সিএমজি-কে মহামারী প্রতিরোধের গল্প বললেন উহানের চিন ইন থান হাসপাতালের প্রধান
  2020-04-29 19:34:38  cri

এপ্রিল ২৯: "মনে হতে পারে যে চাপ ইতোমধ্যে অনেক কমে গেছে। আসলে কিন্তু চাপ এখনও বিদ্যমান আছে।" গত ২৭ এপ্রিল এক একান্ত সাক্ষাৎকারে চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)-কে এ কথা বলেন উহানের চিন ইন থান হাসপাতালের প্রধান চাং তিং ইউ ।

এর আগের দিন তথা ২৬ এপ্রিল, উহানের হাসপাতালগুলোতে কোভিড-১৯ রোগী সংখ্যা শূন্যে পৌঁছায়। তিনি বলেন, এখন চিন ইন থান হাসপাতালের সব জায়গায় জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে। চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীরা এখন একটু বিশ্রাম নিতে পারেন। ১৪ দিনের কোয়ারিন্টিনশেষে তারা নিজ নিজ পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে পারবেন।

উহানের চিন ইন থান হাসপাতালের প্রধান চাং তিং ইউ সিএমজি-র সিজিটিএনের এই অনুষ্ঠানে মহামারী প্রতিরোধের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, উহান শহরের চিন ইন থান হাসপাতাল হচ্ছে একটি সংক্রামক রোগের বিশেষ হাসপাতাল। এতে মোট ৬৮৫ জন চিকিৎসক ও নার্স এবং ৬৯০টি শয্যা আছে। কিন্তু মহামারীর পিক সময়ে এতে মোট ৮৪০ জন রোগী ভর্তি ছিল। এতে চিকিৎসক ও নার্সদের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়।

তিনি বলেন, "সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল বসন্ত উৎসবের আগের ও পরের সময়। তখন রোগীর পর রোগী আসছিল। প্রত্যেক ওয়ার্ডে ৩৫ জন রোগী থাকতে পারেন। কিন্তু মাত্র ২০ জন চিতিৎসক ও নার্স ছিল প্রত্যেক ওয়ার্ডে। তখন প্রতিরোধক সামগ্রীরও অভাব ছিল। এ জন্য একবার আইসোলেশান ওয়ার্ডের প্রবেশ করার পর চিকিৎসক ও নার্সদের টানা ৬ থেকে ৮ ঘন্টা কাজ করতে হয়েছে।"

তিনি বলেন, "চীনা নববর্ষের আগের দিন, তথা ছু সির রাত সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে একটি খবর আসে। খবরে বলা হয়, গণমুক্তি ফৌজের ১৫০ জন সদস্যের একটি চিকিৎসকদল পরের দিন সকালে হাসপাতালে পৌঁছাবে। আমরা এ খবর শুনে অত্যন্ত খুশি হই। আমরা বলি, গণমুক্তিফৌজ আমাদের বাঁচাতে আসবে।"

সেদিন রাত সাড়ে দশটার দিকে চাং তিন ইউ আবার খবর পান যে, শাংহাই থেকেও ১৩০ সদস্যের চিকিৎসকদল সহায়তার জন্য তাদের হাসপাতালে আসবে। তিনি জানান, এ দুটি চিকিৎসকদল আসার পর, পরিস্থিতি ভাল হয়ে যায়। এর পর কেন্দ্রীয় সরকার আরও ১৫০ জন নার্স হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। পাশাপাশি, গুরুতরভাবে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞও আসেন। ফ্রেব্রুয়ারির পর, চিকিৎসার পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আসে।

কোনো কোনো দেশ অপবাদ দিয়ে বলে যে, চীন মহামারীসংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত গোপন করেছে। এর জবাবে তিনি বলেন, কেউ সংশ্লিষ্ট তথ্য গোপন করেনি। চীনের চিকিৎসকরা ও গবেষকরা সবসময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চিকিৎসক ও গবেষকদের সঙ্গে তথ্য-উপাত্ত শেয়ার করেছেন। কোনোকিছু গোপন করার প্রশ্নই ওঠে না।

তিনি জানান, চিন ইন থান হাসপাতাল ইসরাইল ও কানাডার সঙ্গে চিকিৎসার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছে। তিনি মনে করেন, মহামারী প্রতিরোধে দুটা ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: একটা হচ্ছে লকডাউন; এবং আরেকটি হচ্ছে অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ।

তিনি বলেন, উহান শহরকে লকডাউন করার পর উহানবাসী অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কিন্তু দেশ এবং বিশ্বব্যাপী মহামারী বিস্তার ঠেকাতে তা কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। পিকিং ইউনিয়ন মেডিকেল কলেজের এক গবেষণা অনুসারে, উহান লকডাউন চীনে ৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ মানুষকে আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচিয়েছে এবং বিশ্বে বাঁচিয়েছে মোট ১.২ কোটি থেকে ৪.২ কোটি লোককে।

২০‌১৮ সালে মিস্টার চাং কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তার সহকর্মীদের তা জানাননি। সাক্ষাৎকারে তিনি তার "ডক্টরস উইদাউট বডারস্‌' নামক সংস্থার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাও শেয়ার করেন। (আকাশ/আলিম/রুবি)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040