গানের মালা: বাড়ির কাছে আরশিনগর
  2020-05-29 08:59:37  cri


 

প্রিয় শ্রোতা, আশা করি ভাল আছেন। বেইজিং থেকে প্রচারিত চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান 'গানের মালায়' আপনাদের সবাইকে আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি আমি ইয়াং ওয়েই মিং স্বর্ণা।

সংগীত কোনো দেশের সীমা মানে না। সংগীতের জগতে ডুব দেওয়ার আনন্দই আলাদা। যে যেখানে যেভাবেই থাকুন-না-কেন, আসুন সংগীত উপভোগ করি।

আজকের গানের মালা অনুষ্ঠানে সুন্দর সুরের সঙ্গে একটি লালনসংগীত এবং তার চীনা ভাষার অনুবাদ আপনাদের পড়ে শোনাবো, কেমন?

আজকের বিষয়টি বেশ জটিল। একই তত্ত্বের সাধক বা একই পথের যাত্রী যারা, তাদের মধ্যে যে বন্ধুত্ব কিংবা রেষারেষি থাকবে, তা আশ্চর্য নয়। কিন্তু সম্পর্কটি যদি নারী ও পুরুষের মাঝে হয়? বিপরীত লিঙ্গের মধ্যেকার সহজাত আকর্ষণটুকু কি সেই সাধনা বা যাত্রাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়? নাকি তার অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়?

প্রশ্নগুলো করছি কারণ বাউলসম্রাট লালন সাঁইয়ের বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতাটি পড়তে গিয়ে সেগুলো মনে এলো। বাউলদের আমরা সাধক বলে জানি; কিন্তু তাঁরা কি মানবিক প্রবৃত্তির প্রভাব থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেন? লালন সাঁইয়ের ভাষায় –

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো / যম যাতনা সকল যেত, দূরে

সে আর লালন একখানে রয় / তবু লক্ষ যোজন ফাঁকে রে।।

হয়তো আমাদের কেউই পুরোপুরি মুক্ত নই, কিংবা আমিই হয়তো আধ্যাত্মিক মিলনের আকাঙ্ক্ষাকে সাধারণ মানুষের আসক্তি ভেবে ভুল করছি। যাই হোক, ক্ষুদ্র মনের অনুধাবনের বাইরের প্রশ্নগুলো বাউলসম্রাটের কবিতাটিসহ শ্রোতাদের চিন্তার খোরাক যোগাবে, এই আশায় তুলে ধরলাম- বাড়ির কাছে আরশিনগর।

বাড়ির কাছে আরশিনগর

我家附近有个镜子之城

সেথা এক পড়শি বসত করে।

那里住着一个邻居。

আমি একদিন না দেখিলাম তারে।।

我甚至一次都没有见过她。

গিরাম বেড়ে অগাধ পানি

(她的)村庄被深不见底的水围住了

ও তার নাই কিনারা নাই তরণী পারে

没有边际,没有船能过去

মনে বাঞ্ছা করি দেখব তারে

心中渴望见到她

কেমনে সে গাঁয় যাই রে।।

唉,我怎么才能到那个村庄呢?

বলবো কী সেই পড়শির কথা

关于我的邻居我能说什么呢

ও তার হস্তপদ স্কন্ধমাথা, নাই রে

她没有手脚,没有肩膀和头

ক্ষণেক থাকে শূন্যের উপর

有时她在空中

ক্ষণেক ভাসে নীরে।।

有时漂浮在水里。

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো

邻居如果触碰我

যম যাতনা সকল যেত, দূরে

死亡和痛苦都会远离

সে আর লালন একখানে রয়

她和拉拢在一起

তবু লক্ষ যোজন ফাঁকে রে।।

但又相隔千里。

– লালন সাঁই

লালনের এ গানের সঙ্গে তুলনা করা যায় চীনের থাং রাজবংশের একজন প্রতিভাবান নারী কবি লি জি-এর একটি কবিতা।

"至近至远东西,

বিশ্বের নিকটতম এবং দূরতম স্থান পূর্ব ও পশ্চিম,

至深至浅清溪。

বিশ্বের গভীরতম এবং অগভীরতম খাঁড়ি।

至高至明日月,

এই পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় এবং উজ্জ্বলতম সূর্য ও চাঁদ।

至亲至疏夫妻。"唐朝李冶《八至诗》

বিশ্বের সবচেয়ে অন্তরঙ্গ ও দূরবর্তী সম্পর্ক দাম্পত্য।

এ কবিতাটি লালনের গানগুলোর মতো, প্রথমে পড়ে শব্দচয়ন খুব সহজ ও সরল মনে হয়। কিন্তু বহুবার পড়লে এ সরল জীবনের গভীর দর্শন আবিষ্কার করা যায়। এ কবিতার রচয়িতা লি জে থাং রাজবংশের একজন ফকির বা নারী সন্ন্যাসী। সম্ভবত লালন বা সন্ন্যাসীর মত সমাজ থেকে দূরে থাকা জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এক ধরনের ঠান্ডা বুদ্ধি দিয়ে তা পর্যবেক্ষণ করেন।

প্রথম পংক্তি দূরত্ব নিয়ে। পৃথিবীর সবচেয়ে দূরত্ব স্থান পূর্ব ও পশ্চিম। তা ছাড়া, প্রতিটি জিনিসের দুটি দিক থাকে। একটি সুই থেকে মহাপৃথিবী পর্যন্ত। এ দূরত্ব ছোট হতে পারে, বড়ও হতে পারে।

দ্বিতীয় পংক্তির বিষয়গুলো গভীরতা নিয়ে। খাঁড়িতে পা দিলে দেখা যাবে, অগভীর হলে পা-এর সমান হতে পারে, আবার গভীর হলে মাথা পর্যন্ত ডুবে যায়। একটি ফুল বা বালুতেও একটি পৃথিবী থাকতে পারে।

তৃতীয় পংক্তিতে শীর্ষস্থানীয় বা উজ্জ্বলতম সূর্য ও চাঁদের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এক দিন এ পৃথিবীও নির্বাণ হয়ে যাবে। কোন কিছু কি চিরস্থায়ী হয়?

শেষের পংক্তিটি মানুষের বাস্তব জীবন নিয়ে। দম্পতি বা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হলো মানুষে মানুষের সম্পর্ক ও ভালবাসার একটি উদাহরণ। এ সম্পর্ক সবচেয়ে কাছের হতে পারে, আবার দু'জন একসাথে থাকলেও লালনের কথার মতো 'লক্ষ যোজন ফাঁকে' থাকতে পারে। স্বামী ও স্ত্রী প্রকৃতপক্ষে নিকটতম ব্যক্তি হতে পারে আবার আপনার হৃদয় থেকে সবচেয়ে দূরের মানুষও হতে পারে।

সুপ্রিয় শ্রোতা, কেমন লাগছে আমাদের অনুষ্ঠান? আপনার পছন্দের গান বা কবিতাগুলো আমাকে পাঠিয়ে দিতে পারেন। এই গান ও কবিতার পেছনে আপনার গল্প বা অনুভূতিগুলোও আমাকে পাঠাতে পারেন। আমি বাছাই করে চীনা ভাষায় অনুবাদ করে অনুষ্ঠানে প্রচার করবো। কেমন?

আমার ইমেল ঠিকানা হচ্ছে: 1478605810@qq.com আশা করি আপনাদের সঙ্গে আরো অনেক সুন্দর সুন্দর গান বা কবিতার কথা শেয়ার করতে পারি। সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন, আবার কথা হবে।

(স্বর্ণা/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040