চীনের আর্থিক প্রবৃদ্ধির বিস্তারিত লক্ষ্য নির্ধারণ না করা অর্থনীতির মানসম্মত উন্নয়নে সহায়ক: ওইসিডি'র বিশেষজ্ঞ
  2020-05-27 14:00:25  cri
মে ২৭: প্রতি বছর দুই অধিবেশনে চীন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা দেশ-বিদেশের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয় বিষয়। তবে চলতি বছরের সরকারি কার্যবিবরণীতে নতুন অর্থবছরের জন্য কোনো বিস্তারিত লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় নি। এ সম্পর্কে বিদেশি অর্থনীতিবিদরা নানা মন্তব্য করেছেন। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় চায়না মিডিয়া গ্রুপকে দেওয়া ওইসিডি'র চীনা অর্থনীতিবিষয়ক মহাপরিচালক ডক্টর মার্গিট মলনারের সাক্ষাত্কার শুনানো।

চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংয়ের পেশ করা চলতি বছরের সরকারি কার্যবিবরণীতে অনেক পরিবর্তন দেখা গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো, পুরো বছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিস্তারিত লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় নি। এ প্রসঙ্গে ওইসিডি'র চীনা অর্থনীতিবিষয়ক মহাপরিচালক ডক্টর মার্গিট মলনার বলেন, কোনো বিস্তারিত লক্ষ্য নির্ধারণ না করা অর্থনীতির গুণগতমান উন্নয়নের জন্য সহায়ক। তিনি বলেন,

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার গুণগতমানের প্রতীক নয় বলে আমি মনে করি। কোনও বিস্তারিত লক্ষ্য নির্ধারণ না করেও গুণগত মান উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা যেতে পারে; যার অর্থ আর্থিক প্রবৃদ্ধির ওপর অতিরিক্ত নজর দেওয়া হলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান উপেক্ষা করা যেতে পারে। যেমন, উন্নয়নের গুণগতমান এবং উত্পাদনের কার্যকারিতা উন্নয়ন ইত্যাদি। এবারে কোনো বিস্তারিত লক্ষ্য নির্ধারণ না করে কিছু বড় কাঠামোগত সংস্কার পরিচালনা করা হবে এবং ভবিষ্যতের ভিত্তি সুসংহত করা হবে বলে আমি আশা করি।

চলতি বছরের সরকারি কার্যবিবরণীতে বলা হয়, "ছয়টি ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার কাজ চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সার্বিকভাবে নাগরিকদের কর্মসংস্থান, মৌলিক গণজীবিকা, বাজারের প্রধান অবস্থান, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা, উত্পাদন চেইন ও সরবরাহ এবং তৃণমূল পর্যায়ের সুষ্ঠু কার্যক্রম বজায় রাখার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। ডক্টর মলনার বলেন, কর্মসংস্থান ও মৌলিক গণজীবিকা রক্ষার বিষয়টিও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

কর্মসংস্থান রক্ষা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যার অর্থ সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। মৌলিক গণজীবিকার আওতায় রয়েছে সামাজিক নিশ্চয়তা বাড়ানোর বিষয়টি। যেমন, চিকিত্সার ব্যয় পরিশোধের হার বাড়ানো, বেকারভাতা, বীমা ইত্যাদি।

সরকারি কার্যবিবরণীতে বলা হয়, ২০২০ সালে আর্থিক নীতির আলোকে প্রধানত কর কমানো, নানা পদ্ধতিতে অর্থ সংগ্রহ, ব্যয়ের কাঠামো সুবিন্যাস, স্থানীয় সরকারের আর্থিক সংকট শিথিল করা এবং সরকারি বিনিয়োগের আকার বৃদ্ধি করা। এ প্রসঙ্গে মলনার বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে কর ও ব্যয় কমানো শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির বোঝা কমানো হয়। ভবিষ্যতে মহামারি শেষ হলে অর্থনীতিও এর সঙ্গে পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন; যাতে মাঝারি ও দীর্ঘকালীন অর্থের উত্স নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

আকস্মিক কোভিড-১৯ মহামারির কারণে অনেক দেশ ও অঞ্চলে ব্যাপক কুপ্রভাব পড়েছে। আন্তর্জাতিক সমাজে সংরক্ষণবাদ মাথাচাড়া দিয়েছে। কিছু দেশ তাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠান চীন থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে মলনার বলেন,

'আমি মনে করি, চীন থেকে ব্যাপক পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগ সরে যাবে না। বিদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বাজারের নীতি অনুযায়ী পরিচালিত হয়। চীনের পরিবেশ মাঝারি ও দীর্ঘকালীন বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত। বিশেষ করে, বাজারের আকারের দিক থেকে। অন্যদিকে দেশটির অবকাঠামোও সুবিন্যস্ত। জনশক্তির দক্ষতা বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। সেসব সুবিধার কারণে চীনা বাজারের প্রতি আকর্ষণ থেকে যাবে।

মলনার আরও বলেন, কিছু বিদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান চীন থেকে সরে গেলেও, ব্যাপক পরিমাণে প্রতিষ্ঠান চীন থেকে সরে যাচ্ছে বলে আমি মনে করি না। বেশিরভাগই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বিবেচনা থেকেই সরে যাচ্ছে। তা ছাড়া, চীন এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসার পরিবেশ আরও উন্নত করতে পারে। বিশেষ করে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে নিরপেক্ষ নীতি নিশ্চিত করতে পারে চীন।

(রুবি/তৌহিদ/আকাশ/সুবর্ণা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040