ভ্লগ—প্রধান গণমাধ্যমগুলো প্রচারের নতুন পদ্ধতি
  2020-05-28 19:55:36  cri

নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর সময় সাম্প্রতিক দু-এক বছরে জনপ্রিয় প্রচার মাধ্যমের নতুন ফর্ম হিসেবে ভ্লগ ইন্টারনেটে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে।

ভ্লগ হলে ভিডিও ব্লগের সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি হলো দৈনন্দিন জীবনের রেকর্ড করা ভিডিও ব্লগ। এবার আকস্মিক নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর সময় ভ্লগ জনগণের মহামারীর সময় দৈনন্দিন জীবন রেকর্ড করা এবং ভাবানুভূতি প্রকাশের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমে পরিণত হয়। প্রধান গণমাধ্যম সময়মতো প্রচারের এই নতুন ফর্ম অনুসরণ করে। মহামারী প্রতিরোধের প্রথম ফ্রন্ট লাইন থেকে ব্যাপক ভ্লগ প্রকাশ করা ছাড়াও, ভ্লগের উত্সও সম্প্রসারণ করার জন্য ব্যাপক নেটব্যবহারকারীদের ভ্লগ সংগ্রহ করে আরো বেশি আরো বৈচিত্র্যময় আরো প্রাণবন্ত মহামারী প্রতিরোধের দৃশ্য তুলে ধরে প্রধান গণমাধ্যমগুলো।

রেকর্ড করার পর সম্পাদিত ভিডিওর চেয়ে ভ্লগ ভিন্ন রকমের। প্রত্যেক ভ্লগে আমরা উপস্থাপকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তার কথা শুনে এক একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সত্যিকারের দৃশ্য-বিন্যাস দেখতে পাই। বলা যায়, ভ্লগ প্রচার করা হলো প্রধান গণমাধ্যমের নতুন প্রবণতা। এর মাধ্যমে সাহসের সঙ্গে জনমতকে সৃজনশীল করে তোলার গুরুত্বপূর্ণ চেষ্টা।

ভ্লগের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, 'সত্য তথ্য' থেকে 'সত্য অভিজ্ঞতা' পৌঁছে দেওয়ার রূপান্তর। এবারের মহামারীর সময় ভাইরাসের সঙ্গে সঙ্গে আসে নানা গুজব ও বৈষম্যমূলক জনমত। একদিকে এসব 'তথ্য ভাইরাস' ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ছে এবং জনগণের মন বিশৃঙ্খল করে তুলছে, অন্যদিকে মহামারী প্রতিরোধসহ বিভিন্ন তথ্য জানতে খুব আগ্রহী জনগণও। তাই জনগণের এই জরুরি চাহিদা পূরণ করতে ভিডিও খবরের ফর্মও পরিবর্তিত হয়। 'সত্য তথ্য' পৌঁছে দেওয়া থেকে 'সত্য অভিজ্ঞতা' পৌঁছে দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধান গণমাধ্যম।

ছবি ও অক্ষরের তুলনায় ঐতিহ্যবাহী ভিডিও সংবাদ আরো সত্য হয়ে থাকে। তবে ভিডিও সংবাদ সম্পাদনার প্রক্রিয়ায় কিছু ভুল বোঝাবোঝি সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু ভ্লগ সংবাদ প্রচারের প্রক্রিয়ায় ঘটনার সর্বোচ্চ সত্যতা রেকর্ড করা সম্ভব।

এবারের ভ্লগের উত্পত্তির দিকে দৃষ্টি দেবো।

ভ্লগ সবার আগে বিদেশি গণমাধ্যমের প্লাটফর্মে শুরু হয়। ২০১৮ সাল থেকে ধাপে ধাপে তা চীনে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রথমে কোনো কোনো বিদেশে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা তাদের জীবন তুলে ধরা শুরু করে। ২০১৯ সালে দুই অধিবেশনের সময় অনেক গণমাধ্যম ভ্লগ প্রচার শুরু করে এবং যা নেটব্যবহারকারীদের মধ্যে সমাদৃত হয়।

এবারের উহান শহরে লকডাউনের সময় ভ্লগের ঢেউ শুরু হয়। উহান শহরের একজন ভ্লগের মাধ্যমে লকডাউনের পর উহান শহরে প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম, পরিবহন ও শহরবাসীদের প্রকৃত অবস্থা রেকর্ড করে ইন্টারনেটে প্রচার করেন। তারপর প্রধান গণমাধ্যম সাহসের সঙ্গে ভ্লগ পদ্ধতি গ্রহণ করে অনেক সাংবাদিকের রেকর্ড করা ভ্লগ প্রকাশ করা শুরু করে। তা ছাড়া, আরো অনেক উইমিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ গণমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সহযোগিতা করে ব্যাপক ভ্লগিং শুরু হয়।

সাধারণত, এক পর্বের ভ্লগের সময়সীমা দুই বা তিন মিনিট। কখনও কখনও পাঁচ থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত। প্রত্যেক ভ্লগের একটি থিম আছে। বেশ কয়েকটি দৃশ্য-বিন্যাস দিয়ে এই থিম প্রকাশিত হয়।

মহামারীর সময় ভ্লগের বিষয় প্রধানত তিনটি ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত।

প্রথমত একজন সাংবাদিক বক্তা হিসেবে ঘটনাস্থলে নানা দৃশ্য রেকর্ড করে। দ্বিতীয়ত, সাধারণ মানুষ ভ্লগের প্রধান চরিত্র হিসেবে নিজের মহামারী প্রতিরোধের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে। তৃতীয়ত, মতামত প্রকাশের ভ্লগ। এমন ধরনের ভ্লগ হলো বিশ্লেষণমূলক বা পর্যালোচনামূলক ভ্লগ এবং এমন ভ্লগ জনমতের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা পালন করে থাকে।

এখন প্রধান গণমাধ্যম ভ্লগের বৈশিষ্ট্য ও উন্নয়নের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করবো।

ভ্লগ সংবাদ নিউজ প্রচারের ফর্ম, বিষয়, দৃষ্টিভঙ্গি ও খুঁটিনাটি বিষয় বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে। সামাজিক যোগাযোগ গণমাধ্যমে ব্যক্তিগত ভ্লগ রেকর্ডের চেয়ে ভিন্ন এবং ঐতিহ্যবাহী ভিডিও সংবাদের চেয়েও আলাদা। এতে বৈশিষ্ট্যময় ভাষা ও পাবলিক ইস্যুতে মনোযোগের সমন্বয় করা হয়। যা সংবাদ ব্যাখ্যার দৃষ্টিকোণ পরিবর্তন করে, সংবাদ প্রকাশের ফর্ম সৃজনশীল করে তোলে এবং সংবাদের বিষয় সম্প্রসারণ করে।

বলা যায়, সত্য অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রেকর্ড করা ভ্লগ পরবর্তী দীর্ঘ সময়ে ভিডিও সংবাদ উন্নয়নের প্রধান দিক হয়ে ওঠে। এটি হলো প্রধান গণমাধ্যমের ঐতিহ্যবাহী প্রচারের ছাপ ভঙ্গ করার প্রধান উপায় এবং অব্যাহতভাবে নেটব্যবহারকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা ও ইন্টারনেটের প্রভাব সম্প্রসারণের গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। লিলি/তৌহিদ/শুয়ে

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040