ন ইউয়ান রেনমিনপিতে দাঁড়াবে। সাধারণভাবে বলা যায়, বাসিন্দাদের আয় জিডিপি'র মোট মূল্যের ৪০ শতাংশের কাছাকাছি।"

বিশেষজ্ঞরা বলেন, চলতি বছরের আর্থিকনীতি আরো সক্রিয় হবে এবং মুদ্রানীতিও আরও কার্যকর হবে। চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসের প্রতিনিধি হান ইয়োং ওয়েন মনে করেন, চলতি বছরের আর্থিকনীতি অনেক শক্তিশালী।

তিনি বলেন,

"চলতি বছর সাধারণ ব্যয় কঠোরভাবে কমাতে হবে এবং কোনো অপচয়ও নিষিদ্ধ করতে হবে। দেশব্যাপী জাতীয় রাজস্ব বিশ্লেষণ করে মনে হয়, চলতি বছর শূন্য প্রবৃদ্ধি বা সামান্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করা গেলেও তা খুব ভালো ফলাফল হবে। তাই চলতি বছর কেন্দ্রীয় সরকার ব্যয়ের কাঠামো ব্যাপকভাবে সুবিন্যস্ত করেছে। একদিকে অ-প্রয়োজনীয় ব্যয় ৫০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে আঞ্চলিক সরকারে কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্যের মাত্রা বাড়ানো হয়েছে। এদিক থেকে বলা যায়, তৃণমূলের নানা কর্মকাণ্ডে নিশ্চয়তা প্রদান করা, কর্মসংস্থান ও গণজীবিকা সুনিশ্চিত করা, এবং দারিদ্র্যমুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।"

চীনের অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদী ভালো প্রবণতা পরিবর্তিত হয়নি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। যেহেতু আগে মজবুত ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে, তাই সার্বিকভাবে সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্য অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে বলে তারা বিশ্বাস করেন। (লিলি/আলিম/শুয়ে)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040