মহামারীর সময় চলচ্চিত্র শিল্প কোন পথে?
  2020-05-07 14:13:59  cri

নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর ছড়িয়ে পড়ায় যেসব শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার মধ্যে চলচ্চিত্র শিল্প অন্যতম। ২৩ জানুয়ারি চীনের ৭টি চলচ্চিত্র মুক্তি না দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। ২৭ মার্চ চীনের জাতীয় চলচ্চিত্র ব্যুরো জরুরি ভিত্তিতে সব সিনেমা হল অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানায়। তারপর আরেকটি মাস পার হয়ে যায়। রেস্তোরাঁ, ভ্রমণ ও পরিবহন ধীরে ধীরে চালু হতে থাকে। চীনের ২০টিরও বেশি প্রদেশের স্কুল ধাপে ধাপে খুলে দেওয়া হয়। তবে সিনেমা হলের দরজা তখনও বন্ধ থাকে।

১৬ এপ্রিল থিয়েনচিন শহরে ওএসজিএইচ সিনেমাসের অধীনস্থ একটি সিনেমা হল আনুষ্ঠানিকভাবে একেবারে বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। সিনেমা হলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা অসহায় কণ্ঠে বলেন, পরিচালনার খরচ ও মহামারী এই দুটি চাপে তারা সিনেমা হল বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন।

এ খবর বের হওয়ার পর অনেকেই বেশ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। ২০১৯ সালে এই সিনেমা হল চীনের বক্সঅফিসে ১ কোটি ৭১ লাখ ৮০ হাজার ইউয়ান রেনমিনপি আয় করে। সারা দেশের দশ হাজারেরও বেশি সিনেমা হলের মধ্যে এই সিনেমা হলটি ছিল ৫৬৬তম স্থানে। কিন্তু এত শক্তিশালী একটি সিনেমা হল মাত্র তিন মাস কোনও আয় করতে না পেরে অবশেষে বন্ধ হয়ে যায়। এতে চীনের চলচ্চিত্রে অচলাবস্থা তৈরি হয়।

এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে সারা দেশের সিনেমা হলে নতুন করে ৮৮৪৩টি স্ক্রিন বাড়ানো হয়েছে। সে সময় মানুষ কল্পনা করতে পারে নি যে, ২০১৯ সালের প্রবৃদ্ধি ২০২০ সালে বিশাল ঝামেলার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলতি বছর চীনের ২০৩৮টি সিনেমা হল নিবন্ধের তালিকা থেকে সরে গেছে।

২৭ মার্চ পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিলো ২২৬৩। অন্য এক কথায় বলা হয়, মাত্র ৬ মাসের মধ্যে মোট সাতশ'টি সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে।

সিনেমা হল ছাড়া, ফিল্ম ও টেলিভিশন সংস্থাও কঠিন অবস্থায় পড়েছে। বর্তমানে ৩০টি ফিল্ম, টেলিভিশন ও মিডিয়া কোম্পানি তাদের প্রথম প্রান্তিকের পারফরম্যান্স রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাদের মধ্যে ২২টি কোম্পানির আর্থিক ক্ষতি দেখা গেছে।

ওয়ানদা মিডিয়া কোম্পানি তার মধ্যে অন্যতম। ওয়ানদা হলো চীনের মুলভূভাগের বাজারের প্রথম থিয়েটার চেইন। সারা দেশে এর ৭ শতাংশ সিনেমা হল আছে এবং ১৩ শতাংশ বাজার দখল করে আছে এটি।

এমন শক্তিশালী একটি কোম্পানি হিসেবে প্রথম প্রান্তিকে ওয়ানদা মিডিয়া কোম্পানির আর্থিক ক্ষতি হয় ৫৫ বা ৬০ কোটি ইউয়ান। ২২ এপ্রিল ওয়ানদা সিনেমা হলের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কর্মচ্যুতির খবরও বের হয়।

২০২০ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত চীনের মোট ৬ হাজারেরও বেশি ফিল্ম ও টেলিভিশন কোম্পানি বন্ধ হয়েছে।

আসলে চলচ্চিত্র শিল্পের অচলাবস্থায় পড়ে যাওয়া শুধুমাত্র চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। বিদেশে মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পরিস্থিতিতে বিশ্বের ফিল্ম ও টেলিভিশন শিল্প যেন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে।

শিল্প খাতের জায়ান্ট হিসেবে পরিচিত ডিজনি। কিন্তু ডিজনির প্রতিটি স্টকের মূল্য ২০ ফেব্রুয়ারির পর ১৪০.৩৭ মার্কিন ডলার থেকে কমে ১৮ মার্চ ৭৯.০৭ মার্কিন ডলারে নেমে যায়!

বিদেশি গণমাধ্যমের সূত্র থেকে জানা যায়, ডিজনি কোম্পানি এক লাখ কর্মীর বেতন বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ তাদের এখন চাকরি করার উপায় নেই। চীনসহ সারা বিশ্বের দিকে তাকালে আমরা বুঝতে পারি, চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য সবচেয়ে অন্ধকার সময় নেমে এসেছে।

২০১৯ সালে চীনে বক্সঅফিসে চলচ্চিত্রের মোট আয় ছিল ৬২৭০ কোটি ইউয়ান। অন্য কোনো মৌলিক শিল্পের তুলনায় চলচ্চিত্র শিল্প তেমন শক্তিশালী নয়, তবে চীনের অর্থনীতিতে এর অবদান উপেক্ষা করা যায় না। চলচ্চিত্র শিল্পের কারণে বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রকাশনার প্রক্রিয়া আছে। শুটিংয়ের স্থান, পরিষেবা, স্পেশাল ইফেক্ট এবং সিনেমা হলে প্রদর্শনসহ একেকটি চলচ্চিত্র নির্মাণের পিছনে রয়েছে অনেক কর্মীর পরিশ্রম। আসলে মহামারী শুরুর পর থেকে অনেক কোম্পানি তার কর্মীদের সবচেয়ে কম বেতন দিয়ে আসছে। তবে কর্মচ্যুতি হলে কোনও বেতনও পাবে না কেউ। এসব কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবন কীভাবে চলবে? এ মুহূর্তে কেউ তা বলতে পারছে না।

বর্তমানে গোটা চলচ্চিত্র শিল্প চেইনে যারা ইতোমধ্যেই বেকার হয়েছেন বা বেকার হচ্ছেন, তাদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

শাংহাই ওয়ানদা মার্চ মাসের শেষ দিকে টিকটক বা তো-ইন ভিডিও প্লাটফর্মে লাইভ সম্প্রচার করা শুরু করে। তারা খাবার, পানীয় জল এবং চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত নানা পণ্যদ্রব্য বিক্রি করা শুরু করে। তবে এর মাধ্যমে খুব সীমিত আয় হয়।

এই কঠিন অবস্থায় কেউ কেউ মহামারী কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি চলচ্চিত্র শিল্পে কিছুটা শিথিলতা আনার প্রস্তাব দিয়েছে। যেমন, মহামারীর খুব ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে আছে এমন জায়গায় সবুজ কোড দেখিয়ে সিনেমা হলে চলচ্চিত্র দেখার অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে। চীনের বিভিন্ন স্থানের স্কুল আবারও খুলেছে। তাই তারা মনে করেন, আসলে সিনেমা হল ঠিক ক্লাসরুমের মতো। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ভিত্তিতে সিনেমা হল খোলা যেতে পারে বলে তারা মনে করেন।

লিলি/তৌহিদ/শুয়েই

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040