বিদেশিদের চোখে দুই অধিবেশন: আত্মবিশ্বাসী ও উদ্ভাবনী, যথার্থ ও দায়িত্বশীল
  2020-06-02 10:31:53  cri
"দুই অধিবেশন" বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিদেশি মিডিয়া ও বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, মহামারীর কারণে দেরিতে অনুষ্ঠিত হলেও চীনের "দুই অধিবেশন" সফলভাবে মে মাসে অনুষ্ঠিত হয়; যা বিশ্বকে নভেল করোনাভাইরাস নিউমোনিয়া মহামারী কাটিয়ে ওঠায় আস্থা যুগিয়েছে। চীন এ বছর সরকারি কার্যবিবরণীতে বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য নির্দিষ্ট কোনও লক্ষ্যমাত্রা রাখেনি। এটি বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এটি একটি অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে চীনের সঠিক ও দায়িত্বশীল আচরণ।

বিদেশি গণমাধ্যম "দুই অধিবেশনের" দিকে মনোনিবেশ করেছিল। তারা বিশ্বাস করে যে "দুই অধিবেশন" একটি বিশেষ সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা চীনের শক্তি ও আত্মবিশ্বাস প্রদর্শন করে। বিবিসি'র প্রতিবেদনে বলা হয় যে, "দুই অধিবেশন" চীনের শক্তি ও আস্থা তুলে ধরেছে। মহামারী কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ হয়েছে এবং স্বাভাবিক জীবন ধীরে ধীরে শুরু হচ্ছে।

ফরাসি সংবাদপত্র লা মন্ডে বলে, "দুই অধিবেশন" চীনা জনগণকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আরও আশা দিয়েছে। কাজাখস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল নিউজ জানায়, মহামারী পরীক্ষার অধীনে চীনের অর্থনীতি স্থিতিশী ছিল এবং চীনের উন্নয়ন বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করবে। এ বছরের "দুই অধিবেশন" স্থগিত করা হলেও চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক সমাজের প্রত্যাশা কমেনি।

আশাহি সিম্বুন, সিন চেউ ডেইলি এবং ভয়েস অফ জার্মানি'র মতো মিডিয়াও এ বছর মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের স্বাভাবিককরণ প্রসঙ্গে "দুই অধিবেশনের" সামঞ্জস্য ও উদ্ভাবনের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। যেমন, অধিবেশনের সময় কমানো এবং সাক্ষাত্কারের পদ্ধতি পরিবর্তন করা ইত্যাদি।

কেনিয়ার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আফ্রিকান পাবলিক পলিসি বিশেষজ্ঞ এবং চীন ইস্যুতে গবেষণারত পণ্ডিত স্টিভেন নেদেগোয়া চায়না মিডিয়া গ্রুপে এক সাক্ষাত্কার দেন। তিনি বলেন, দুই মাস দেরি হলেও চীনের "দুই অধিবেশন" অনুষ্ঠিত হওয়া নভেল করোনাভাইরাস নিউমোনিয়া মহামারী রোধে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে! নেদেগোয়া বলেন, "চীন নভেল করোনাভাইরাস নিউমোনিয়া মহামারী নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং উত্পাদন কাজ এগিয়ে চলছে। অন্যান্য দেশের জন্য এটি অবশ্যই একটি ভাল সংকেত। 'দুই অধিবেশন' আমাদের কাছে চীনের ঐক্যবদ্ধ রূপ ফুটিয়ে তুলেছে। এটি কেবল সামগ্রিকভাবে এগিয়ে চলছে তাই নয়, অদূর ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনাও করছে, যার ফলে ভবিষ্যতে দেখা যাবে।"

চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের সরকারি কার্যবিবরণীর নির্ধারিত বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বাইরের বিশ্ব সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ দেখায়। এ বছর পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে মূল্যায়ন করে চীন মহামারীর আগে উল্লেখিত প্রত্যাশিত লক্ষ্যের সঙ্গে যথাযথ সামঞ্জস্য করেছে। এ বছরের সরকারি কার্যবিবরণীতে বার্ষিক অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য নির্দিষ্ট কোনও লক্ষ্যমাত্রা প্রস্তাব করা হয়নি।

এ সম্পর্কে দক্ষিণ কোরিয়ার চোসুন ইলবো জানায় চীন গত বছর তার বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে ৬ থেকে ৬.৫ শতাংশ এবং এ বছরের অর্থনৈতিক বিকাশে আরও বেশি মনোযোগ দিয়েছে।

জাপানের "শিল্প ও অর্থনৈতিক সংবাদ" প্রতিবেদনে বিশ্বাস করা হয় যে, চীন এ বছর নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা প্রকাশ না করলেও, সরকার দেশে পুঁজি বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও বিভিন্ন ব্যবস্থায় বাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য প্রস্তাব না করা হলো, অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে চীনের দায়বদ্ধতার প্রকাশ। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিশ্বায়নের গভীরতার সাথে চীনা অর্থনীতি বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে গভীরভাবে সংহত হয়েছে। সরকারি কার্যবিবরণীর 'ছয়টি স্থিতিশীলতা' ও 'ছয়টি গ্যারান্টি' পুরোপুরি চীনা অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট দিক প্রদর্শন করে।

কেনিয়ার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আফ্রিকান পাবলিক পলিসি বিশেষজ্ঞ এবং চীনা ইস্যুতে গবেষণারত পণ্ডিত স্টিভেন নেদেগোয়া বলেন,

"নভেল করোনাভাইরাস নিউমোনিয়া মহামারীর কারণে, বিশ্বের যে কোনও অর্থনীতি এখন অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। এটি সঠিক ও বাস্তববাদী যে, চীন সরকার এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেনি। তবে, একই সাথে চীন কর্মসংস্থান প্রসারের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, কর্পোরেট ট্যাক্স হ্রাস বা ছাড়ের জন্য পদক্ষেপগুলি চালু করেছে। আমি মনে করি এটি ভাল!"

মহামারীর কারণে বিশ্বের অনেক দেশে বেকারত্ব আকাশ ছুঁয়েছে। বিদেশি গণমাধ্যমগুলো যখন চীনের "দুই অধিবেশনের" খবর দেয়, তখন তারা কর্মসংস্থান সম্পর্কিত বিষয়বস্তুর প্রতিও বিশেষ মনোযোগ দেয়।

সিএনএন জানায়, "দুই অধিবেশনের" অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কীভাবে আরও বেশি কাজের সুযোগ তৈরি করা যায়।

সিন ছেউ ডেইলি উল্লেখ করে যে, ২০২০-এর মুখোমুখি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর চীনের "দুই অধিবেশন" এর অন্যতম মূল বিষয় "কর্মসংস্থান রক্ষা করা"।

ভিয়েতনামের মূলধারার সংবাদ নেটওয়ার্ক "ভিয়েতনাম ডেইলি নিউজ" এবং "ইয়াং পিপলস ডেইলি" উদ্বেগ প্রকাশ করে যে, এ বছর চীনের সরকারি কার্যবিবরণীতে কর্মসংস্থান স্থিতিশীল করা এবং মানুষের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। ভিয়েতনামের মিডিয়া মনে করে, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে চীনের অভিজ্ঞতা ভিয়েতনামের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ইরানের তাসনিম নিউজ এজেন্সি বিশ্বাস করে: "চীন মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করার সঙ্গে সঙ্গে দারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবে এবং একটি সার্বিক সচ্ছল সমাজ গড়ে তুলতে পারবে।" বার্তা সংস্থাটি চীনের কর্মসংস্থান স্থিতিশীলতা ও সম্প্রসারণ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের উন্নয়ন নিয়ে রিপোর্ট করছে। নভেল করোনাভাইরাস নিউমোনিয়া মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর চীনের "দুই অধিবেশনে" গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে মিডিয়াটি।

জাপান ফেডারেশন অফ ইকোনমিক অর্গানাইজেশনের সভাপতি নাকনিষি হিরোয়াকি চীনের অর্থনীতি নিয়ে আরও আত্মবিশ্বাসী। হিটাচির চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি চায়না মিডিয়া গ্রুপের সাংবাদিকদের বলেন, হিটাচির চীনা কারখানার উত্পাদন মূলত আবারও শুরু হয়েছে। তিনি বলেন: "চীনের নিজেরই একটি বিশাল বাজার আছে!"

(জিনিয়া/তৌহিদ/শুয়েই)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040