প্রসঙ্গ: করোনা ভাইরাস উ হানের পরীক্ষাগার থেকে বের হওয়াটা নিছক গুজব; বললেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ
  2020-05-04 16:27:39  cri

মে ৪: সম্প্রতি কিছু মার্কিন রাজনীতিক অনেক চাপ প্রয়োগ করলেও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এখনো ভাইরাসের উত্স সম্পর্কে কোনো প্রমাণ পায় নি। ষড়যন্ত্রকারীদের সমর্থকরা এতে খুব হতাশ হয়েছে। গত ৩০ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা পরিচালকের কার্যালয় তাঁর ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানায়, বিজ্ঞান মহলের ব্যাপক মতৈক্যে থেকে তারা বুঝতে পেরেছে যে, করোনাভাইরাস মানুষের তৈরি নয়, এর কোনো জীনের বৈশিষ্ট্য রূপান্তর করা হয় নি।'

ঠিক এদিন সন্ধ্যায় সাংবাদিক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে করোনাভাইরাসক কি উ হানের পরীক্ষাগারে তৈরি হওয়ার প্রমাণ আছে কি না, এমন প্রশ্ন জিজ্ঞাস করেন। জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমার কাছে আছে। তবে কী সেই প্রমাণ, তা তিনি জানাতে একদম অস্বীকার করেন!

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র সম্প্রতি বলেন, বর্তমানে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনাভাইরাসের উত্স সম্বন্ধে কিছু গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। তবে, বর্তমানে আমরা সব প্রমাণ থেকে স্পষ্টভাবে জানতে পেরেছি যে, করোনাভাইরাস প্রাণী থেকে (খুব সম্ভবত বাদুড় থেকে) ছড়িয়ে পড়েছে এবং এ ভাইরাস পরীক্ষাগারে তৈরি করা যায় না।

বেশ কিছু মেডিকেল গবেষণা সংস্থা হু'র সঙ্গে এ বিষয়ে একমত। যুক্তরাষ্ট্রের স্ক্রিপস রিসার্চের প্রবন্ধে বলা হয়, যদি পরীক্ষাগারে করোনাভাইরাস তৈরি করতে হয়, তাহলে বর্তমান ভাইরাসের মূল থেকে গবেষণা করতে হবে। তবে গবেষণা থেকে আবিষ্কার করা গেছে যে, করোনাভাইরাস মানবজাতির পরিচিত অন্য কোনও ভাইরাসের মতো নয়; এটি সম্পূর্ণ নতুন ধরনের ভাইরাস।

গত ২৬ মার্চ, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেল্থ-এর প্রধান ফ্রান্সিস কোলিন্স এক প্রবন্ধে প্রমাণ করেন যে, করোনাভাইরাসের উত্স প্রকৃতি।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় ১৭ এপ্রিল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে দিয়েছে, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস এবং চীনের উ হান পরীক্ষাগারের গবেষণার সঙ্গে জড়িত এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি।

সম্প্রতি ২০১৮ সালের চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, জাপানের বিখ্যাত ইমিউনোলজি বিশেষজ্ঞ তাসুকু হোনজোর নাম দিয়ে করোনাভাইরাস সম্পর্কে কিছু গুজব ও ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। এ সম্বন্ধে তাসুকু হোনজো নিজেই তাঁর কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বলেছেন, করোনাভাইরাস গবেষণাগারে তৈরি হয়েছে, এমন কথা আমি বলি নি।

জাপানি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, কিছু মানুষ তাসুকু হোনজোর নামে ইংরেজি, হিন্দি-সহ বিভিন্ন ভাষায় 'করোনাভাইরাস মানুষের তৈরি' এমন গুজব ছড়ায়। এমনকি কাসুকু হোনজোর উ হানে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে- এমন অসত্য কথাও প্রচার করেছে কেউ কেউ।

কাসুকু হোনজো বলেন, বিশ্বে করোনাভাইরাসের মহামারির সৃষ্ট দুঃখ ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। সারা বিশ্বের এমন সময় আমার ও কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের নামসহ কিছু গুজব ও ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছে, যা দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। বর্তমানে আমাদের সবার উচিত এই অভিন্ন শত্রু করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সহযোগিতা করা।

গতকাল (শনিবার) 'বিজনেস ইনসাইডার'-এর খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভিস শাখার সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ জোনা ম্যাজেট মনে করেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ধরণ দেখে বোঝা যায়, এ ভাইরাস ল্যাব থেকে বের হতে পারে না।

এর চারটি কারণ উল্লেখ করেন তিনি। ম্যাজেট বলেন, ল্যাবের গবেষণা করা ভাইরাসের সঙ্গে করোনাভাইরাসের মিল নেই। গবেষণাগারে কঠোর নিরাপত্তা পদ্ধতি মেনে চলা হয়। সাধারণ করোনাভাইরাসে মানুষ ও গবাদি পশু আক্রান্ত হয়। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাস সর্বশেষ নতুন ধরনের ভাইরাস। সাধারণ মানুষ ল্যাবের গবেষকদের চেয়ে আরো সহজেই জীবিত ভাইরাস থেকে আক্রান্ত হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম এর আগেও বলেছিলেন, ভাইরাস প্রতিরোধ করা এবং আরো বেশি প্রাণ রক্ষা করা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

(শুয়েই/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040