করোনা সংক্রমণের চূড়ামুখি বাংলাদেশ, আছে সুসংবাদও
  2020-05-17 20:10:01  cri

দেশে করোনা সংক্রমণে ১০ম সপ্তাহ শেষ করে ১১তম সপ্তাহে পড়েছে। এরই মধ্যে মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে। এ সময়ে রোগী শনাক্ত হয়েছে ২২ হাজারের বেশি। অর্থাৎ আশঙ্কা অনুযায়ী করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছ। করোনা সংক্রমণের ক্রম উর্ধ্বগতি নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন মে মাস তো বটেই জুন-জুলাইতেও করোনার এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে, এ খারাপ খবরের বিপরীতে কিছু ভালো খবরও রয়েছে করোনা দুর্যোগে। বাংলাদেশের একদল বিজ্ঞানী করোনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে সাফল্য পেয়েছেন। দেশের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা দাবি করেছেন, তারা এমন একটি ওষুধের সংমিশ্রণ তৈরি করতে পেরেছেন যা দিয়ে ৪ দিনে করোনা রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব। এছাড়া ঢাকা মেডিকেলে করোনা রোগীদের প্লাজমা থেরাপি চিকিৎসা শুরু হয়েছে। প্রিয় দর্শক আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় আমরা নজর দেব করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতির ওপর।

৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর প্রথম সপ্তাহে আক্রান্ত হন মাত্র ৩ জন। পরের সপ্তাহে আক্রান্ত ৮ গুণ বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ জনে। তৃতীয় সপ্তাহে আরো ২৪ জন। চতুর্থ সপ্তাহে ২২ জনসহ মোট আক্রান্ত হন ৭০ জন। পঞ্চম সপ্তাহে তা একলাফে বেড়ে দাঁড়ায় ৪১২ জনে। ষষ্ঠ সপ্তাহে হাজার পেরিয়ে ১ হাজার ৬৬২ জন। সপ্তম সপ্তাহে ২ হাজার ৮৫৪ জন। ৮ম সপ্তাহে আক্রান্তের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ হাজার ৭৯২ জনে। নবম সপ্তাহে আক্রান্ত হন ৪ হাজার ৯৮০ জন। আর ১০ম সপ্তাহে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭ হাজার ২২৫ জনে। ১১তম সপ্তাহের প্রথম দিন ১৭ মে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে রেকর্ড ১ হাজার ২৭৩ জনে।

করোনা রোগী শনাক্তের এ গ্রাফই বলে দিচ্ছে বিশ্বে করোনা উপদ্রুত দেশগুলোর মতোই জ্যামিতিক হারে বাড়ছে বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। বিশ্বে দ্রুত করোনা ছড়ানো দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ এখন ১০০তম দেশ থেকে ৩৬তম দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয়।

করোনার এ ব্যাপক বিস্তারের জন্য লকডাউন শিথিল ও না মানা এবং গার্মেন্টস খোলার বড় প্রভাব রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরবর্তীতে ঈদ কেনাকাটার সুযোগ দিতে শপিংমল, দোকানপাট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ঈদ কেনাকাটায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। এতে মে মাস তো বটেই আগামী জুন-জুলাই মাসেও করোনার আরো মারাত্মক বিস্তারের আশঙ্কা থাকছেই।

এমন সব খারাপ খবরের মধ্যে সুসংবাদ নিয়ে এসেছে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামে বাংলাদেশের একটি বেসরকারি সংস্থা। অনুজীব বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহার নেতৃত্বে এই সংস্থার বিজ্ঞানীরা করোনার ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে সাফল্য পেয়েছেন। এর মাধ্যমে ভাইরাসটির গতি প্রকৃতি সম্পর্কে জানা যাবে যা ভাইরাসটির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তথ্য যোগাবে।

বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা আরও একটি সুসংবাদ দিয়েছেন। হাসপাতালটির বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তারেক আলম দাবি করেছেন দুটি প্রচলিত ওষুধ অ্যান্টিপ্রোটোয়াজোয়াল মেডিসিন ইভারমেকটিনের সিঙ্গল ডোজের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক ডক্সিসাইক্লিনের সম্মিলিত প্রয়োগে বিস্ময়কর সাফল্য পেয়েছেন তারা। এতে করোনা রোগীর ৫০ ভাগ লক্ষণ কমানো এবং চারদিনে সুস্থ করা সম্ভব।

এরই মধ্যে ঢাকা মেডিকেলে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার শুরু হয়েছে প্লাজমা থেরাপি। এরই মধ্যে ডোনারদের কাছ থেকে প্লাজমা বা রক্তরস সংগ্রহও শুরু করেছে হাসপাতালটি। সেখানে চিকিৎসাধীন ৪৫ জন করোনা রোগীর ওপর পরীক্ষা করা হবে পদ্ধতিটি। হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এম এ খান জানান, তাদের এ পরীক্ষামূলক চিকিৎসার বৈজ্ঞানিক গবেষণাটি জুন নাগাদ শেষ হবে। যে সব করোনা রোগী এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন তাদের প্লাজমা বা রক্তরস সংগ্রহ করে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করিয়ে সুস্থ করার পদ্ধতিই প্লাজমা থেরাপি। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশেই এ পদ্ধতিটি ব্যবহৃত হচ্ছে।

এদিকে, কর্মহীন ৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য বরাদ্দ করা হয় এক হাজর ২০০ কোটি টাকা। নগদ এ অর্থে ৫০ লাখ পরিবারের প্রায় আড়াই কোটি মানুষ উপকৃত হবে।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040