বিদ্যাবার্তা ০৫১১
  2020-05-11 15:00:54  cri

চলতি বছর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে আমরা প্রতি সপ্তাহে বঙ্গবন্ধুর বই 'আমার দেখা নয়াচীন' উপস্থাপন করছি। আজকের আসরের শুরুতেই থাকবে বঙ্গবন্ধুর গ্রন্থ থেকে পাঠ। তা ছাড়া, চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের শিক্ষার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের চিন্তাভাবনা তুলে ধরবো।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর বই 'আমার দেখা নয়াচীন' থেকে পড়ে শোনাচ্ছি। ....

শিক্ষার মাধ্যমে দারিদ্যবিমোচন ও সি চিন পিং

চলতি বছর চীনের দারিদ্র্যমুক্তি ও সার্বিকভাবে সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলার চূড়ান্ত বর্ষ। চীনের দারিদ্র্যবিমোচন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে বিভিন্ন খাতের সুবিধাজনক নীতি চালু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। শিক্ষার মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন তেমনই একটি নীতি। চীনের গরিব এলাকার বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের দুর্বলতা দূর করা এবং দরিদ্র পরিবারের বাচ্চাদের সমান ও গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা দেওয়া দারিদ্র্যবিমোচন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের অন্যতম উপায়।

 

২০১৫ সালের ১৬ অক্টোবর চীনের দারিদ্র্যবিমোচন ও উন্নয়ন ফোরামে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছিলেন, "আমাদের ভিন্ন ধরনের দারিদ্র্যবিমোচন নীতিমালা চালু করতে হবে। ভিন্ন ভিন্ন এলাকার লোকজনকে বিভিন্ন ধরনের সহকারী নীতি মেনে চলতে হবে। উত্পাদন ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতি উন্নত করতে হবে, গরিব এলাকার উন্নয়নে উন্নত এলাকাকে সাহায্য করতে হবে, প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের কার্যক্রম চালু করতে হবে, এবং শিক্ষার মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করতে হবে।"

সম্প্রতি চীনের বিভিন্ন গরিব এলাকায় সংশ্লিষ্টদের সাক্ষাত্কার নেয় সিনহুয়া বার্তাসংস্থার সংবাদদাতারা। তারা দেখেন, অনেক দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়েছে এবং সেসব পরিবার দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে।

গরিব এলাকার বাধ্যতামূলক শিক্ষার দুর্বলতা পূরণ করা

বসন্তকালে চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ইয়ুথিয়ান জেলার দালিইয়াবুই উপজেলার এক প্রাথমিক স্কুলে ক্লাসের ঘন্টা শুনে বাচ্চারা দৌঁড়ে খেলার মাঠে চলে যায়। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এ স্কুল নতুন স্থানে স্থানান্তরিত হয়। নতুন স্থানের উজ্জ্বল ও বিশাল অফিসভবন এবং পরিচ্ছন্ন হোস্টেলসহ বিভিন্ন উন্নত অবকাঠামো এখানকার মরুভূমিতে বিস্ময়কর।

আসলে ইয়াবুই উপজেলা তাকলিমাকান মরুভূমির ভিতরে অবস্থিত, যা চীনের চরম দরিদ্র এলাকাগুলোর অন্যতম। দীর্ঘকাল ধরে ভালো শিক্ষকের অভাব এবং অনুন্নত অবকাঠামো ব্যবস্থাপনার কারণে এ স্কুল শিক্ষার মানের দিক গিয়ে অনেক পিছিয়ে ছিল।

নতুন স্কুলভবন নির্মাণের পর বাচ্চারা আরও স্বাস্থ্যকর ও আরামদায়ক পড়াশোনার পরিবেশ পেয়েছে এবং তাদের লেখাপড়ার মানও বেড়েছে। বর্তমানে বাধ্যতামূলক শিক্ষার পর শিক্ষার্থীদের ১০০ শতাংশই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। স্কুলের প্রেসিডেন্ট আহজ টোহতি বলেন, শিক্ষার জন্য এখন এখানকার শিক্ষার্থীর মরুভূমির বাইরেও যেতে সক্ষম।

দারিদ্র্যবিমোচনের জন্য শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। প্রেসিডেন্ট সি বহুবার এমন কথা বলেছেন। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের সার্বিক সংস্কার অধিবেশনে 'গ্রামাঞ্চলের শিক্ষক সহায়তা পরিকল্পনা' পর্যালোচনার পর গৃহীত হয়। পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, গ্রামাঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত করতে হবে; প্রতিটি গ্রামের বাচ্চাদের সমান ও গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা দিতে হবে।

২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে চীনের হ্যপেই প্রদেশের চাংচিয়াখৌ শহর পরিদর্শনকালে সি জোর দিয়ে বলেন, শিক্ষা দারিদ্র্যবিমোচনের মৌলিক পদ্ধতি। দরিদ্র পরিবারের বাচ্চাদের জন্য শ্রেষ্ঠ বাধ্যতামূলক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে; তাদেরকে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এভাবে দারিদ্র্যকে মূল থেকে উচ্ছেদ করা সম্ভব।

শাআনসি প্রদেশ পরিদর্শনকালে সি আবার বলেন, শহর ও গ্রামের বাধ্যতামূলক শিক্ষা-ব্যবস্থার সমউন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। শহর ও গ্রামের বাধ্যতামূলক শিক্ষার মধ্যে বিদ্যমান ব্যবধান হ্রাস করতে হবে।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনের ৮৩২টি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের গরিব জেলায় বাধ্যতামূলক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২.৯ লাখ থেকে ২৩ হাজারে নেমে এসেছে। এর মধ্যে নিবন্ধিত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১.৫ লাখ থেকে ৬০০০ জনে নেমে এসেছে। চীনের ৯৯.৮ শতাংশ বাধ্যতামূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাদান ব্যবস্থা জাতীয় চাহিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং অনেক দরিদ্র ও গরিব এলাকার স্কুলের অবকাঠামো ব্যাপক উন্নত হয়েছে।

কারিগরি শিক্ষা হবে দারিদ্র্যবিমোচনের ইঞ্জিন

চীনের হাইনান প্রদেশের তানচৌ শহরের ওয়েনফাং গ্রামের কৃষক লি ই কুই বলেন, যদি কারিগরি স্কুলে পড়াশোনা না-করতো, তবে তাঁর মেয়ে খুব সম্ভবত কম বয়সে বিয়ে করে মা হতো। কিন্তু এখন তার মেয়ে স্কুলের শিক্ষক। তার আর্থিক অবস্থাও ভালো। গত কয়েক বছরের টাকা দিয়ে নতুন বাড়িঘর নির্মাণ করেছে সে। এখন সে পরিবারের সবাইকে নিয়ে অনেক সুখী।

গ্রামবাসী লি'র মেয়ে লি স্যুয়ে লিয়ান হাইনান কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। পরিবারের দারিদ্র্যের কারণে সে পড়াশোনা শেষ না করেই চাকরি নিতে চেয়েছিল। তবে পরে দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ ক্লাসের কথা জানতে পারে সে। সে জানতে পারে যে, ক্লাসে পেশাগত দক্ষতা শেখার পাশাপাশি ভর্তুকিও পাওয়া যায়। তখন সে ক্লাসে ভর্তির আবেদন করে।

কারিগরি স্কুলে বিভিন্ন কর্মদক্ষতা শিখছে মেয়েরা। এ কারিগরি প্রশিক্ষণ ক্লাস শুধু হাইনান প্রদেশে চালু তা নয়, বরং চীনের বিভিন্ন গরিব এলাকায় এমন স্কুল আছে। যেমন, চীনের শানতুং প্রদেশেও ১ বিলিয়ন ইউয়ান দিয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। কুয়াংতুং প্রদেশ ২০২১ সালে নতুন করে কারিগরি স্কুলে ১.২ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য সুযোগ তৈরি করবে।

দরিদ্র পরিবারের বাচ্চাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া

চীনের কুয়াংসি নর্মোল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লুও ইয়ু থিং সংবাদদাতাকে বলেন, গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিজ্ঞাপন পেয়ে তার বাবা-মা অনেক উদ্বিগ্ন হন। কারণ, পরিবার তার পড়াশোনার ফি দিতে অক্ষম। তবে কম সময়ের মধ্যে এ সমস্যা সমাধান হয়েছে। তার পরিবার দরিদ্র পরিবার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে। তাই ছাত্রী লুও পড়াশোনার জন্য ঋণ পেয়েছে এবং সময়মতো কুয়াংসি নর্মোল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে।

ক্যাম্পাসের অসাধারণ পরিবেশ, আন্তরিক শিক্ষক ও সহপাঠীদের সাথে মিলেমিশে ছাত্রী লুও ইয়ু থিং কম সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে অভ্যস্ত হয়েছে। পড়াশোনায় ভালো করায় সে বৃত্তিও পেয়েছে। এখন তার পরিবারের আর্থিক বোঝাও ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। আর্থিক উদ্বেগ না-থাকায় ভবিষ্যতের পড়াশোনা ও জীবন নিয়ে ব্যাপক আশাবাদী ছাত্রী লুও।

সমান শিক্ষা সামাজিক সমতার ভিত্তি। দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তানীতির কারণে ছাত্রী লুও'র মতো অনেক ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে এখন সক্ষম।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দরিদ্র পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা নিশ্চিত করতে সরকারের নেতৃত্বে স্কুল ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ সহায়তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৮ সালে চীনে বিভিন্ন দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোট ১০ কোটি পার্সনটাইমস অর্থ-সহায়তা পেয়েছে। সকল স্কুলে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য সহকারী আর্থিক ব্যবস্থা গঠন করা হয়েছে, যাতে কোনো দরিদ্র পরিবারের বাচ্চা আর্থিক কারণে পড়াশোনা বঞ্চিত না হয়।

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের এ উদ্যোগ মূল থেকে দারিদ্র্যবিমোচনের সমস্যা সমাধান করেছে। এর সাথে সাথে চীনা নাগরিকদের শিক্ষার মানও ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে।

সুপ্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা অনুষ্ঠানের সময় শেষ হয়ে এলো। সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারেন বা মিস করেন, আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn,আমাদের যোগাযোগ ইমেল ঠিকানাben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040