অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর বই 'আমার দেখা নয়াচীন' থেকে পড়ে শোনাচ্ছি।
চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের যৌবনের স্মরণীয় গল্প
৪ মে চীনের যুব দিবস।এ উপলক্ষ্যে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছিলেন, মানুষের জীবনে যুবকবেলা স্বল্পকালের। যুবকালে পরিশ্রম ও সংগ্রাম করলে বৃদ্ধ বয়সে সুন্দর স্মৃতি থেকে যায়। অনেক জায়গায় নিজের যুবকালের গল্প শেয়ার করেন প্রেসিডেন্ট সি। গত সপ্তাহের অনুষ্ঠানে তাঁর যৌবনের কয়েকটি গল্প শেয়ার করেছি; আজকের অনুষ্ঠানে আরো কয়েকটি স্মরণীয় গল্প তুলে ধরবো।
যুবকদেরকে দক্ষতা অর্জনে উত্সাহ দেন সি
২০১৩ সালের মে মাসে যখন যুব দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সময় সি বলেছিলেন, 'গ্রামে কাজ করার সময় আমি নিজের জন্য একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করি; আর তা হল: জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করতে হবে।' তখন পাহাড়ে ছাগল চরানোরকালেও সঙ্গে বই রাখতেন সি চিন পিং। পশুদের ঘাস খাইয়ে বই পড়তে শুরু করতেন তিনি। কৃষিক্ষেতের কাজ শেষ করে বিশ্রামের সময় তিনি অভিধান থেকে বিভিন্ন শব্দের অর্থ ও উচ্চারণ মুখস্ত করতেন। তাই টানা ৭ বছরের কৃষকজীবনে তাঁর অনেক সময় কেটেছে পড়াশোনা করে। এখন তো পড়াশোনা করা অনেক সহজ। তিনি আধুনিক সময়ের সুবিধা কাজে লাগিয়ে সময় নিয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে এবং নিজেদের দক্ষতা উন্নত করতে আহ্বান জানান সি।
২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ম্যাকাও বিশ্ববিদ্যালয়ের চুহাই শহরের হেংছিন শাখা ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন সি। তখন তিনি বলেন, যৌবনে চীনের ঐতিহ্যিক শাস্ত্রগ্রন্থ পড়তে অতি পছন্দ করতেন তিনি। ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন প্রাচীন বই নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা করে আসছেন তিনি। এভাবে তিনি চীনা সভ্যতার সুদীর্ঘকালের ইতিহাস ও সমৃদ্ধ অর্থ অনুভব করতে শেখেন সি। প্রাচীন সভ্যতা যেন ধনের মতো, যা মানুষের সারাজীবনের সঞ্চয়। ঐতিহ্যিক সভ্যতার শ্রেষ্ঠ বিষয় কাজে লাগিয়ে নতুন যুগে নতুন তত্ত্ব সৃষ্টি করার ওপর তিনি জোর দেন।
শাআনসি প্রদেশের কর্মজীবনে জনগণের সেবা করার আগ্রহ তৈরি
ইয়ানআন শহরের টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে সি বলেছিলেন, 'শাআনসি প্রদেশের কর্মজীবন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। টানা ৭ বছরের সেই সময়টায় আমার অনেক শেখা হয়েছে।'
আবার 'আমি মাটির ছেলে' শীর্ষক প্রবন্ধে সি লিখেছেন: '১৫ বছর বয়সে আমি শাআনসি প্রদেশে পৌঁছাই। তখন জীবন নিয়ে অনেক বিভ্রান্ত ছিলাম। তবে ২২ বছর বয়সে যখন গ্রাম থেকে চলে আসি, তখন আত্মবিশ্বাস ছিল তুঙ্গে।' বস্তুত, জনগণের সেবক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে শাআনসি প্রদেশের জীবন তাকে অনেক বেশি উত্সাহিত করেছে।
লিয়াংচিয়াহ্য থেকে ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়
ইয়ানআন টেলিভিশনের সাক্ষাত্কারে সি আরেকটি স্মরণীয় ব্যাপার শেয়ার করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান। তখন লিয়াংচিয়াহ্য গ্রামবাসীর কাছ থেকে বিদায় নেন তিনি। শেষ মুহূর্তে গ্রামে টানা ৭ বছরের সুখ-দুঃখের স্মৃতি তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তিনি কাঁদতে থাকেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'চলে যাওয়ার সময় লিয়াংচিয়াহ্য গ্রামবাসীরা আমাকে বিদায় দেয়। আগের দিন রাতে সবাই আমার সাথে খাওয়া-দাওয়া করেন। স্থানীয়রা সাধারণত বড় দাওয়াত খাওয়াতে ছাগল জবাই করে রান্না করে। প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা আমার সাথে বিদায়ী কথা বলেন। তখন তাদের অনেকে আমাকে একটি করে নোটবুক উপহার হিসেবে দেন। সেসব নোটবুকে ছিল শুভেচ্ছাবাণী। তখন অনেক নোটবুক পেয়েছি। পরের দিন চলে যাওয়ার সময় সবাই আমার দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন। তাঁরা আমার জেগে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কেউ আমাকে বিরক্ত করেননি। ইয়ানআনে আসার পর ৭ বছরের মধ্যে আমাকে দ্বিতীয়বার কাঁদতে হয়েছিল তখন। প্রথম আমি কেঁদেছিলাম আমার বড় বোনের মৃত্যুর খবর পেয়ে। তবে কেউ তা দেখেনি। এবার চলে যাওয়ার সময় সবার সামনে কেঁদেছি, যা আমার জন্য লজ্জার ব্যাপার ছিল।'
হ্যপেই প্রদেশের চেংতিং জেলার সিপিসি'র সম্পাদক সি
২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় একাডেমির জেলার সম্পাদক সেমিনারের সদস্যদের সাথে বসেছিলেন সি। হ্যপেই প্রদেশের চেংতিং জেলার কর্মজীবন স্মরণ করে সি বলেন, 'যখন চেংতিংতে যাই, তখন স্থানীয় গ্রামবাসীদের হতদরিদ্র জীবন ও দুর্বল আর্থিক অবস্থা দেখে অনেক উদ্বিগ্ন হই। তখন স্থানীয় অঞ্চলের দ্রুত উন্নয়ন বাস্তবায়নে চেষ্টা করি।'
তিনি জোর দিয়ে বলেন, কর্তব্য সম্পন্ন করতে চাইলে সঠিক চিন্তাভাবনা তৈরি করতে হবে। জনগণের জন্য কল্যাণকর কাজ যত বেশি করা যাবে, তত ভালো; জনগণের জন্য ক্ষতিকর কাজ যত কম করা যাবে, তত ভালো। জনগণের স্বার্থ বিবেচনা রেখে কাজ করা উচিত। শুধু নিজেকে বড় করে দেখানোর জন্য কাজ করা উচিত না।
চেংতিংয়ের কর্মজীবন স্মরণ করে সি বলেন, 'আমি নিয়মিত সাইকেল চালিয়ে চেংতিংয়ের বিভিন্ন গ্রামে যেতাম। হুথুও নদীর উত্তর তীর থেকে অপর দিকে গেলে সাইকেল কাঁধে বহন করে নদী অতিক্রম করতে হয়। সেটি কষ্টকর কাজ ছিল। কিন্তু আমি এই কষ্টের ফলস্বরূপ বিভিন্ন গ্রামে দিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারতাম এবং স্থানীয় গ্রামের কর্মকর্তা ও গ্রামবাসীদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম হই।'
৩০ বছর বয়সে সিপিসি'র জেলার সম্পাদক সি
২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় একাডেমির জেলার সম্পাদকদের সেমিনারে ২০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধির সাথে বসেছিলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রাচীনকালের প্রবাদে বলা হয়, 'জেলার সুশাসন নিশ্চিত হলে দেশও নিরাপদ হবে'। চীনের ইতিহাসে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি জেলার কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছিলেন, যেমন: ছিং রাজবংশের বিখ্যাত কর্মকর্তা ও কবি চেং বান ছিয়াও, যিনি প্রাচীনকালে শানতুং প্রদেশের দু'টি জেলার কর্মকর্তা ছিলেন।
জেলার সিপিসি'র সম্পাদকের কর্মজীবন স্মরণ করে সি বলেন, তখন প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে ভীষণ ব্যস্ত থাকতেন এবং দিন-রাত পরিশ্রম করতেন। এতে তিনি একসময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন থেকে তিনি কাজের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন এবং নিয়মিত শরীরচর্চা শুরু করেন। বিভিন্ন জেলার সিপিসি'র সম্পাদকদের সাথে তিনি কাজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, বাদকের মাথায় অনেক সুর থাকে। কিন্তু একসময় শুধু একটা সুর নিয়েই কাজ করা যায়। বস্তুত, তিনি যখন এই বিষয়টি বুঝতে পারেন, তখন থেকেই প্রতিদিন রাত ১২টা পর্যন্ত কাজ করতে শুরু করেন এবং এর পর ঘুমিয়ে পড়তেন। যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়ার পর দ্বিতীয় দিনে আবারও কাজে ঝাপিয়ে পড়তেন। এতে তার কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং কাজের কার্যকারিতাও বেড়ে যায়।
সুপ্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা অনুষ্ঠানের সময় শেষ হয়ে এলো। সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারেন বা মিস করেন, আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn,আমাদের যোগাযোগ ইমেল ঠিকানাben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn
তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)