এপ্রিল ২৭: সম্প্রতি চীনা গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের দি খুন ফাউন্ডেশানের চেয়ারম্যান রবার্ট লরেন্স খুন বলেন, "শুরু থেকেই চীন মহামারীকে পরাজিত করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস ছিল। এ বিশ্বাসের কারণ: চীনের প্রতিশ্রুতি, চীনের সক্ষমতা, এবং নিজকে পরিবর্তন ও উন্নত করার ইচ্ছা। কোনো সন্দেহ নেই, সিপিসির নেতৃত্ব, দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং শক্তিশালী সরকার—এ তিনটি কারণে চীন আরও শক্তিশালী, কার্যকর ও দ্রুত মহামারী মোকাবিলায় কাজ করতে পেরেছে।'
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরহিস এবারের কোভিড-১৯ মহামারীকে 'দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। চীন সবার আগে মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে এবং হুপেই প্রদেশের উহান শহরকে রক্ষার যুদ্ধে চূড়ান্ত জয় অর্জন করেছে। মিস্টার রবার্ট লরেন্স খুন চীনের সক্ষমতা বিশ্লেষণ করেছেন। চীনা ব্যবস্থাকে তিনি বস্তুনিষ্ঠভাবে আন্তর্জাতিক সমাজের সামনে তুলে ধরেছেন।
অনেক বিশেষজ্ঞ ইতোমধ্যেই বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চীনের বিজয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে সিপিসি'র শক্তিশালী নেতৃত্ব। বড় সমস্যার মুখে চীনের ক্ষমতাসীন দল জনগণকে রক্ষায় ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে যে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীভূত নেতৃত্ব চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাধান্য।
৭ জানুয়ারি মহামারীর প্রকোপ দেখা দেওয়ার শুরুতেই চীনের শীর্ষ নেতা সি চিন পিং দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সভায় মহামারী প্রতিরোধে নির্দিষ্ট দিক্-নির্দেশনা দেন। মহামারী মোকাবিলার সময়ে সি চিন পিং বহুবার দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সভায় সভাপতিত্ব করেন এবং সরাসরি মহামারী প্রতিরোধক-যুদ্ধে জাতিকে নেতৃত্ব দেন। ২৮ জানুয়ারি সফররত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র মহাপরিচালক তেদ্রোস আদ্হানামের সঙ্গে সাক্ষাতে সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, "জনগণের প্রাণের নিরাপত্তা ও সুস্থতা বরাবরই আমাদের কাছে এক নম্বর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়।"
চীনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ প্রতিরোধের লক্ষ্য ও মিশন ঠিক করার পর, রাষ্ট্রীয় পরিষদ যৌথ প্রতিরোধক ম্যাকানিজক গড়ে তোলে। পরে সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির স্টিয়ারিং কমিটি এপিসেন্টার পরিদর্শন করে। চীনের সমাজ দ্রুত "মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাবস্থায়" প্রবেশ করে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে চীনা জাতি আইন অনুযায়ী বিজ্ঞানসম্মতভাবে ও সুশৃঙ্খলভাবে প্রতিরোধকাজ চালিয়েছে। সব প্রচেষ্টার লক্ষ্য ছিল ভাইরাসের সাথে পাল্লা দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া।
মহামারী প্রতিরোধের সময়ে, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আলাদাভাবে বেইজিং, উহান, চ্যচিয়াং, শাআনসি পরিদর্শন করেছেন; ফ্রন্টলাইনের কার্যক্রমের নির্দেশনা দিয়েছেন, তত্ত্বাবধান করেছেন। এর পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকে সহানুভূতি জানিয়েছেন, উৎসাহিত করেছেন তিনি। এতেই বোঝা গিয়েছিল যে, সিপিসি'র 'জনগণ প্রথমে'—এই নীতিভিত্তিক প্রশাসনের ধারণা কার্যকর প্রমাণিত হবে এবং মহামারীর বিরুদ্ধে চীন চূড়ান্তভাবে বিজয়ী হবে। ঝুঁকির মুখে চীনের ক্ষমতাসীন পার্টি ও চীনা সরকার বাস্তব পদক্ষেপ নিয়ে দেখিয়েছে যে, তারা হচ্ছে জনকল্যাণের সবচেয়ে বড় রক্ষাকারী।
চীনের ক্ষমতাসীন পার্টির নেতৃত্বে চীনের জনগণ দৃঢ়ভাবে, দ্রুতভাবে ও কার্যকরভাবে মহামারীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ-লড়াই চালিয়ে এসেছে। এই সাফল্য বিশ্বে গভীর সাড়া জাগিয়েছে। ল্যাটিন আমেরিকার বিখ্যাত স্কলার হেইঞ্জ ডিটেরিখ একটি প্রবন্ধে লিখেছেন, চীনা সরকারের কার্যকর ও শক্তিশালী কার্যক্রম মহামারী প্রতিরোধে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।
মহামারীর মুখে, শক্তিশালী সমাজের মবিলাইজেশান ও সংগঠনের সক্ষমতার কারণে, অল্প সময়ের মধ্যে চীন চিকিৎসক ও নার্সের অভাব, হাসপাতালের শয্যার অভাব, চিকিৎসা-সামগ্রীর অভাবসহ নানান সমস্যা সমাধান করতে পেরেছে। আর এতে কার্যকরভাবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রাথমিক বিজয় এসেছে।
চীনের প্রতিরোধক-ব্যবস্থা মার্কিন রাজনৈতিক লেখক সারা ফ্লন্ডার্সকে বিমোহিত করেছে। তিনি এক প্রবন্ধে বলেছেন, চীনের শক্তিশালী ব্যবস্থা দেশটির মৌলিক সমাজতন্ত্রের প্রকৃতি তুলে ধরেছে। সংকটের সময়, কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে গোটা জাতি একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যা পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় সম্ভব নয়।
অবশ্যই, বিশ্বের কোনোকিছুই নিখুঁত নয়। এবারের মহামারীর মুখে, অনুন্নত-উন্নত নির্বিশেষে সকল দেশকে স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়েছে বা হচ্ছে। চীনের শীর্ষ নেতা স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করেছেন, "এবারের মহামারী প্রতিরোধ থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। সিপিসি কেন সফল হয়েছে? কারণ, সিপিসি অব্যাহতভাবে শিখছে ও নিজেকে উন্নতি করে আসছে; নিজেকে নিখুঁত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।' বস্তুত, সমস্যা সরাসরি মোকাবিলা করার সাহসও চীনা ব্যবস্থার প্রাধান্য।
(আকাশ/আলিম/রুবি)