চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের যৌবনের কয়েকটি স্মরণীয় গল্প
  2020-04-26 15:23:08  cri

চলতি বছর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে আমরা প্রতি সপ্তাহে বঙ্গবন্ধুর বই 'আমার দেখা নয়াচীন' উপস্থাপন করছি। আজকের আসরের শুরুতেই থাকবে বঙ্গবন্ধুর গ্রন্থ থেকে পাঠ। তা ছাড়া, চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের যৌবনের কয়েকটি স্মরণীয় গল্প তুলে ধরবো।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর বই 'আমার দেখা নয়াচীন' থেকে পড়ে শোনাচ্ছি।

চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের যৌবনের স্মরণীয় গল্প

মানুষের জীবনে যুবকবেলা স্বল্পকালের। যুবকালে পরিশ্রম ও সংগ্রাম করলে বৃদ্ধ বয়সে সুন্দর স্মৃতি থেকে যায়। অনেক জায়গায় নিজের যুবকালের গল্প শেয়ার করেন প্রেসিডেন্ট সি। ১৫ বছর বয়সে তিনি শাআনসি প্রদেশের লিয়াংচিয়াহ্য গ্রামে শ্রমের কাজে অংশ নেন এবং ২০ বছর বয়সে গ্রামের সিপিসি'র সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে স্থানীয় গ্রামবাসীদের নিয়ে প্রথম বায়োগ্যাস প্রকল্প স্থাপন করেন।

কমরেড চিয়াও ইয়ু লু ছিলেন সি চিন পিংয়ের আদর্শ

২০১৪ সালের মার্চ মাসে কমরেড চিয়াও ইয়ু লু'র জাদুঘর পরিদর্শন করেন প্রেসিডেন্ট সি। তখন তিনি কমরেড চিয়াও'র গল্প স্মরণ করে বলেন, "১৯৬৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি 'পিপলস ডেইলি' পত্রিকায় 'হ্যনান প্রদেশের লানখাও জেলার সিপিসি'র সম্পাদক চিয়াও ইয়ু লু'র গল্প নিয়ে লেখা প্রকাশিত হয়। তখন আমার বয়স মাত্র ১৩ বছর। আমাদের শিক্ষক কমরেড চিয়াও'র গল্প পড়ে বহুবার কেঁদেছেন। কমরেড চিয়াও লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেও স্থানীয় গ্রামবাসীদের জীনবমান উন্নয়নের জন্য কর্মস্থানে অব্যাহতভাবে কাজ করে গিয়েছেন। লিভারের ব্যথা সহ্য করতে তিনি বড় কাঠ দিয়ে লিভার চেপে রাখতেন। আমার ছোটবেলায় কমরেড চিয়াও'র গল্প গভীর প্রভাব ফেলেছে। তাই, বড় হওয়ার পর গ্রামে কাজ করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা, সেনাবাহিনীতে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে সবসময় আমি কমরেড চিয়াও'র কথা মনে রেখেছি।"

'তুংফাংহুং' উপগ্রহ ও সি'র মহাকাশস্বপ্ন

২০১৩ সালের ৪ মে চীনে মহাশূন্য বিজ্ঞান প্রযুক্তি গ্রুপের নেতৃত্বাধীন মহাকাশ প্রযুক্তি একাডেমি পরিদর্শন করেন সি চিন পিং। তখন তিনি মহাকাশ গবেষকদের যুব প্রতিনিধিদের সাথে সেমিনারে বসেছিলেন। মহাকাশস্বপ্ন সম্পর্কে তিনি বলেন, ১৯৬৯ সালের শুরুতে শাআনসি প্রদেশের লিয়াংচিয়াহ্য গ্রামে এসে কৃষিকাজ করেন তিনি। এরপর টানা ৭ বছর তিনি এখানে জীবন কাটান। 'তুংফাংহুং' উপগ্রহ সাফল্যের সঙ্গে নিক্ষেপের খবর জেনে অনেক আনন্দ পান তিনি। ১৯৭০ সালের ২৪ এপ্রিল চীনের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ 'তুংফাংহুং ১' লংমার্চ রকেটের মাধ্যমে উতক্ষেপণ করা হয় এবং প্রায় ১৩ মিনিট পর সেটি নির্ধারিত কক্ষপথে প্রবেশ করে। তখন চীন ছিল বিশ্বের পঞ্চম দেশ, যে নিজের গবেষণায় উপগ্রহ নিক্ষেপ করেছে। 'তুংফাংহুং ১' উপগ্রহের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে সি বলেন, "আমরা মহাকাশ বিজ্ঞান প্রযুক্তির প্রদর্শনী দেখে মানববাহী নভোযান মহাশূন্যে পাঠানোর স্বপ্ন দেখি। বিভিন্ন জাতির জনগণ চীনা জাতির মহান পুনরুত্থান ও চীনা স্বপ্নের বাস্তবায়নে সংগ্রাম করে, যা খুবই তাত্পর্যপূর্ণ ব্যাপার।"

শাআনসি প্রদেশে গ্রামীণ জীবনের কষ্ট সি'র জন্য বড় চ্যালেঞ্জ

২০০৪ সালের অগাস্ট মাসে তত্কালীন চেচিয়াং প্রদেশের সিপিসি'র সম্পাদক সি চিন পিং ইয়ানআন টেলিভিশনে সাক্ষাত্কার দেন। অনুষ্ঠানে সি ছোটবেলায় ইয়ানআন লিয়াংচিয়াহ্য'র জীবনের চ্যালেঞ্জের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, "আমার জন্য সর্বপ্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল মাছি। তখন গ্রামের বাড়িতে অনেক মাছি দেখা যেত। যখন কামড় দেয়, তখন চামড়ায় এলার্জি হতো। চামড়ায় ধীরে ধীরে পচনও দেখা দিত। আমার জন্য তা ছিল অতি কষ্টের ব্যাপার। গ্রামে ৩ বছর জীবন কাটানোর পর আমার চামড়া শক্ত হয়ে যায়। তখন ভয়ও কেটে যায়।" গ্রামের খাবারও সি'র জন্য কঠিন ব্যাপার ছিল। কারণ, দরিদ্র গ্রামে যথেষ্ট খাবার পাওয়া যেত না। প্রতিদিন বুনো সবজি ও সফেদার সাথে মিশিয়ে খাবার খেতে হতো। গ্রামবাসীর কাছ থেকে মাঝেমাঝে পাওয়া ভুট্টা ছিল সি'র জন্য অনেক সুস্বাদু খাবার। টানা কয়েক মাস ধরে সি ও তাঁর সহপাঠীরা মাংস খেতে পারতেন না। একবার মাংস দেখে রান্না না-করেই খেয়েছেন তিনি।

জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আরো অনেক সমস্যার সম্মুখীন হন সি। গ্রামে কাপড়চোপড় বা মোজাসহ বিভিন্ন জিনিস নিজে তৈরি করতে হতো। তখন থেকে উল বানিয়ে তোশকও নিজে তৈরি করতে শিখেন সি। ধীরে ধীরে অনেক শ্রমের কাজ করতে শেখেন তিনি।

কৃষিকাজের চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করেন সি। ছোটবেলায় তিনি শহরে জীবনযাপন করেছেন। কখনো কৃষিকাজ করেননি। তাই লিয়াংচিয়াংহ্য গিয়ে ঘাস কাটাসহ বিভিন্ন কৃষিকাজ শূন্য থেকে শিখতে হয় তাকে। তখন তাঁর বয়স ১৫ বছর। কোনো কৃষিকাজ না-পারার কারণে তিনি স্থানীয় গ্রামের মেয়েদের সমান কাজ করতে পারতেন কেবল। প্রায় এক বছর সময় নিয়ে বিভিন্ন কৃষিকাজ করতে শিখে ফেলেন তিনি। তখন পাহাড়ে আরোহণ করে কাঁধে ভাড়ি জিনিস আনতেও সক্ষম হন তিনি। ধীরে ধীরে তিনি একসাথে ১০০ কেজি গম বহন করে ৫ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ অতিক্রম করতে শেখেন।

গ্রামে জীবন কাটানোর সময় চিন্তাভাবনার চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হয় তাকে। উন্নত শহর থেকে দরিদ্র গ্রামে এসে জীবনযাপনের স্টাইল ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করতে হয়। যখন গুহা-ঘরে বসবাস করতেন, তখন সবসময় শহরের জীবনের কথা তার মনে হতো। তবে ধীরে ধীরে গ্রামবাসীদের সাথে মিলেমিশে জীবন কাটাতে অভ্যস্ত হন তিনি এবং সেখানে টানা ৭ বছর কাটিয়ে দেন।

২০ বছর বয়সে লিয়াংচিয়াহ্য গ্রামের সিপিসি'র সম্পাদক হন সি। কারণ গ্রামে চমত্কার কাজের কারণে তিনি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ পান। স্থানীয় গ্রামবাসীদের নিয়ে জীবনমান উন্নয়নে তিনি অনেক চেষ্টা করেন। একদিন পিপলস ডেইলি পত্রিকায় সিছুয়ান প্রদেশের বায়োগ্যাস প্রকল্পের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়। তখন এটা পড়ে সি ভাবেন, শীত্কালে শানআসি প্রদেশের আবহাওয়া অনেক ঠাণ্ডা, কয়লা বহন করা অনেক কষ্টের ব্যাপার। তাই শাআনসিতে বায়োগ্যাস প্রকল্প বাস্তবায়ন করার চিন্তা করেন তিনি। কয়েক দিন পর তিনি সিছুয়ান প্রদেশের মিয়ানইয়াং গিয়ে স্থানীয় বায়োগ্যাস প্রকল্পের অভিজ্ঞতা শিখেন। তখন যাতায়াত ব্যবস্থা এতো সুবিধাজনক ছিল না। তিনি দুই দিন গাড়িতে বসে সি'আন শহরে পৌঁছান এবং সেখান থেকে ট্রেনে সিছুয়ানে যান। বায়োগ্যাস প্রযুক্তি শিখতে তুষারপাতের সময় এমেই পাহাড়ে আরোহণ করেন সি। অবশেষে অভিজ্ঞতা নিয়ে শাআনসিতে ফিরে আসেন। স্থানীয় গ্রামবাসীদের সাথে বায়োগ্যাস প্রকল্পের প্রস্তাব তুলে ধরেন। কিন্তু সবাই তার কথা বুঝতে পারেনি শুরুতে।

পরে তিনি নিজে প্রথম বায়োগ্যাস আধার তৈরি করেন এবং কয়েক মাস পর সেখান থেকে উত্পন্ন গ্যাস দিয়ে রান্না করতে আর বাতি জ্বালাতে সক্ষম হন। তখন গ্রামবাসীরা সি'র চিন্তাভাবনা ও দক্ষতার ব্যাপক প্রশংসা করেন। লিয়াংচিয়াহ্য'র এ বায়োগ্যাস প্রকল্প শাআনসি প্রদেশের প্রথম বায়োগ্যাস প্রকল্প। ১৯৭৫ সালে সি'র নেতৃত্বে স্থানীয় গ্রামে কয়েকটি বায়োগ্যাস প্রকল্প স্থাপিত হয়, যা ব্যাপকভাবে গ্রামবাসীদের রান্না ও আলোর সমস্যা সমাধান করে।

সুপ্রিয় শ্রোতা, আজকে সি'র যুবকালের ৫টি স্মরণীয় গল্প শেয়ার করেছি। সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা অনুষ্ঠানের সময় শেষ হয়ে এলো। সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারেন বা মিস করেন, আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn,আমাদের যোগাযোগ ইমেল ঠিকানাben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040