২৫ জানুয়ারি, চীনের চান্দ্রপঞ্জিকা অনুযায়ী ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উত্সব। চীনের উ হান শহরের শিশু হাসপাতালের ডাক্তার লি তুং যখন দুপুরের খাবার রান্না করছিলেন, তখন হঠাত্ শহরের স্বাস্থ্য কমিশনের টেলিফোন পান। তিনি জানতে পারেন, তাঁকে উ হানের করোনাভাইরাসের রোগীদের চিকিত্সার জন্য বিশেষ হাসপাতাল হুও শেন শান হাসপাতালের প্রস্তুতি ও নির্মাণে পাঠানো হয়েছে! ফোন পাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে উ হান সরকারি ভবনে পৌঁছাতে হবে।
শিশু হাসপাতালের ডাক্তার হিসেবে লি তুং কল্পনাও করতে পারেন না, তাঁর 'যুদ্ধের মাঠ' হুও শেন শান বিশেষায়িত হাসপাতাল! তিনি পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময়ও পান নি! কোনওরকমে লাগেজ নিয়ে চলে যান।
তাঁর স্ত্রীও একজন চিকিত্সক। তিনি স্পষ্টভাবে জানেন করোনাভাইরাস খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন চিকিত্সক এতে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি কেঁদে কেঁদে স্বামীর চলে যাওয়ার ছবি তুলতে থাকেন।
৫ দিন পর ওই শিশু হাসপাতালকে উ হান শহরের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের চিকিত্সার একমাত্র হাসপাতাল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। এপ্রিল মাসের শুরু পর্যন্ত, হাসপাতালে মোট ২২৩৮টি শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। করোনাভাইরাসের সন্দেহভাজন শিশু এবং শনাক্ত শিশুসহ মোট ৭৮০টি শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। বর্তমানে তারা সবাই সেরে উঠে হাসপাতাল ত্যাগ করেছে। এখন হাসপাতালে কোনও আক্রান্ত রোগী নেই।
ভাইরাসের কালো ছায়ায় শিশু হাসপাতালের চিকিত্সকরা মৃত্যুর সঙ্গে এবং ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করেন। এক একটি নতুন জীবন ভাইরাস নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এক একটি শিশু তাঁদের যত্নে ভাইরাস থেকে সেরে ওঠে। উ হান শিশু হাসপাতালে ঘটে যাওয়া এক একটি মনোমুগ্ধকর গল্প এই শহরের জীবন ও আশার প্রতিফলন।
১. যখন একজন গর্ভবতী নারী কেঁদে কেঁদে তার অন্তিম বাণী লিখতে চান
চীনের হুপেই প্রদেশের উ হান শহরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটার পর স্থানীয় অনেক বহুমুখী হাসপাতালকে করোনাভাইরাসের হাসপাতাল হিসেবে তৈরি করা হয়। অনেক গর্ভবতী নারী তারা ভাইরাসে আক্রান্ত হন নি, তারা অনেকেই শিশু হাসপাতালে গেছেন। অবস্টেট্রিক্স (obstetrics) বিভাগের প্রধান চৌ চিয়ে ছুং গণনা করে বলেন, জানুয়ারি মাসে গর্ভবতী ও প্রসূতির সংখ্যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ বেড়েছে।
২২ জানুয়ারি, উ হান শহর অবরুদ্ধ হওয়ার আগে ৩০ জনেরও বেশি গর্ভবতী ও প্রসূতি নারী গভীর রাতে শিশু হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালের কিছু কিছু চিকিত্সক কমিউনিটি বা অস্থায়ী কর্মীদের হাসপাতালে সাহায্য করতে পাঠানোয় অবস্টেট্রিক্স বিভাগে চিকিত্সকের অভাব দেখা দেয়।
তখনকার অবস্থা চৌ চিয়ে ছুংয়ের এখনও মনে আছে। তাদের কাঁধে চাপ অনেক বেশি। গর্ভবতী নারী ও প্রসূতি নারীর সংখ্যা বেশি, তাদের মধ্যে হয়তো কেউ করোনাভাইরাসের সুপ্ত অবস্থা বা Incubation period-এ আছেন তবে আত্মীয়স্বজন তা জানে না। এমন সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় অবস্টেট্রিক্স বিভাগের চাপ আরো বেড়ে যায়।
প্রসব ঘরের নার্সদের প্রধান জুং জুই ফাংয়ের মনে আছে, একজন প্রসূতির সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় কাশি ও জ্বরের লক্ষণ দেখা যায়।
জুং জুই ফাং বলেন, সৌভাগ্যের বিষয় হলো, আমরা সবসময় বিভিন্ন প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিচ্ছি। অস্ত্রোপচার শেষে টেস্ট করার পর তাঁর স্বামীকে ভাইরাসে শনাক্ত রোগী হিসেবে খুঁজে পাওয়া যায়। সৌভাগ্যের বিষয় হলো, ওই নারী তখনও ভাইরাসে আক্রান্ত হয় নি।
অবস্টেট্রিক্স বিভাগের তৃতীয় এলাকার পরিচালক চৌ ইয়ান বলেন, 'তখন ওয়ার্ডে কোনো খালি শয্যা ছিল না। কেউ পরীক্ষা কক্ষে শুয়ে থাকে ও শয্যার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে'। এমন অবস্থা তিনি প্রতিদিনই দেখতে পান। সবচেয়ে ব্যস্ততার সময় তিনি অস্ত্রোপচার কক্ষ, আঁতুড় ঘর ও আইসোলেশন কক্ষের মধ্যে দৌড়ান। প্রতিদিন ছয়বার প্রতিরোধক পোশাক পরিবর্তন করতে হয়।
প্রসূতি বিভাগে অপেক্ষার এলাকায় একজন প্রসূতি একাই বসে কাঁদছিলেন। তাঁর একটু জ্বর হয়েছিল, অনেক হাসপাতাল তাকে ভর্তি করে নি। প্রসূতি বিভাগের দ্বিতীয় এলাকার নার্সদের প্রধান হুয়াং ইউ ফাং তাঁর জন্য বিচ্ছিন্ন কক্ষের ব্যবস্থা করেছিলেন। তারপর তার ভাইরাসের টেস্ট করা হয়। ভালো খবর হলো, ওই নারী ভাইরাসে আক্রান্ত হয় নি। তারপর তাঁকে সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল।
আরেকজন প্রসূতির স্বামী করোনাভাইরাসের রোগী ছিলেন। তাঁর স্বামীর অবস্থা খুব গুরুতর। তার নিজের ও শিশুর আক্রান্ত হওয়ার আশংকায় তিনি খুব হতাশ হয়ে পড়েন এবং শেষ সময়ের কিছু কথা লিখতে চান। হুয়াং ইয়ু ফেং বলেন, 'হতাশ হয়ে তাঁর কোনো ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ নেওয়ার আশঙ্কায় আমরা তাঁর ওয়ার্ডের জানালাও বন্ধ করে রাখি। শুধুই তাঁর নিজের নিরাপত্তার জন্য। পরে অবশ্য তাঁর শিশুর জন্ম হয়। নতুন জীবনের আশায় তিনি ফের সাহস ও উদ্যম ফিরে পান।
ভাইরাস সংক্রমণকালে কিছু কিছু প্রসূতির হাল্কা জ্বর ও কাশির লক্ষণ দেখা যায়। তবে জরুরি অবস্থায় তাদের ভাইরাসের টেস্ট করার সময় পাওয়া যেত না। তাই প্রসূতি বিভাগ একটি অস্থায়ী বিচ্ছিন্ন এলাকা তৈরি করে। এভাবে প্রসূতি হাসপাতালে এসে স্বাভাবিক প্রসূতিকে স্বাভাবিক ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। কোনো সন্দেহভাজন বা শনাক্ত প্রসূতি পেলে তাদেরকে করোনাভাইরাসের নির্ধারিত হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। জরুরি প্রসূতি আসলে, তাদের টেস্ট করার সময় না থাকলে, তাহলে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন এলাকায় প্রসবের ব্যবস্থা করা হয়। তারপর প্রসবের পর তাদের টেস্ট করা, শনাক্ত হলে আবার নির্ধারিত হাসপাতালে পাঠানো হয়।
চৌ ইয়ান এবং তাঁর সহকর্মী একটি বিস্তারিত চিকিত্সার প্রক্রিয়া গড়ে তোলেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রসূতি বিশেষ হাসপাতালে প্রসবের পর, যদি তাঁর সন্তান ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তাহলে শিশুকে আবার শিশু হাসপাতালের নতুন জন্ম শিশু বিভাগে ভর্তি করে চিকিত্সা করা হয়।
২. একই প্রসব বিভাগ, ভিন্ন অস্ত্রোপচার
উ হান শহর অবরুদ্ধ হওয়ার সময় কিছু কিছু জরুরি ও গুরুতর প্রসূতির টেস্ট করার সময় পাওয়া যায় নি। তাদেরকে প্রসব বিভাগে অস্ত্রোপচার করা হয়। আগে প্রতিদিন দশ বারোটি অস্ত্রোপচার করা হত। তবে, ভাইরাসের সময় চৌ ইয়ান প্রতিদিন শুধু দুটি অস্ত্রোপচার করেন। কিন্তু এ সময় চাপ আগের চেয়ে আরো বেশি হয়েছে।
ভাইরাসের সময় জরুরি অবস্থা চলে। অস্ত্রোপচারও আরো কঠিন হয়ে ওঠে। প্রতিরোধক পোশাক ও চশমা পরে অস্ত্রোপচার করা অনেক কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তিনি খুব অভিজ্ঞ একজন ডাক্তার হলেও এভাবে কাজ করা বড় একটি চ্যালেঞ্জ।
অবরুদ্ধের কারণে কিছু কিছু প্রসূতি জানুয়ারি মাসে একবার শারীরিক পরীক্ষা করেছিলেন। তারা দ্বিতীয়বার শারীরিক পরীক্ষা করার সুযোগও পায়নি, আর বাইরে গেলে আক্রান্ত হওয়ার আশংকাও ছিল। তাই, তাদের জরুরি অবস্থা হলেই তারা হাসপাতালে আসেন।
একদিন দুপুরে, চৌ জুই ফাং একজন জরুরি প্রসূতিকে গ্রহণ করেন। তিনি পরীক্ষা করে দেখেন যে, শিশুর কোমরের নিচ পর্যন্ত ইতোমধ্যে বের হয়ে গেছে। এমন অবস্থা আসলে খুব বিপদজনক, শিশুর শ্বাসরোধ হওয়ার আশংকা থাকে। পরে জরুরি চিকিত্সার পর শিশুটি সুষ্ঠুভাবে জন্মগ্রহণ করে।
৭ ফেব্রুয়ারি, একটি সাত মাসের শিশু জন্মগ্রহণ করে। তার ওজন মাত্র ৫শ গ্রাম। ওই নারী ৮ বছর চেষ্টা করে মা হতে যাচ্ছেন। অকালপ্রসব এই শিশু হল তাঁর দ্বিতীয় টেস্টটিউব শিশু। প্রসব বিভাগের চিকিত্সক তার শিশুটিকে মায়ের পেটে আরো ছয় দিন রাখার চেষ্টা করেন। কারণ, অকালপ্রসব শিশু একদিন বেশি মায়ের পেটে থাকতে পারলে তার বেঁচে যাওয়ার আশা বেড়ে যায়।
প্রসবের সময় নতুন ভূমিষ্ঠ শিশু বিভাগের পরিচালক আঁতুড় ঘরে অপেক্ষা করছিলেন। শিশু জন্মের পর পরই তাকে নতুন জন্ম নেওয়া শিশুদের বিভাগে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ সময় যত্নের পর শিশুটি ধীরে ধীরে শ্বাস নেয় এবং খাওয়ার চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠে। তার ওজনও জন্মের সময়ের ৫শ গ্রাম থেকে বেড়ে ২ কেজি হয়।
৩. পুরো শহরের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শিশু এখানে এসেছে
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন শিশুদের চিকিত্সায় আগের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। শিশুরা কথা বলতেও পারে না। তাই সবসময় তাদের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হয়।
নতুন জন্ম নেওয়া শিশু বিভাগের প্রধান চেং লিং খুং-এর গ্রহণ করা শিশু রোগীর মধ্যে বেশিরভাগই জন্ম নেওয়ার প্রথম দিনেই হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদের মায়ের প্রসবের সময় কোভিড-১৯ রোগ শনাক্ত হয় এবং বিশেষ হাসপাতালে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকেন।
চেং লিং খুং বলেন, এসব মায়ের মানসিক অবস্থা আসলে খুব খারাপ। আর তাদের শিশুর জন্ম হওয়ার পরপরই শিশু হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। তারা নিজের শিশুকে দেখতে পর্যন্ত পারতেন না, কেউ কেউ সারা দিন শুধু কাঁদতেন।
নতুন জন্ম নেওয়া শিশু বিভাগের বিচ্ছিন্ন ওয়ার্ডে, ৯০ শতাংশ নতুন জন্ম নেওয়া শিশু করোনাভাইরাসের বিশেষ হাসপাতালে জন্মগ্রহণের পর শিশু হাসপাতালে আসে। বাকি শিশুরা এই হাসপাতালেই জন্মগ্রহণ করেছে।
শিশু হাসপাতালটিকে শহরের আক্রান্ত শিশুদের চিকিত্সা করার নির্ধারিত হাসপাতাল হিসেবে নির্ধারণের পর, পুরো শহরের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের গ্রহণ করা হয়।
তখন দেশে এক্ষেত্রে কোনো চিকিত্সার অভিজ্ঞতা ছিল না। ইনটেনসিভ মেডিসিন বিভাগের পরিচালক চাং পু রুং জানান, তিনি ও তাঁর চিকিত্সাদল একটি চিকিত্সার প্রস্তাব প্রণয়ন করেন। তখন দেশের প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত গুরুতর শিশু তাঁর হাসপাতালে ভর্তি হয়। ১৮ দিন যত্ন ও চিকিত্সার পর শিশুটি সেরে ওঠে।
উ হান শিশু হাসপাতালের শ্বাস-প্রশ্বাস বিভাগের পরিচালক লু সিয়াও সিয়া চাইনিজ মেডিসিন অ্যাসোসিয়েশনের শ্বাসবিদ্যা গ্রুপের সদস্য হিসেবে শিশুর করোনাভাইরাস শনাক্ত করা, চিকিত্সা ও প্রতিরোধব্যবস্থা করার কাজে দুইবার অংশগ্রহণ করেছেন। চীনের রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য কমিশনের সপ্তম সংস্করণের চিকিত্সা প্রস্তাবে, লু সিয়াও সিয়া'র গ্রুপ চারটি প্রস্তাব দেয় এবং সবগুলোই গৃহীত হয়।
৪. বিছানার ধারে থাকা 'শিশুকে লালনের নির্দেশিকা'
'শিশুকে প্রতি তিন ঘণ্টা পর একবার দুধ খাওয়াতে হয়। ঘুমানোর চেষ্টা করালে সে চিত্কার করে; তাকে ঘুম পাড়ানোর জন্য কোলে নিয়ে হাঁটতে হয়। ঘুমিয়ে পড়লে আস্তে আস্তে শিশুকে বিছানায় রাখা যায়।'
এটি একটি 'শিশু লালন-পালনের নির্দেশিকা বই'। ছয় মাস বয়সী শিশু ল্য ল্য বিছানা ধারে থাকে। ৩০ জানুয়ারি, ল্য ল্য শিশু হাসপাতালের শয্যায় ভর্তি হয়। তার পরিবারের সদস্যরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় তার সঙ্গে কেউ থাকতে পারে না।
ল্য ল্য জেগে থাকার সময় মানুষের কোলে থাকতে পছন্দ করে। নার্স ছেন জুন বলেন, দীর্ঘ সময় ল্য ল্যকে কোলে রাখতে রাখতে হাত ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। বিভাগের অন্যান্য নার্সও ল্য ল্যকে লালন-পালনে সাহায্য করেন। তাদের বেশিরভাগই যেন ল্য ল্য'র 'অস্থায়ী মা' হয়ে ওঠে।
এক সপ্তাহ পর ল্য ল্যকে শ্বাসপ্রশ্বাস বিভাগে ভর্তি করা হয়। তখন ল্য ল্য কিছুই বুঝত না। শুধু তার ছোট বিছানায় বসে সবার দিকে তাকিয়ে হাসতো। নার্স ছেন জুন বলেন, ল্য ল্য অন্য বিভাগে চলে যায়, আমরা সবাই ভীষণ দুঃখিত হয়ে পড়ি।
শ্বাস বিভাগের নার্স হু ছিয়ানের শিশু ল্য ল্য'র চেয়ে মাত্র এক দিন বড়। করোনাভাইরাসের ফ্রন্ট লাইনে থাকায় হু ছিয়ান নিজের শিশুকে দুধ পান করাতে পারেন না। ল্য ল্যকে দেখে হু ছিয়ান নিজের শিশুর কথা মনে করেন ও তাকে ভীষণ মিস করতে থাকেন।
হাসপাতালে পালাক্রমিক ছুটির সময় হু ছিয়ান নিজের বাসায় যেতে পারতেন। তখন তাঁর নিজের শিশু তাঁকে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে দেখত, যেন নিজের মাকে চিনতে পারত না! অনেকক্ষণ পর তার সন্তান যেন মাকে চিনতে পারে এবং তার দিকে তাকিয়ে হাসতে শুরু করে।
৫. প্রতিরোধক পোশাকে আঁকা কার্টুন ছবি
শিশু হাসপাতালের ওয়ার্ডে অনেক শিশু প্রথমবারের মত বাবা মাকে ছাড়া একাই দীর্ঘ সময় কাটায়। তারা অপরিচিত পরিবেশকে খুব ভয় পায়। তারা ডাক্তারের সাদা কাপড় দেখে ইনজেকশন দেওয়ার ভয়ঙ্কর কথা মনে করে। তারা ভাবে, বাবা মা কি তাকে ছেড়ে চলে গেছে?
নার্স লিউ সি জিং বলেন, ৪০ শয্যার ওয়ার্ডে ১৫টি শিশুর কোনো সঙ্গী নেই।
শিশুকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য লিউ সি জিং ডাক্তারের প্রতিরোধক পোশাকে একটি কার্টুন শিশুর ছবি এঁকে নেন। এর ফলে শিশুরা আর ডাক্তারকে ভয় পায় না। তারপর থেকে শিশু ওয়ার্ডে যাওয়া সব ডাক্তার নিজেদের প্রতিরোধক পোশাকে বিভিন্ন কার্টুন ছবি আঁকা শুরু করেন।
প্রত্যেক ডাক্তারের নিজস্ব বিশেষ কার্টুন ছবি আছে। লিউ সি জিং শিশুদের মুখের 'পিপা পিগ মা'। আর অন্যরা প্রজাপতি আন্টি, ডরিমোন আন্টি ইত্যাদি নামে শিশুদের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন। ডাক্তাররা শিশুকে কার্টুন ছবিতে রং দেওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। শিশুদের মানসিক অবস্থাও এতে অনেক চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
৬. শেষ কথা
এটি যেন শিশু ও বয়স্কদের এক যুদ্ধ। সুষ্ঠুভাবে জন্মগ্রহণ করা নতুন শিশু, সেরে ওঠা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শিশু। এসব শিশু ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করা বীরের শহরে জীবন ও আশার প্রতীক।