বিশেষজ্ঞরা বলছেন ঈদের পর করোনা চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছতে পারে বাংলাদেশে। তাই ঈদগাহ এবং খোলা জায়গায় ঈদের জামাত নিষিদ্ধ করেছে সরকার। ঈদের ছুটিতে কর্মস্থল ত্যাগের ওপর আরোপ করে নিষেধাজ্ঞা। তবে মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের জামাতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। মানুষজনকে বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সর্বোচ্চ মৃত্যু আর আক্রান্তের খবরেও সতর্ক হচ্ছে না মানুষজন।
ঈদে কেনাকাটার সুযোগ দিতে দোকানপাট-শপিংমল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত করোনা সংক্রমণ বাড়িয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এর পর সরকারের তরফে আগেই ঘোষণা দেয়া হয় ঈদ-ছুটিতে কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না। কিন্তু তারপরই রাজধানী থেকে মানুষজনকে পড়িমরি করে বাইরে যেতে দেখা গেছে। পুলিশ নগরীর বিহর্গমণ ও প্রবেশমুখে তল্লাসিচৌকি বসায়। এরই মধ্যে ফেরিঘাটগুলোতে বিপুল মানুষ জড়ো হয়। পুলিশের আইজিপি বেনজির আহমেদ জানান তারা কাউকে ঢাকা ত্যাগ করতে বা বের হতে দেবেন না। ফেরি ঘাট থেকে অনেক মানুষকে আবার রাজধানী ফিরে আসতে হয়। জনদুর্ভোগ হলেওকর্তৃপক্ষের এ উদ্যোগ সাধুবাদ পায়।
কিন্তু দু'দিন বাদেই পরিস্থিতি একেবারে পাল্টে গেলো। পুলিশ জানালো যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে তারা ঈদে বাড়ি যেতে পারবেন। পুলিশ তল্লাসিচৌকি তুলে নিলো নগরীর প্রবেশ ও বহির্গমন পথ থেকে। সঙ্গে সঙ্গে ফের ঘরমুখী মানুষের ঢল। মহাসড়কে এখন ব্যক্তিগত গাড়ি চলছে ভাড়ায়। সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ব্যাটারিচালিত রিক্সা এমনকি পায়ে হেটেও মানুষ চলছে বাড়ির পথে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই মানুষের বিড়ম্বনার ঈদ-যাত্রা। তবে হাঁ এদের সবাই যে শুধু ঈদ করবেন বলেই এমন ঝুঁকি নিচ্ছেন তা হয়তো নয়। অনেকে লকডাউনে দুমাস ধরে আটকা পড়েছিলেন রাজধানীসহ শহরাঞ্চলে। আরো অনেকদিন এ অবস্থা থাকবে ধারনা করে মরিয়া হয়ে তারা ফিরতে চাইছেন নিজ ঘরে। এই অবস্থা নিশ্চিতভাবে গোটা দেশকে ফের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলেছে।
সরকার করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১৪টি শর্তে ঈদের জামাতের অনুমতি দিয়েছে। রাজধানীতে জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত বাতিল করা হয়েছে। এর বদলে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে হবে ঈদের পাঁচটি জামাত। ঈদের জামাত বাতিল হয়েছে দেশের বৃহত্তম শোলাকিয়া ঈদগাহসহ সব জায়গায়। তবে রাজধানীসহ সারাদেশে মসজিদ ঈদজামাতের অনুমতি রয়েছে।
এর ফলেও করোনা সংক্রমণের বড় ঝুঁকি থাকলো। রাজধানী কিংবা শহরাঞ্চলে বড় বড় মসজিদগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি খানিটকটা মানা সম্ভব হলেও সারা দেশে বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে মসজিদের কে মানাবে স্বাস্থ্যবিধি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যবিধির কোনো তোয়াক্কা করছেন না কেউ। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগেই ঈদ উদযাপন করেছেন দেশের বেশ কিছু জায়গার মানুষ। দেখা গেছে কোথাও কোথাও খোলা জায়গায় ঈদজামাত হয়েছে। আর স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে কোথাও কোথাও কোলাকুলি করতেও দেখা গেছে মুসল্লিদের। সোমবার ঈদের দিনে বহু জায়গায় এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে এ আশঙ্কা অমূলক নয়।
এরই মধ্যে করোনা-দুর্যোগে আনন্দহীন ঈদ, একেবারেই নিরান্দের হয়ে এসেছে দেশের উপকূলীয়সহ ২৬টি জেলার মানুষের জন্য। ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়েছে উপকূলীয় এলাকা। মারা যান ২১ জন মানুষ। সরকারের প্রাথমিক হিসাবেই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে হাজার কোটি টাকার ওপরে। ঘূর্ণিঝড়ের পরপরই সরকারের তরফে ত্রাণকার্যক্রম শুরু হলেও এখনো খোলা আকাশের নিচে বাস করছেন ঘূর্ণিঝড়ে ঘরহারা বহু মানুষ। সরকারের পাশপাশি সমাজের সকলকে এ সব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে- ঈদের শিক্ষাও তাই।
ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।